Advertisement
E-Paper

বিমান উদ্ধারে ঝুঁকির সড়ক-সফর ইঞ্জিনের

চলতি মাসের ১০ তারিখে আইজলে পৌঁছে বিগড়ে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। সেই বিমানকে উদ্ধার করে আনার জন্য বিপদসঙ্কুল সড়কপথে ট্রেলার-বাহনে দীর্ঘ সফর করল বিকল্প ইঞ্জিন। আইজলে বিকল এয়ারবাস-৩১৯ বিমানটির ডান দিকের ইঞ্জিন পরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই পার্বত্য শহরে সেটি সারানো সম্ভব নয়। চাই বিকল্প ইঞ্জিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৬

চলতি মাসের ১০ তারিখে আইজলে পৌঁছে বিগড়ে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। সেই বিমানকে উদ্ধার করে আনার জন্য বিপদসঙ্কুল সড়কপথে ট্রেলার-বাহনে দীর্ঘ সফর করল বিকল্প ইঞ্জিন।

আইজলে বিকল এয়ারবাস-৩১৯ বিমানটির ডান দিকের ইঞ্জিন পরীক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই পার্বত্য শহরে সেটি সারানো সম্ভব নয়। চাই বিকল্প ইঞ্জিন। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে সেই বিকল্প ইঞ্জিন আইজলে পৌঁছে দেওয়া হল সোমবার। ২০ দিন আটকে থাকার পরে আজ, বুধবার সেই ইঞ্জিনের সাহায্যেই বিমানটি কলকাতায় ফিরবে বলে জানাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া।

ইঞ্জিন পাঠাতে এত দেরি কেন?

এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, ১৪ জুলাই দিল্লি থেকে ১৪ চাকার ট্রেলারে রওনা হয়ে সেই বিকল্প ইঞ্জিন ঠিকঠাকই যাচ্ছিল। কিন্তু গত রবিবার আইজল বিমানবন্দর থেকে ন’কিলোমিটার আগে একটি সরু লোহার সেতুর সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় সেই ট্রেলার। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের মাঝখানে সেই সেতুর তলায় বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। ট্রেলারের দুই চালকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের। ট্রেলারে লাগানো ছিল জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)। গুগ্ল ম্যাপ থেকে তার অবস্থানের উপরেও নজর রাখছিলেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।

আয়োজনে ত্রুটি ছিল না। কিন্তু ওই পাহাড়ি সেতুর উপর দিয়ে তাঁরা যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন ট্রেলারের দুই চালক। যাঁরা টানা ১৪ দিন গড়ে ১২-১৪ ঘণ্টা করে ট্রেলার চালিয়ে (ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিবেগে) ৩৬৯১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছেন। সেই ট্রেলারের পেটে ৪০০০ কিলোগ্রাম ওজনের বিমান-ইঞ্জিন। দুই চালকই বেঁকে বসায় ট্রেলার আটকে থাকে সেতুর এক দিকে। সোমবার সকালে ছুটে যান ইঞ্জিনিয়ারেরা। যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত একটি নির্মাণ সংস্থার স্থানীয় বিশেষজ্ঞ চালককে ডেকে আনা হয়। ভয়ানক ঝুঁকি নিয়ে তিনিই ট্রেলারটিকে সেতু দিয়ে ও-পারে পৌঁছে দেন।

বিমান সংস্থা জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকল বিমানে বিকল্প ইঞ্জিন লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। বুধবারেই বিমানটির কলকাতায় ফিরে আসার কথা। বিপত্তারণ স্থানীয় চালকটির কাজ অবশ্য শেষ হয়নি। বিগড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটি তুলে দেওয়া হয়েছে ওই ট্রেলারেই। ঠিক হয়েছে, ফেরার পথেও ওই চালক ন’কিলোমিটার দূরের লোহার সেতু পার করে দেবেন ট্রেলারটিকে। তার পরে ইঞ্জিন নিয়ে দিল্লির রওনা দেবেন দুই চালক।

এমন বিপদসঙ্কুল পথে ইঞ্জিন পাঠানোর ঝুঁকি নিতে হল কেন?

এয়ার ইন্ডিয়ার খবর, বিকল্প ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর পণ্যবাহী বিমান এএন-৩২ ভাড়া নিতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা মেলেনি। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, আধুনিক করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি এএন-৩২ বিমানকে পাঠানো হয়েছে ইউক্রেনে। বাকি যে-ক’টি এএন-৩২ বিমান আছে, সেগুলি রাখা আছে প্রধানত দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের খাবার পৌঁছে দেওয়া এবং তাঁদের নিয়ে যাতায়াত করার জন্য। এই অবস্থায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ইঞ্জিন পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেই বিমান ভাড়া দেওয়া সম্ভব ছিল না।

মুশকিলে পড়ে যান এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তারা। একটি বিমান আইজলে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় উড়ানসূচি নিয়েও সমস্যা শুরু হয়। প্রথম দিকে কলকাতা থেকে উড়ান বাতিল করতে হচ্ছিল। পরে অন্য বিমান এনে সেই সূচি স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিমানটিকে আইজলে ফেলে রাখা সম্ভব নয়। পদে পদে বিপদ জেনেও শেষ পর্যন্ত বলে দিল্লি থেকে সড়কপথে বড় ট্রেলারে বিকল্প ইঞ্জিন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, এটা প্রথম নয়। মাস চারেক আগে বিশাখাপত্তনমে খারাপ হয়ে যাওয়া একটি বিমানের জন্য মুম্বই থেকে বিকল্প ইঞ্জিন সড়কপথেই পাঠানো হয়েছিল। তবে এ বার পাহাড়ি রাস্তা বলে ঝুঁকি ছিল বেশি।

air india aizawl damaged engine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy