কেন্দ্রে ক্ষমতা বদলের পর অর্থনীতির অনেকটাই বাজারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে যখন একাংশের বিপুল প্রত্যাশা, তখনও নেহরুর সমাজতত্ত্ব আঁকড়ে থাকারই বার্তা দিলেন সনিয়া গাঁধী। বুঝিয়ে দিলেন, প্রবল দুর্দিনেও সাবেক পথ ছাড়বে না কংগ্রেস। বরং তাতে টিকে থেকেই সুদিনের রাস্তা খুঁজবে দল।
লোকসভা ভোটের পর এর আগে দু’বার দলীয় বৈঠকে মুখ খুলেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাতে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণই গুরুত্ব পেয়েছিল। কিন্তু আজ এই প্রথম বার মুষড়ে পড়া দলকে দিশা দেখাতে চাইলেন তিনি।
জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর অর্ধ শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সনিয়া মন্তব্য করেন যে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সমাজতত্ত্বকে অদক্ষ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা বলে গালমন্দ করা ইদানীং ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর কথায়, “তিন দশক আগে রাজীবজি যদিও বলেছিলেন, এই সমাজতত্ত্বের মডেলে অনেক ত্রুটি ধরা পড়েছে। কিন্তু এ-ও ঠিক, দারিদ্র ও বৈষম্যের ভারে রিক্ত এ দেশে নেহরুর সমাজতত্ত্বের মূল মন্ত্রই ছিল গরিব, বঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।”
সনিয়ার ব্যাখ্যা, কংগ্রেস পঞ্চাশ বছর আগের দর্শনে আটকে থাকুক তা তিনি বলছেন না। সময়োপযোগী হওয়ার কথা নেহরুও বলতেন। আর্থিক বৃদ্ধি ও দেশের সম্পদ বাড়াতে বেসরকারি পুঁজির বিকাশ কংগ্রেসও চায়, যাতে বিশ্বায়নের যুগে দেশে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে। কিন্তু তার পাশাপাশি সমাজের দুর্বল অংশকে নিয়ে নেহরুর উদ্বেগের সঙ্গেই তাঁরা গাঁটছড়া বেঁধে থাকবেন বলে জানান কংগ্রেস সভানেত্রী।
প্রকাশ্যে না বললেও কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা অবশ্য মনে করেন, নেহরু উৎপাদনে জোর দিয়েছিলেন বলেই একের পর ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পত্তন করেছিলেন। কিন্তু ইউপিএ জমানায় উৎপাদন গুরুত্ব পায়নি, ক্ষমতায় টিঁকে থাকার জন্য কেবল বণ্টনেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সমস্যা হয়েছে সেখানেই। এমনকী উৎপাদন নীতি প্রবর্তন করেও তার রূপায়ণ ঠিক মতো করা যায়নি।
তবে সনিয়া-রাহুল ঘনিষ্ঠদের এখনও ধারণা, বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের জন্যই গত জমানায় জনভিত্তি মজবুত হয়েছিল কংগ্রেসের। সেই সব প্রকল্প এখনও গ্রামেগঞ্জে সমাদৃত। কিন্তু এ বারের পরাজয়ের মূল কারণ ছিল মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির মতো বিষয়। যা ভাল কাজগুলিকেও ঢেকে দিয়েছিল।
কংগ্রেসের ‘আশা’, মোদী জমানায় অধিকাংশ বিষয় বাজার অর্থনীতির হাতে চলে গেলে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। তাঁদের পাশে সেই অসন্তোষের রাজনৈতিক সুবিধেটাই নেওয়া সম্ভব। শুধু অর্থনীতি নিয়ে নয়, সংসদীয় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বিদেশনীতি নিয়েও আজ নিজের দল এবং কেন্দ্রে শাসক দলকেও বার্তা দেন সনিয়া।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখির মত, লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর এখন গাঁধী পরিবারের নেতৃত্বও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। রাহুল গাঁধীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আজ তাই নেহরুর স্মৃতি টানতে হল কংগ্রেস সভানেত্রীকে।