Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভিএস না বিজয়ন, বড় ভাবনা এখন সিপিএমে

জয়ের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন গেল তাঁর কাছেই। কিন্তু ৯২ বছরের ভি এস অচ্যুতানন্দনের কাঁধে ভর দিয়ে বামেরা ফের কেরলে ক্ষমতায় ফিরলেও প্রশ্নটা রয়েই গেল— মুখ্যমন্ত্রী হবেন কে!

ভি এস অচ্যুতানন্দন ও পিনারাই বিজয়ন

ভি এস অচ্যুতানন্দন ও পিনারাই বিজয়ন

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

জয়ের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোন গেল তাঁর কাছেই। কিন্তু ৯২ বছরের ভি এস অচ্যুতানন্দনের কাঁধে ভর দিয়ে বামেরা ফের কেরলে ক্ষমতায় ফিরলেও প্রশ্নটা রয়েই গেল— মুখ্যমন্ত্রী হবেন কে!

কেরলে ১৪০টি আসনের মধ্যে ৯১টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরল সিপিএমের জোট। একই সঙ্গে এই প্রথম কেরলে খাতা খুলল বিজেপি। তিরুঅনন্তপুরমের নেমম আসনে জিতলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা ও রাজাগোপাল। বিধানসভায় ঢোকার প্রবেশাধিকার পেতে যিনি ছিলেন বিজেপির সেরা বাজি।

গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম এত বেশি বিধায়কের সমর্থন নিয়ে কেরলে সরকার গড়বে বামেরা। কিন্তু সিপিএমের এখন সব থেকে বড় ভাবনা সরকারের ভার কার হাতে দেওয়া হবে! এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে যাতে দলে ফের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া না দেয়, তা নিশ্চিত করতে ফল ঘোষণা হতেই আজ সন্ধেয় তিরুঅনন্তপুরমের বিমান ধরেছেন সীতারাম ইয়েচুরি ও প্রকাশ কারাট। আগামিকাল কেরলে রাজ্য কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক বসবে। সেখানেই ঠিক হবে, পিনারাই বিজয়ন নাকি ভিএস, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র মালমপুঢ়ায় বসেই আজ ফোনে মোদীর শুভেচ্ছা-বার্তা পেয়ে তৃপ্তির হাসি হেসেছেন ভিএস। কারণ প্রচারে কংগ্রেসের দুর্নীতির সঙ্গে মোদী সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতিকেও নিশানা করতেন ভিএস। তাঁর এ-ও দাবি, বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস জোট তাঁেদর কোনও অসুবিধায় ফেলেনি।

মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে যে তিনি রয়েছেন, সে ইঙ্গিত আগেও দিয়েছেন ভিএস। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ছাড়তে রাজি নন। সেই দাবি জানাতেই ইয়েচুরি-কারাটদের পাশাপাশি ভিএস-ও আজ রাতে তিরুঅনন্তপুরম পৌঁছে গিয়েছেন। দলের অনুশাসন না মেনে ভিএস পিনারাইয়ের বিরুদ্ধে লাভালিন দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। ভোটের আগেই এই দ্বৈরথ বন্ধ করতে ভিএস-কে প্রার্থী না করার কথাও ভাবা হয়েছিল। যেমনটি হয়েছিল পাঁচ বছর আগেও। সে বারও প্রথমে ভিএস-কে টিকিট দিতে অস্বীকার করেছিলেন তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন। কিন্তু সে বারের মতো এ বারও শেষ পর্যন্ত ভিএস-এর জনপ্রিয়তার কাছে হার মেনে তাঁকে প্রার্থী করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ বারের ভোটে ভিএস-ই ছিলেন বামেদের জোট এলডিএফের প্রচারের মুখ। কিন্তু পিনারাইয়ের অনুগামীরা বলছেন, সংগঠনের জোরেই কোল্লাম-ত্রিচূড়ের মতো জেলায় সব আসন জিতেছে বামেরা। ভাল ফল হয়েছে এর্নাকুলামের মতো কংগ্রেস দুর্গেও ।

পিনারাই-ভিএস দ্বৈরথে ইয়েচুরি বরাবরই দ্বিতীয় জনেরই পক্ষ নিয়ে এসেছেন। এই ভিএস-ই ইয়েচুরির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ বার ইয়েচুরি কী করবেন? এক পলিটব্যুরো সদস্যের বিশ্লেষণ, ‘‘বাংলায় জোটের ভরাডুবি নিয়ে কেরল-লবির প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ইয়েচুরিকে। তার মধ্যে তিনি যদি ভিএস-এর পক্ষ নিয়ে পিনারাইকে চটিয়ে ফেলেন, তাতে তাঁর সমস্যা আরও বাড়বে। ইয়েচুরি সেই ঝুঁকি নেবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।’’

ইয়েচুরিও যে এ নিয়ে দ্বিধায়, তা স্পষ্ট। বাংলায় তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে ছিলেন। অথচ আজ কেরলে বিজেপির ভাল ফলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইয়েচুরি যুক্তি দিয়েছেন, ওখানে কংগ্রেস জোট বিজেপিকে নিজের ভোট দিয়ে সাহায্য করেছে। সেই কারণেই নেমম আসনে বিজেপি জিতেছে। যদিও বাজপেয়ীর জমানার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বহু যুদ্ধের ঘোড়া ও রাজাগোপাল তা মানতে রাজি নন। গত বারের চেয়ে রাজ্যে বিজেপির ভোট শতাংশ খানিকটা বেড়ে হয়েছে ১০.৫ শতাংশ। দলের জন্য কেরল বিধানসভার টিকিট আদায় করে ৮৬ বছরের প্রবীণ রাজনীতিক আজ বলেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস বলেছিল, আমরা খাতা খুলতে পারব না। ভিজিটর্স পাস নিয়ে বিধানসভায় ঢুকতে হবে বলেও বিদ্রুপ করেছিলেন ওঁরা। সে কথা কিন্তু মেলেনি।’’

কেরলে বামেদের সাফল্যে ভাগ রয়েছে জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারেরও। পশ্চিমবঙ্গে তাঁকে প্রচারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে কানহাইয়া তার এক বন্ধু তথা সিপিআই প্রার্থীর হয়ে কেরলে প্রচার করেছেন। কংগ্রেসের একটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছেন কানহাইয়ার বন্ধুটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE