Advertisement
E-Paper

দেদার বিকোচ্ছে ঝাঁটা, সঙ্কোচে বিজেপির লাড্ডু

শেষ রাতের মহড়া! কোথাও উল্লাসের প্রস্তুতি। কোথাও ‘মিরাকল’-এর প্রত্যাশা। কোথাও আবার দায় চাপানো ও এড়ানোর তোড়জোড়। কাল দিল্লিবাসীর ঘুম ভাঙতেই টিভির পর্দায় ফুটে উঠবে হার-জিতের নকশা। বেলা বাড়তেই তিন শিবিরের ক্যানভাসে আঁকিবুকি, কেমন হতে চলেছে দিল্লির রং। ভোট গোনা শুরু হবে সকাল আটটা থেকে। প্রায় সব বুথ-ফেরত সমীক্ষা বলছে, অরবিন্দ কেজরীবালের ক্ষমতায় ফেরা নাকি সময়ের অপেক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯
ভোটগণনার আগের দিন কেজরীবালকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন এক সমর্থক। ছবি: পিটিআই

ভোটগণনার আগের দিন কেজরীবালকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন এক সমর্থক। ছবি: পিটিআই

শেষ রাতের মহড়া! কোথাও উল্লাসের প্রস্তুতি। কোথাও ‘মিরাকল’-এর প্রত্যাশা। কোথাও আবার দায় চাপানো ও এড়ানোর তোড়জোড়। কাল দিল্লিবাসীর ঘুম ভাঙতেই টিভির পর্দায় ফুটে উঠবে হার-জিতের নকশা। বেলা বাড়তেই তিন শিবিরের ক্যানভাসে আঁকিবুকি, কেমন হতে চলেছে দিল্লির রং।

ভোট গোনা শুরু হবে সকাল আটটা থেকে। প্রায় সব বুথ-ফেরত সমীক্ষা বলছে, অরবিন্দ কেজরীবালের ক্ষমতায় ফেরা নাকি সময়ের অপেক্ষা। আপ শিবিরে তাই তোড়জোড় চলছে বিজয়োৎসব পালনের। বিজেপি শিবিরে অপেক্ষা, যদি অলৌকিক কিছু ঘটে যায়। আর কংগ্রেসে চিন্তা, এ বারের বিপর্যয়ের দায় পড়বে কার ঘাড়ে? ফের কি আক্রমণের মুখে পড়বে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব!

পরশু বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল আসার পর থেকেই দোকানে ঝাঁটার ‘স্টক’ বাড়াতে শুরু করেছেন করোলবাগের ব্যবসায়ী উমেশ কুমার। সোমবারের পড়ন্ত বেলায় উমেশের গোঁফের তলায় মুচকি হাসি। আজ সকাল থেকেই ডজনে-ডজনে বিক্রি হচ্ছে আপের প্রতীক। কাল ভোট চিত্র স্পষ্ট হয়ে এলে বিক্রি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন উমেশ। ঝাঁটা বিক্রি বেড়ে গিয়েছে সরোজিনী নগর, মুনিরকার ও লক্ষ্মীনগরের মতো এলাকায়। মধ্যবিত্ত ও নিম্ম-মধ্যবিত্ত মানুষের সমর্থনের ভরসায় জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছেন আপ নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে আপ সমর্থকরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন আপ কার্যালয়ে।

বিজেপি এখনও রয়েছে চমকের অপেক্ষায়। দুরু-দুরু বুক। কিন্তু মুখে এখনও সাহসী হাসি সেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলের নেতারা। লাড্ডুও তৈরি হচ্ছে দিল্লিতে দলের সদর দফতরে। তবে তফাতটা নজর এড়াচ্ছে না। এর আগে সব ভোটের ফল প্রকাশের আগের দিন ঘটা করে সকলের সামনে বানানো হত লাড্ডু। সেজে উঠত দলের সদর দফতর। এ বার লাড্ডু পাকানো হচ্ছে পিছনে, সামিয়ানার আড়ালে। রাখঢাকেই স্পষ্ট, টেনশনে রয়েছে দল।

প্রকাশ্যে অবশ্য বিজেপি নেতারা এখনও বলছেন, কাল ফল বেরোলে ভুল প্রমাণিত হবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা। অতীতে যা বারবার হয়েছে। যুক্তি হিসেবে তাঁরা তুলে ধরছেন দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা। বুথওয়াড়ি হিসেব কষে তাতে বলা হয়েছে, ৩৪টি আসন পাচ্ছে বিজেপি। বাকি ১৬টিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অমিত শাহের নির্দেশ মতো বুথের ‘মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট’ কাজে এলে তার দৌলতেই ৩৪-এ পৌঁছে যাবে দল। সরকার গড়তে দরকার আরও ২টি। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষা ঠিক প্রমাণ হলে! আশঙ্কায় বিজেপি। দলের মুখপাত্ররাও রয়েছেন চাপে। কী বলবেন কাল? চার দিক থেকে প্রশ্ন উঠবে, এ কি মোদী সরকারের গত ন’মাসের ব্যর্থতার ফল নাকি, মোদী-জাদুর অবসান? অমিত শাহের রণনীতিও তবে ফল দিল না!

কী বলছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদী?

অপেক্ষায় না থেকে আগেভাগেই তিনি ঘোষণা করে দিয়েছে, দল হারলে দায় তাঁর। এমনকী পাছে পরে আর সুযোগ না মেলে, তাই ঘোষণার আগের দিনই বুথ স্তরের নেতাদের মধ্যাহ্নভোজে ডেকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলেছেন তিনি। যদি পরে সুযোগ না হয়। যদিও কিরণ কী বললেন বা করলেন সেটা নিয়ে বিজেপি নেতারা তত ভাবিত নন। হার হলে মোদীকে বাঁচানোই এখন বড় দায় তাঁদের। দলের এক মুখপাত্র বলেই ফেললেন, “মনেপ্রাণে চাইছি, সংবাদমাধ্যম যেন কাল বিহারের নাটক নিয়ে দিনভর ব্যস্ত থাকে। নীতীশ কুমার দিল্লি এসে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্যারেড করুন বিধায়কদের নিয়ে। গোটা নজর সেখানে থাকলেই দিল্লির থেকে দৃষ্টি কিছুটা ঘুরবে।”

বুথ-ফেরত সমীক্ষা দেখে কংগ্রেস সিঁটিয়ে গিয়েছে তিন দিন আগেই। সমীক্ষা মিলে গেলে ফের তোপের মুখে পড়বে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব। এ-ও প্রশ্ন উঠবে, দিল্লিতে গত বিধানসভা ভোটের পর এক বছর সময় পেয়েও কেন জমি উদ্ধারে ব্যর্থ হলেন তিনি? বিশেষ করে লোকসভা ভোটের পর কেজরিওয়াল তথা আপ যখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছিল!

নজর ঘোরাতে রাহুল শিবির এখন থেকেই আঙুল তুলছে মোদী-অমিতের সম্ভাব্য ব্যর্থতার দিকে। দিল্লির ভোটে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিজেপি প্রচার করেছে, ‘মোদী কে সাথ চলেগি দিল্লি!’ হারের পরে এ বার কি ওঁরা ইস্তফা দেবেন?”

এই ভোটে নিমরাজি অজয় মাকেনকে চাপ দিয়ে দলের মুখ করেছিলেন রাহুল। সম্ভাব্য ভরাডুবির দায় নিজের কাঁধে নিতে চেয়ে অজয় মাকেন আজই ঘোষণা করে দিয়েছেন, “হারলে দলীয় দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব।” কংগ্রেসে এখনও প্রার্থনা, কোনও মতে যদি জুটে যায় ৪-৫টি আসন। যদি খাতাই না খোলা যায়, তবে স্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকতে পারে দিল্লি। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার মতে, নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে কেজরীবাল সরকার গড়লে এক দিক থেকে খুশিই হবেন মোদী। কারণ, জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসকে আরও অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।

kiren bedi arvind kejriwal aam aadmi party aap
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy