ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরার চল নেই কংগ্রেসে। সেটা করে থাকে বিজেপি। কিন্তু দিল্লির ভোটে এখনও স্থানীয় কাউকে তারা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে পারছে না। এই অবস্থায় কংগ্রেসকেই তার সাবেকি চাল থেকে বের করে আনতে চান রাহুল গাঁধী। ক্ষমতায় ফেরার কোনও আশা না থাকলেও দিল্লির ভোটযুদ্ধে বিজেপির টক্কর নিতে প্রথম থেকেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অজয় মাকেনকে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। মাকেন অবশ্য এই ভোটে দাঁড়াতেই চাইছিলেন না। কিন্তু রাহুলই চাপ দিয়ে তাঁকে ভোটযুদ্ধে রাজি করিয়েছেন। কার্যত নিমরাজি এক নেতাকেই লড়াইয়ে মুখ করছেন কংগ্রেস সহসভাপতি। মাকেনকে নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে প্রার্থী করার কথাও ভাবছে দল।
রীতি ভেঙে বেরনোর একটা চেষ্টা অবশ্য পঞ্জাব ভোটেও করেছিলেন রাহুল। ভোটের মাত্র দু’দিন আগে কংগ্রেস সহসভাপতি ঘোষণা করেন, জিতলে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহই হবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাহুলের সেই শেষলগ্নের ঘোষণা কোনও কাজেই আসেনি। তবে রাহুল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা কিন্তু মনে করছেন, প্রথম থেকেই কাউকে লড়াইয়ের মুখ করলে ইতিবাচক ফলই মিলবে দিল্লিতে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বাকি নেতা ছেড়ে মাকেন কেন? এটা ঘটনা যে দিল্লির কুর্সির দিকে বরাবরই নজর ছিল মাকেনের। যে কারণে শীলা দীক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে মাকেনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও ছিল সুবিদিত। এবং দিল্লির রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখতেই মাকেনকে প্রথমে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব ও পরে সংগঠনের দায়িত্ব দেন সনিয়া-রাহুল। কিন্তু শীলা-সরকার চলে যাওয়ার পর দিল্লিতে এখন দলের যা হাল, তাতে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নেতা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর এখন কংগ্রেসে। মাকেনও এই ভোটে দাঁড়াতে রাজি ছিলেন না। এই অবস্থায় রাহুল তাঁর ‘বেঙ্গল ফর্মুলা’ প্রয়োগ করেছেন বলে জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা। রাহুল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বর্ষীয়ানদেরও ভোটে দাঁড়াতে হবে । মাকেনকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ দেন রাহুল নিজে। সেই ফরমান অগ্রাহ্য করার উপায় ছিল না তাঁর।
দিল্লি বিধানসভা ভোটে দলের একপ্রস্ত প্রার্থীতালিকা এর মধ্যেই ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বাকি প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করতে আজ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক হয়। কংগ্রেস সূত্র বলছে, মাকেন ছাড়াও ওই তালিকায় দলের প্রাক্তন সাংসদ মহাবল মিশ্রেরও নাম রয়েছে। মাকেনকে নয়াদিল্লিতে কেজরীবালের বিরুদ্ধে কিংবা সদরবাজারে প্রার্থী করা হবে। গ্রেটার কৈলাশ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপকেও প্রার্থী করা হতে পারে।
দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা পি সি চাকো আজ বলেন, “বিজেপি বরাবর মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী ঘোষণা করে। লোকসভা ভোটে কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করায় কটাক্ষ করে মোদী বলেছিলেন, কেউ জানে না ওদের ক্যাপ্টেন কে! এখন বিজেপিই জবাব দিক এ বার ওদের ক্যাপ্টেন কে?” চাকো বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়লেও কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, নিমরাজি নেতাকে রেসের ঘোড়া করে দলের দুর্দশা কি আদৌ কমাতে পারবেন রাহুল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy