Advertisement
E-Paper

পর্যটকের ঢলের আশায় মোদী-গ্রাম

অমিতাভ বচ্চন এখনও প্রচারে নামেননি, কিন্তু খুব শীঘ্রই হয়ত নামবেন। দ্বারকা, সোমনাথ কিংবা গির, অথবা সবরমতির গাঁধী আশ্রম ক’দিন গুজরাতের পর্যটনস্থলগুলি ঘুরে দেখার জন্য পর্যটকদের আর্জি জানাতে আকছারই দেখা যায় বিগ বি-কে। কিন্তু বডনগর? বাইরের পর্যটকদের কাছে স্বল্প পরিচিত এই ছোট্ট শহর। জনশ্রুতি মহাভারতে বর্ণিত অনর্তপুরই আজকের বডনগর। বডনগরকেই মানেন।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৮
দশরথভাই দাহিলাল

দশরথভাই দাহিলাল

অমিতাভ বচ্চন এখনও প্রচারে নামেননি, কিন্তু খুব শীঘ্রই হয়ত নামবেন।

দ্বারকা, সোমনাথ কিংবা গির, অথবা সবরমতির গাঁধী আশ্রম ক’দিন গুজরাতের পর্যটনস্থলগুলি ঘুরে দেখার জন্য পর্যটকদের আর্জি জানাতে আকছারই দেখা যায় বিগ বি-কে। কিন্তু বডনগর?

বাইরের পর্যটকদের কাছে স্বল্প পরিচিত এই ছোট্ট শহর। জনশ্রুতি মহাভারতে বর্ণিত অনর্তপুরই আজকের বডনগর। এমনকী গুজরাতের প্রথম রাজধানী হিসাবেও অনেকে বডনগরকেই মানেন। শহরের ছ’দিকে পেল্লায় আকারের ছ’টি তোরন নাকি সেই সাক্ষ্য বহন করছে। তা সত্ত্বেও ওই জায়গাটি গুজরাত পর্যটনের তালিকায় এখনও ওঠেনি। বডনগরবাসীর আশা, এ বার সেই দুঃখ ঘুচতে চলেছে। ১৬ মে-র পরেই হয়তো দেশের পর্যটন মানচিত্রে পাকাপাকি জায়গা করে নিতে চলেছে মেহসানা জেলার ছোট্ট ওই জনপদ।

বডনগরের কালাভাসুলির চকই হল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর জন্মস্থান। জীবনের প্রথম কুড়িটি বছর এখানে কাটিয়েছেন তিনি। বড় হয়েছেন, খেলাধুলো করেছেন, নাটক করেছেন, শোনা যায় আবার কুমিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাঁতারও কেটেছেন গ্রামের তালাওয়ে।

আমদাবাদ থেকে গাঁধীনগর হয়ে মেহসানা যাওয়ার রাস্তায় পড়ে বডনগর। তামাক ব্যবসার কারণে অল্পবিস্তর পরিচিতি থাকলেও অধুনা তার খ্যাতি নরেন্দ্রভাইয়ের জন্মভূমি হিসাবে। শহরের মূল বাজারকে বাঁ দিকে ফেলে সামনে এগোলেই বিশাল খেলার মাঠ। মাঠের মাঝে পাকাপাকি ভাবে মস্ত হেলিপ্যাড বানানো রয়েছে। ঘরের ছেলে ঘরে এলে এখানেই নামেন। হেলিপ্যাডের মাঠকে পিছনে ফেলে কিলোমিটার খানেক এগোতে শর্মিষ্ঠা তালাও। জনশ্রুতি, এক কালে কুমির অধ্যুষিত এই জলাশয়ে দিব্যি সাঁতার কাটতেন কিশোর নরেন্দ্র।

হীরাবেন

সেই সরোবরকে আধখানা পাক মেরে ছোট্ট ঘিঞ্জি গলি ধরে বেশ খানিকটা এগানোর পর মোদীর গ্রাম। নগরোন্নয়নের কল্যাণে চার দিকে পাকা বাড়ি, মাথায় ডিশ অ্যান্টেনার ঘোমটা। কালাভাসুলি চক গ্রামটি এক সময়ে মোদী সম্প্রদায়ের লোকেরাই থাকতেন। এঁদের পারিবারিক পেশা ছিল তেলের। এখন পাঁচমেশালি। যেমন মোদীর বাড়িটি কিনে নিয়েছেন ডি ডি ঠাকুর। জাতে ক্ষত্রিয়। এক দিকে গর্বের শেষ নেই, আবার কী বলতে কী বলে ফেলেন, সেই আশঙ্কায় নতুন লোক দেখলেই ঘরে সেঁধিয়ে যান। নরেন্দ্র মোদীদের পুরানো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি উঠেছে এক দশক আগে। মিলিয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কৈশোরের স্মৃতি।

দশ কদম দূরে দোকানদারিতে ব্যস্ত ছিলেন মোদী দশরথভাই দাহিলাল। এক কালে মোদীর সঙ্গে স্কুল ও কলেজে পড়েছেন। তাঁর কথায়, ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত দক্ষতা ছিল নরেন্দ্রর। ভাল নাটক করতেন। পাড়ার আপদে-বিপদেও সবার আগে। অবসর সময়ে বডনগরে স্টেশনে চলে যেতেন বাবা দামোদর দাসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চা বিক্রি করতে।

