Advertisement
E-Paper

বারাণসীতে মোদী-নামে আপত্তি জোশীর, সুর চড়াচ্ছেন সুষমাও

সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে সাময়িক ধামাচাপা পড়লেও বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদী বিরোধিতার সুর ফের চড়া হচ্ছে। ও দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তা ভোট শুরুর মুখেই। আজ মোদীর উপস্থিতিতে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের সামনে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের দুই প্রবীণ নেতা মুরলী মনোহর জোশী ও সুষমা স্বরাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৮

সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে সাময়িক ধামাচাপা পড়লেও বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদী বিরোধিতার সুর ফের চড়া হচ্ছে। ও দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তা ভোট শুরুর মুখেই। আজ মোদীর উপস্থিতিতে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহের সামনে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের দুই প্রবীণ নেতা মুরলী মনোহর জোশী ও সুষমা স্বরাজ।

লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্যের প্রার্থী ঘোষণার জন্য আজ সকালেই দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসে। বিজেপির একটি সূত্রের খবর, সেই বৈঠক শুরু হতেই জোশী রাজনাথকে বলেন, লাগাতার প্রচার হচ্ছে বারাণসী থেকে মোদী প্রার্থী হতে পারেন। এটা কি সত্যি? রাজনাথের জবাব ছিল, এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। উত্তেজিত হয়ে জোশী বলেন, যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া না-ই হয়, তা হলে কেন দলের তরফে সভাপতি তা খণ্ডন করছেন না? রাজনাথের বক্তব্য, যখন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, দলের সভাপতি তা খণ্ডন করতে যাবেন কেন? নাছোড়বান্দা জোশী পরে বলেন, দলের এত জন মুখপাত্রের মধ্যেও তো কেউ তা খণ্ডন করতে পারেন!

বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের নেতা-কর্মীদের অনেকেই চাইছেন, বারাণসী আসনটি থেকে নির্বাচনে লড়ুন মোদী। তাতে উত্তরপ্রদেশে দল যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনই পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারেও তার প্রভাব পড়বে বলে আশাবাদী এই নেতা-কর্মীরা। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকেই সব থেকে বেশি আসন জয়ের চেষ্টা করছেন মোদী। কিন্তু ঘটনা হল, দলের বহু নেতা-কর্মী বারাণসী আসনটিতে মোদীকে চাইলেও জোশী নিজের ওই আসনটি ছাড়তে নারাজ। গত কয়েক দিন ধরেই সেখানে তিনি ঘাঁটি গেড়ে প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এমনকী জোশী-সমর্থকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মোদী-সমর্থকদের বিবাদও শুরু হয়েছে সেখানে। আজও বৈঠকের মাঝ পথেই জোশী নিজের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উঠে চলে যান। বিষয়টি নিয়ে আগামী কাল সংবাদমাঘ্যমের মুখোমুখি হবেন জোশী। তার মধ্যেই এ দিন উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ ইঙ্গিত দিয়েছেন, মোদী গুজরাত থেকে লড়ছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, মোদী শুধুই গুজরাতের কোনও আসনে দাঁড়াবেন, নাকি উত্তরপ্রদেশ থেকেও লড়বেন, তা কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে।

জোশী যখন রাজনাথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নাম না করেও আসলে মোদীরই বিরোধিতা করছেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে গলা মেলান দলের আর এক শীর্ষ নেতা সুষমা স্বরাজও। ভোটের মুখে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিজেপি যে ভাবে জোট করছে, তাতে কিছুটা আপত্তি রয়েছে বিজেপির এই নেত্রীর। এ নিয়ে কিছু দিন আগে টুইটারে তিনি সরবও হয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, আজ সুষমা বৈঠকে রাজনাথকে প্রশ্ন করেন, যদি কোনও ব্যক্তি বিজেপিতে যোগ দিতে চান, তা হলে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দলের সভাপতির। কিন্তু যখন কারও সঙ্গে জোট হচ্ছে, সেই সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছেন? রাজনাথ জবাবে বলেন, এটি মূলত রাজ্য স্তরের নেতারাই ঠিক করছেন। অসন্তুষ্ট সুষমা পাল্টা প্রশ্ন করেন, যদি রাজ্যের নেতারাই জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে কেন্দ্রের নেতাদের কী প্রয়োজন? সংসদীয় বোর্ডের ভূমিকাই বা কোথায় গেল? এই গোটা পর্বে মোদী উপস্থিত থাকলেও বিজেপি সূত্রের খবর, তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

রামবিলাস পাসোয়ান থেকে কর্নাটকের রেড্ডি ভাইরা সম্প্রতি এঁদের বিজেপির জোটে ফেরানোর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদীর হাত শক্ত করা হলেও এ কাজ করতে গিয়ে যে দলের প্রবীণ নেতাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে, তা বুঝিয়ে দেন সুষমা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে ইয়েদুরাপ্পাকে বিজেপি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল মূলত লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘোর আপত্তিতে। আজ নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে কর্নাটকের শিমোগা আসন থেকে ইয়েদুরাপ্পাকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে আপত্তি থাকলেও তা প্রকাশ্যে আনেননি সুষমা। কিন্তু রেড্ডি ভাইদের দলকে বিজেপির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যেই সরব হন তিনি। সুষমার আপত্তিতেই আজ কর্নাটকের কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছে বিজেপি।

বিজেপির সুষমা-বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, মোদীর হাত শক্ত করার জন্যই পাসোয়ান বা রেড্ডি ভাইদের দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আর সেটা ভেস্তে দিতেই এখন সক্রিয় হয়েছেন মোদী-বিরোধী এই সব নেতা-নেত্রীরা। দলের এই অংশের মতে, গত কালই সুষমা ও জোশী নিজেদের মধ্যে কথা বলে করেন, আজ নির্বাচনী বৈঠকে এই বিষয়টি তোলা হবে। তার পরেই দু’জনে সাঁড়াশি আক্রমণ করেন রাজনাথকে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের পর সুষমাও আজ বৈঠক ছেড়ে চলে যান। সুষমা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও আডবাণী, রাজনাথ, মোদী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, নিতিন গডকড়ীরা কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। পরে অবশ্য বিজেপি নেতা অনন্ত কুমার বলেন, “এ ধরনের কোনও ঘটনাই নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে ঘটেনি। জোশীর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে যাওয়ার ছিল। সুষমা স্বরাজেরও বিমান ধরার তাড়া ছিল।” সুষমাও পরে টুইট করে জানান, ভোপালে একটি জরুরি বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্যই তাঁকে বৈঠক ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।

benaras modi murali manohar joshi sushma swaraj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy