বাচ্চা মেয়েটাকে ধরাই কাল হল। ভেঙে গেল এত দিনের অপরাধচক্র। টানতে হল জেলের ঘানি। হাতছাড়া হল সাধের রিভলভার। তাই, পুলিশের হাত থেকে পালিয়েই বিমান বরা সোজা পাড়ি দিয়েছিল নাগাল্যান্ডে। উদ্দেশ্য, সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া কিশোরী গুঞ্জনকে সপরিবারে মারবে সে। অবশ্য তার আগেই ফের পিস্তল-সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল বিমান। ফাঁড়া কাটল গুঞ্জনের।
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর শিবসাগরের নাজিরা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর গুঞ্জন শর্মা অন্য ১০ জন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে গাড়িতে ফিরছিল। নাজিরা চারিয়ালির কাছে সশস্ত্র বিমান গাড়ি-সহ সকলকে অপহরণের চেষ্টা করে। চালক গাড়ি নিয়ে পালাতে গেলে গাড়ি চা বাগানের নালায় পড়ে যায়। ভয় দেখাতে একাধিকবার রিভলভার থেকে গুলিও চালিয়েছিল বিমান। গাড়ি থেকে নেমে সাহসিনী গুঞ্জন রুখে দাঁড়ায়। বলে, সকলকে ছেড়ে দিলে সে স্বেচ্ছায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে যেতে প্রস্তুত। তেমনটাই হয়। অনেকদূর পায়ে হাঁটিয়ে বিমান গুঞ্জনকে কোনও এক পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরদিন তার কবল থেকে কোনওমতে পালিয়ে আসে গুঞ্জন।
ঘটনার কয়েকদিন পরে বিমান ও তার দুই সঙ্গীকে শিমালগুড়ি স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেলে একটি .৩২ বোরের পিস্তল ও গুলি। জানা যায়, বেশ কয়েকটি ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল দলটি। আরও ডাকাতির জন্যই শিমালগুড়িতে জড়ো হয়েছিল তারা। বিপদের মুখে ব্যতিক্রমী সাহস দেখানোয় রাজ্য সরকার গুঞ্জনের নামেই সাহসিকতার পুরস্কার ঘোষণা করে। ওই পুরস্কার নিতে গুয়াহাটি আসার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুঞ্জন সপরিবারে জখম হয়। গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছে গুঞ্জন।
ধৃত তিনজনই জেলে ছিল। কিন্তু চলতি বছর ১১ জানুয়ারি জেল থেকে বোকাখাত আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় বিমান। গত রাতে যোরহাট স্টেশনে ধরা পড়বার পরে তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, গুঞ্জনকে অপহরণ করার জন্য সে অনেকদিন থেকেই পস্তাচ্ছিল। ওই সূত্র ধরেই তার গোটা দল ধরা পড়ে যায়। আগ্নেয়াস্ত্রও হাতছাড়া হয়। প্রতিশোধ নিতে গুঞ্জন ও তার গোটা পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমান। পুলিশের হাত থেকে পালিয়েই সে নাগাল্যান্ডে চলে যায়। সেখান থেকে জোগাড় করে পিস্তল। তাতে গুলি ভরে, গত রাতে যোরহাট স্টেশন থেকে নাজিরার উদ্দেশে রওনা হচ্ছিল সে। কিন্তু বিধি বাম। তাই, এবারেও সেই গুঞ্জনকে কেন্দ্র করেই ফেঁসে গেল বিমান। অপহরণ, অস্ত্র আইন, জেল পালানোর পাশাপাশি হত্যার চেষ্টার অভিযোগও জুড়ে গেল তার কেস ডায়েরিতে। আপাতত আদালত তাকে পুলিশের জিম্মায় পাঠিয়েছে।