“ছোটবেলায় মোদী ভাল ছাত্র ছিলেন,” বলেন নরেন্দ্রর প্রথম শিক্ষিকা মোদী হীরাবেন। আশির কোঠায় বয়স। একলা থাকেন। কিন্তু স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ম। গুজরাতিতে বললেন, “ভাল ছাত্র ছিল নরেন্দ্র। এক থেকে চারের মধ্যে থাকত।” মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের শিক্ষাগুরুদের সম্মান প্রদান করেছিলেন মোদী। তখন গাঁধীনগরে ডাক পড়েছিল হীরাবেনের। বছর পাঁচ-ছয় আগে শেষ দেখা হয়েছিলে মোদীর সঙ্গে। গত দশ বছরে খুব বেশি হলে তিন-চার বার নিজের গ্রামে এসেছেন মোদী। তবে কিশোর বয়সে স্থানীয় হটকেশ্বর মন্দিরে তিনি নিয়মিত যেতেন বলে জানালেন সেই মন্দিরের পূজারি জয়ন্ত পাণ্ডা। তাঁর দাবি, “মোদী নিয়মিত আসতে না পারলেও কপ্টারে এই এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে পাইলটকে বলেন, হেলিকপ্টারের উচ্চতা কমিয়ে তিন বার মন্দির প্রদক্ষিণ করুন।” সত্য-মিথ্যা প্রমাণের উপায় অবশ্যই নেই।

আর মোদীর বিয়ে? “হয়েছিল তো।” স্মৃতি হাতড়ে হীরাবেন জানান, “মোদী তখন ১৭-১৮ হবে। তখনই বিয়ে হয়।” বিয়ের পর বডনগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে রাজসোনা গ্রামে ফিরে যান যশোদাবেন। তার পরেই সঙ্ঘে যোগ দিয়ে বডনগর ছেড়ে চলে যান নরেন্দ্র। এ যাবৎ নিরুত্তর থাকলেও লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্রে তিনি যে বিবাহিত, তা স্বীকার করে নিয়েছেন মোদী। নির্বাচন চলাকালীন চার-ধাম যাত্রার আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখার ইচ্ছা জানিয়ে মুখ খোলেন মোদীর স্ত্রী যশোদাবেনও।

তীর্থ যাত্রার বিষয়টি অবশ্য লোক দেখানো বলে দাবি বিরোধীদের একাংশের। তাদের দাবি ছিল, বিতর্ক এড়াতে যশোদাবেনকে ‘সেফ হাউসে’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই দাবিকে হাওয়া দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের একাংশ। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বাবা রামদেবের হৃষিকেশের আশ্রমে লুকিয়ে রাখা হয়েছে মোদীর স্ত্রীকে। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি বাবা রামদেব বা বিজেপি নেতৃত্ব।

গ্রামের মানুষও মোদী বিবাহ-বিতর্কে ঢুকতে নারাজ। বরং পাড়ার ছেলের প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার সম্ভবনায় মজে রয়েছে গোটা এলাকা। আবার এটাও ঠিক পৈতৃক জনপদকে ভুলে যাননি মোদী। সংস্কার করেছেন মজে-হেজে যাওয়া শর্মিষ্ঠা সরোবরের। ধারোই খাল থেকে নিয়মিত জল আসছে এখানে। সরোবরকে ঘিরে ডানা মেলছে পর্যটনও।

সড়ক পরিকাঠামো ছাড়াও সংস্কার করেছেন বাজারের। স্থানীয় ছেলেদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিতে খুলে দিয়েছেন পলিটেকনিক কলেজ। নতুন একটি হাসপাতাল-সহ মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনেও অনুমতি দিয়েছে মোদীর মন্ত্রিসভা। স্থানীয়দের কাজ দিতে একটি আয়ুর্বেদিক সংস্থাকে গ্রামের কাছে কারখানা গড়তে জমি দিয়েছেন। এলাকার প্রায় ২০০০ পরিবারের কেউ না কেউ সেখানে কাজ করেন।

তবে এত কিছু পাওয়ার মধ্যেও ক্ষোভ যে একদম নেই তা নয়। স্থানীয় যুবক রাহুলের বক্তব্য, চাকরির সুযোগ যতটা হওয়ার ছিল হয়নি। লোকের ক্রয়ক্ষমতা যে কম, তা বোঝা যায় মুদি দোকানে সাজিয়ে রাখা নিম্নমানের পণ্যের সম্ভার দেখেই। রয়েছে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যাও। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলেরও অভাব রয়েছে।

উন্নতি চাইছে বডনগর। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে গ্রামের পাশাপাশি গোটা দেশের সমস্যা দূর করুক, এটাই এখন ঘরের ছেলের জন্য প্রার্থনা বডনগরবাসীর।

anamitra sengupta vadnagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy