লোকসভা ভোটে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পর বিজেপির নিশানা ছিল দিল্লি। সেখানে তাদের সরকার গঠনের কৌশল এর মধ্যেই কিছুটা ঘেঁটে গিয়েছে। শিকে ছেঁড়েনি বিহার ও ঝাড়খণ্ডে। আজ উত্তরাখণ্ডেও ধাক্কা খেল বিজেপির ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন! বরং লোকসভা ভোটে গোহারা হয়ে মুষড়ে পড়া কংগ্রেস এই প্রথম কোনও স্বস্তির খবর পেল।
মাত্র দু’মাস আগে ‘মোদী ঝড়ে’ উত্তরাখণ্ডে ৫টির মধ্যে ৫টি লোকসভা কেন্দ্রেই জিতেছে বিজেপি। সে রাজ্যেই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সব ক’টিতেই পরাস্ত হল তারা। লোকসভা ভোটের কিছু দিন আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন হরিশ রাওয়াত। ধরচুলিতে কংগ্রেস বিধায়কেরই ছেড়ে দেওয়া আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে একটি বারের জন্যও সেখানে প্রচারে যেতে পারেননি। দলের কর্মীরাই দায়িত্ব সামলেছেন।
বাকি দু’টি আসনে উপনির্বাচন হয়েছে বিজেপির রমেশ পোখরিয়াল ও অজয় টামটা সাংসদ হয়ে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়ায়। দু’মাস আগেই যেখানকার মানুষ ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরাই কেন মুখ ফেরালেন এ নিয়ে বিজেপি শিবির ধন্দে। রমেশ পোখরিয়াল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ও দলের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অন্তর্ঘাতের কারণেই কি এই হার, উঠছে প্রশ্ন।
উত্তরাখণ্ডে এই জয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে হার, রাজ্যে-রাজ্যে বিক্ষুব্ধ রাজনীতি, রাহুল গাঁধী ও তাঁর পরামর্শদাতাদের বিরুদ্ধে বর্ষীয়ান নেতাদেদের ক্ষোভ এই রকম একটা নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তির বাতাস পেল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র পি সি চাকো আজ নরেন্দ্র মোদীর স্লোগানকে কিছুটা কটাক্ষ করেই বলেন, দলের ‘আচ্ছে দিন’ আসছে।
কংগ্রেসের স্বস্তির আরও একটি কারণ, লোকসভা ভোটের মুখে দুই বিধায়ক দল ছাড়ায় সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল উত্তরাখণ্ডে। আপাতত আর সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রইল না। ৭০ আসনের বিধানসভায়, তাদের শক্তি এখন ৩৫। এ ছাড়া অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত এক বিধায়কের সমর্থনও রয়েছে। রাজ্যসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে বিজেপির একটি আসনও এ বার কংগ্রেসের হাতে আসবে।
লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরেই বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেছিলেন, অচিরেই তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড ও বিহারে। নীতীশকুমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে জিতেন মাঁঝিকে সেই পদে বসিয়ে বিহারে সরকারের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে ফেলেছেন এর মধ্যেই। দিল্লিতে কংগ্রেস ও আপ বিধায়কদের একাংশকে ভাঙিয়ে বিজেপি সরকার গঠনের চেষ্টা করায় এমন হইচই হয় যে, তার থেকেও আপাতত জগদীশ মুখীরা পিছিয়ে এসেছেন। এ বার উত্তরাখণ্ডেও বিজেপির সরকার গড়ার আশা ধাক্কা খেল। ঝাড়খণ্ডেও আপাতত সরকার উল্টে দেওয়ার অবস্থায় নেই বিজেপি।
এই অবস্থায় উত্তরাখণ্ড, দিল্লির আশা ছেড়ে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা দখলকেই এখন পাখির চোখ করছেন বিজেপির নতুন সভাপতি অমিত শাহ। টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসকে দু’রাজ্যেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রবল প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। তাই উত্তরাখণ্ডের মিঠে বাতাসের স্বস্তি বেশি দিনের নয়, বুঝতে পারছেন কংগ্রেস নেতারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy