এক দিকে স্বস্তির আমেজ, অন্য দিকে আশঙ্কার ভ্রূকুটি। পূর্ব ভারতে বৃষ্টি যখন ক্রমশ স্বাভাবিক হওয়ার পথে হাঁটছে, তখন দেশের বড় অংশ জুড়ে অনাবৃষ্টি। সেখানে চোখ রাঙাচ্ছে খরা! বৃষ্টি-বৈষম্যের এ হেন প্রেক্ষাপটে দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সরকারি মহলও চিন্তিত।
ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের দৌলতে দক্ষিণবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটা পুষিয়ে এলেও এই মুহূর্তে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু অঞ্চলে ঘাটতি ৭০ শতাংশের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। গুজরাতে তো বর্ষণ-ঘাটতির হার ৯১% ছুঁইছুঁই! মধ্য ও দক্ষিণ ভারতেও ঘাটতি ঊর্ধ্বমুখী। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের খবর: হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের বিভিন্ন জলাধারে জলস্তর নামছে হু হু করে।
ভরা বর্ষায় বৃষ্টির এই হাল দেখে কৃষি-আবহবিদেরা প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন, ভারতে খরিফ চাষের ভবিষ্যৎ বহুলাংশে নির্ভর করে বর্ষার বৃষ্টির উপরে। মরসুমি বর্ষণে টান ধরলে দেশের বড় অংশে খরিফ চাষ মার খাওয়ার প্রভূত আশঙ্কা। সরকারও যারপরনাই উদ্বিগ্ন। সঙ্কট মোকাবিলার উপায় খুঁজতে কেন্দ্রীয় কৃষি-কর্তারা ইতিমধ্যে একাধিক বার বৈঠক করেছেন। খরাপ্রবণ রাজ্যগুলোকে বিশেষ অনুদান দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবা চলছে বলে মন্ত্রক সূত্রের খবর।
বস্তুত এল নিনো-সহ বিবিধ প্রাকৃতিক পরিস্থিতির জেরে এ মরসুমে যে ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষা ব্যাহত হতে পারে, মৌসম ভবন এপ্রিলেই তার প্রাথমিক পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছিল। পরে জুন মাসের সর্বশেষ পূর্বাভাসেও তারা একই বার্তা দিয়েছে। এল নিনো কিংবা ভারত মহাসাগরীয় প্রতিকূলতার পাশাপাশি আরবসাগরের ঘূর্ণিঝড়ও এ বার বর্ষার পথ আটকেছে। তার বাধাতেই কেরলে ঢোকার পরে মৌসুমি বায়ুর গতি থমকে গিয়েছিল। তাই পূর্ব ও উত্তর ভারতে বর্ষা পৌঁছেছে দেরিতে। তবে দেরিতে পৌঁছালেও এ রাজ্যে বর্ষা-পরিস্থিতি তুলনায় ভাল। মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে বৃষ্টি দিন দিন বাড়ছে। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা শুরু হয়েছিল ৩৮% ঘাটতি নিয়ে। জানুয়ারি থেকে জুনের গোড়া পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গ তেমন বৃষ্টি পায়নি। কালবৈশাখী হয়েছে সাকুল্যে তিনটি। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের যুগলবন্দি ছবিটা অনেক পাল্টে দিয়েছে। সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর: দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি এখন ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
ফলে রাজ্য কৃষি দফতরও আশাবাদী। তাদের মতে, বৃষ্টির এমন ধারা বজায় থাকলে পশ্চিমবঙ্গে কৃষি উৎপাদন সম্পর্কে বিশেষ আশঙ্কার কারণ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy