Advertisement
E-Paper

বারাণসীই কেল্লা মোদীর

ভোটের হাওয়া তুঙ্গে তুলতে দোলের আগেই বারাণসী আসন থেকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করে দিল বিজেপি। আতসবাজি, মিষ্টিমুখের প্রস্তুতি চলছিল আজ সকাল থেকেই। রাত এগারোটায় দলের সদর দফতরে ঘোষণা করা হল, গোবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বারাণসীকেই দুর্গ করে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে নামছেন দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৭
দৃপ্ত। নয়াদিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে মোদী। ছবি:  পিটিআই।

দৃপ্ত। নয়াদিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে মোদী। ছবি: পিটিআই।

ভোটের হাওয়া তুঙ্গে তুলতে দোলের আগেই বারাণসী আসন থেকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করে দিল বিজেপি। আতসবাজি, মিষ্টিমুখের প্রস্তুতি চলছিল আজ সকাল থেকেই। রাত এগারোটায় দলের সদর দফতরে ঘোষণা করা হল, গোবলয়ের সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বারাণসীকেই দুর্গ করে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে নামছেন দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এই ঘোষণা হতেই শুরু হয়ে গেল মোদী-ধ্বনি। দিল্লি থেকে বারাণসী সর্বত্রই যেন জয়ের উল্লাস। প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেননি মোদীও। কয়েক মিনিটের মধ্যেই টুইটার ও ফেসবুকে ভেসে ওঠে তাঁর বক্তব্য।

মোদীকে বারাণসী থেকে দাঁড় করিয়ে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্ব আজ বুঝিয়ে দিলেন, লোকসভা নির্বাচনে গোবলয়কে ভিত করেই কিস্তি মাত করতে চাইছেন তাঁরা। আর কেন্দ্র ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোদী বুঝিয়ে দিলেন, হিন্দুর অন্যতম প্রধান তীর্থ কাশীকে কেল্লা করতে পেরে কতটা গর্বিত তিনি। অস্পষ্ট রইল না উন্নয়নের সঙ্গে হিন্দুদের ভর করেই এগোতে চাইছেন তিনি। রাতেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলিতে মোদী লিখেছেন, “পবিত্র বারাণসী থেকে প্রার্থী করার জন্য দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। গঙ্গা মাতা ও কাশী বিশ্বনাথের আশীর্বাদ নিয়ে আসুন আমরা একসঙ্গে মিশন ২৭২+ সফল করতে এবং মজবুত, চনমনে আর সমৃদ্ধ ভারত গড়ার কাজে নেমে পড়ি।”

আসন-জট কাটিয়ে মোদীর লড়াইয়ের কেন্দ্র ঘোষণার জন্য চূড়ান্ত তৎপরতা চলছিল দলে। বারাণসীতে বেঁকে বসা মুরলীমনোহর জোশীকে বোঝাতে আসরে নামেন আরএসএসের শীর্ষ নেতারাও। অবশেষে সরলো আসন রহস্যের পর্দা। মোদীকে বারাণসী থেকে প্রার্থী করে দল ও সঙ্ঘ বার্তা দিল গোবলয়কে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। এর জন্য জোশীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সরানো হল কানপুরে। আর পাশাপাশি দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহও উত্তরপ্রদেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর আসন লখনউ থেকে প্রার্থী হয়ে সেই একই বার্তা দিতে চাইলেন। দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা অরুণ জেটলিও এই প্রথম বার লোকসভায় লড়ছেন পঞ্জাবের অমৃতসর আসন থেকে। ১৯ তারিখ ফের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসবে। সেখানে গুজরাত নিয়ে কথা হবে। সে দিনই লালকৃষ্ণ আডবাণীর কেন্দ্র ঘোষণা হবে।

বারাণসীতে মোদীর নাম ঘোষণা হলেও গুজরাত থেকেও তিনি লড়তে পারেন। আজ দিনভর দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকের পর এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অতীতেও বাজপেয়ী ও আডবাণী একই সঙ্গে দুটি আসন থেকে লড়েছেন। ফলে মোদীর পক্ষে দু’টি আসন লড়লে কোনও ক্ষতি নেই।” গত কালই সঙ্ঘ নেতৃত্ব রাজনাথ, মোদী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করে ফেলেন, বারাণসী কেন্দ্রে মোদীর নাম আজই ঘোষণা হবে। জোশীকেও রাজি করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে আজ অনেকে প্রশ্ন তোলেন দু’টি আসন থেকে লড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে। তাঁদের নিরস্ত করে রাজনাথ বলেন, মোদীর জন্য উত্তরপ্রদেশের এমন একটি আসন দরকার, যেখান থেকে লড়লে পাশের রাজ্য বিহারেও প্রভাব পড়তে পারে। গোবলয়ের এই দুই রাজ্যে ১২০টি আসনই মোদীর পাখির চোখ। ফলে মোদী নিজে লড়লে দলের নেতা-কর্মীরাও সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার উৎসাহ পাবেন। শেষ বাজারে ভোটের হাওয়া আরও জোরদার হবে।

জেটলিও এ বার লোকসভা ভোটে লড়তে রাজি থাকলেও দলই তাঁকে প্রার্থী না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল গোড়ায়। কিন্তু অমৃতসর আসন থেকে নভজ্যোত সিংহ সিধুর বিরুদ্ধে শুধু দলীয় নেতাদেরই ক্ষোভ ছিল না, অকালি নেতাদের সঙ্গেও তাঁর বিবাদ বেধেছিল। সে কারণে দলের একটি বড় অংশ, এমনকী অকালি নেতারাও চাইছিলেন জেটলি সেই কেন্দ্রে প্রার্থী হন। আজ সিদ্ধান্ত হয়, জেটলি সেই কেন্দ্র থেকেই লড়বেন। পরিবর্তে সিধুর মতো শিখ মুখকে দিল্লি বা হরিয়ানায় প্রার্থী করা হবে। সেই প্রস্তাব দিতে সিধুকে আজ দলের বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে সিধু বলেন, “লড়লে আমি অমৃতসর আসন থেকেই লড়তাম। জেটলি আমার গুরু। মোদীর জন্য পুরো আহুতি দিতে আমি প্রস্তুত।” সিধু এই ভাবে দলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে আসন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপি খুবই সতর্ক থাকতে চাইছে। উত্তরপ্রদেশে দাঙ্গায় অভিযুক্তদের কাউকে টিকিট দেওয়া হয়নি। যদিও এখনও কুড়িটির বেশি আসন ঘোষণা বাকি। কল্যাণ সিংহ নিজে না লড়লেও ছেলের জন্য আসন নিয়েছেন। ছত্তীসগঢ়েও রমন সিংহ নিজের ছেলে অভিষেকের জন্য টিকিট সুনিশ্চিত করেছেন। বরুণ গাঁধী তাঁর নতুন কেন্দ্র সুলতানপুরে গিয়ে মা মানেকার জন্য পুরনো আসন পিলিভিট ছেড়ে দিয়েছেন। উমা ভারতীকে তাঁর পছন্দের ঝাঁসি দেওয়া হয়েছে। বিহারের পটনা সাহিব আসনটি শেষ পর্যন্ত দেওয়া হল শত্রুঘ্ন সিন্হাকেই। উত্তরাখণ্ডে তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়েছে।

কেজরীবালের ধাক্কায় দিল্লিতে অল্পের জন্য সরকার হাতছাড়া হওয়ার পরে সেখানেও ওজনদার প্রার্থী দিয়েছে দল। তার যুক্তি হিসেবে জেটলি আজ বলেন, “যেটুকু খামতি রয়েছে দিল্লিতে, তা পূরণ করার জন্যই ওজনদার প্রার্থী দিতে হল। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হর্ষবর্ধন, মীনাক্ষি লেখি, দলিত নেতা উদিত রাজ, ভোজপুরি গায়ক মনোজ তিওয়ারিকে টিকিট দেওয়া হয়েছে।” সুব্র্যহ্মণ্যম স্বামী চাইলেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। পঞ্জাবে বাবা রামদেবের আপত্তিতে এখনও আটকে রয়েছে অভিনেতা বিনোদ খন্নার আসন।

modi benaras loksabha election diganta bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy