আগে বল্লভভাই পটেল বা সাভারকরের মতো মনীষীর জীবনী পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হোক, তার পরে তাঁর কথা বিবেচনা করা যাবে। নরেন্দ্র মোদীর জীবনী পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার সচেষ্ট হওয়ায় নিজের দফতরের মাধ্যমে এই বার্তাই তাঁদের পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ট্যুইটারেও নিজের আপত্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। খোদ মোদীর আপত্তিতে দুই রাজ্য সরকার পিছিয়ে এলেও সাভারকরের মতো ব্যক্তিত্বের জীবনী শিশুপাঠ্যে অন্তর্ভুক্তি-চেষ্টায় বিতর্ক উঠেছে। বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস।
তাঁদের সাবেক নেতা তথা দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই পটেলের জীবনী পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হলে সমস্যা নেই কংগ্রেসের। কিন্তু সাভারকর প্রশ্নে তারা আক্রমণাত্মক। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বাজপেয়ী জমানায় আন্দামানে পোর্ট ব্লেয়ারের একমাত্র বিমানবন্দরটির নাম দেওয়া হয় সাভারকরের নামে। এ বার তাঁকে পাঠ্যবইয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে নেমেছে বিজেপি। প্রথম জীবনে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে আন্দামানে দ্বীপান্তরে শাস্তি ভোগ করেছিলেন সাভারকর। সেখান থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন। কিন্তু পরে ব্রিটিশ পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে সঙ্গীদের নামধাম জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এই নেতার বিরুদ্ধে। মূল ধারার রাজনীতিতে এসে কংগ্রেসের বিরুদ্ধাচরণ করে হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন সাভারকর। প্রমাণাভাবে ছাড়া পেলেও গাঁধীকে খুনের চক্রান্তে সাভারকরও যুক্ত বলে মনে করে কংগ্রেস। পুলিশের হাতে তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “এর আগে বাজপেয়ী জামানায় শিক্ষাকে গৈরিকিকরণের চেষ্টা হয়েছিল। সাভারকরের জীবনী পাঠ্যসূচিতে আনার চেষ্টা হলে কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে।” আবার মোদীপন্থী শিক্ষাবিদরা মনে করেন, আশিস নন্দীর মতো সমাজ-মনস্তাত্ত্বিকেরা যদি জিন্না-সাভারকর বিতর্ক ও দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে পারেন, তা হলে ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের জীবনী পড়লে দোষ কোথায়।
সাভারকর প্রশ্নে বিতর্ক উঠবে বিজেপি জানত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী যে নিজের জীবনী পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলবেন, তা হয়তো বুঝতে পারেননি গুজরাতের শিক্ষামন্ত্রী ভূপেন্দ্রসিন চুড়াসামা। ভূপেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, “মোদীর ছোটবেলা, প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে চলা, তাঁর শিক্ষাজীবন বা সন্ন্যাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত ছোটদের পড়ানোর জন্য ভাবা হয়েছিল। মোদীর প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার পথে যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলি ঘটেছে, সেগুলিও থাকত।” প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আরও এক ধাপ এগিয়ে মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী পারশ জৈন তো ছাড়পত্রের জন্য মোদীর জীবনী পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছা দেখে আপাতত পিছিয়ে আসছে দুই রাজ্যই।
কিন্তু আজ দুই রাজ্যের ইচ্ছেয় জল ঢেলে দিয়েছেন মোদী। আজ তিনি ট্যুইট করে বলেন, “আমি মনে করি স্কুল পাঠ্যক্রমে জীবিত কোনও ব্যক্তির জীবনী থাকা উচিত নয়। দেশের ইতিহাসে এমন অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের জন্য ভারত আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। তরুণ প্রজন্মের উচিত তাঁদের বিষয়ে জানা, তাঁদের অনুকরণ করে চলা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy