স্বমেজাজে। বিজেপির হয়ে ভোটপ্রচারে নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ফরিদাবাদে। ছবি: পিটিআই
আগামী সপ্তাহেই হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগে সনিয়া গাঁধীর জামাই রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ফের খুঁচিয়ে তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হরিয়ানার হিসারে এক জনসভায় গিয়ে মোদী আজ এ ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তথা সনিয়াকে নিশানা করেন। এর পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রবার্টকে জমি পাইয়ে দিয়েছে হরিয়ানার হুডা সরকার। নির্বাচন কমিশন যাতে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেই দাবিও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তবে মোদীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়েছে কংগ্রেসও। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার দাবি, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ মিথ্যা। ওই অভিযোগ সত্যি প্রমাণ করে দিতে পারলে এক মুহূর্তও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকবেন না বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি কংগ্রেস এ দিন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও নালিশ ঠুকেছে নির্বাচন কমিশনে। কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর মোদী আকাশবাণীর মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে যে বক্তৃতা দিয়েছেন তার উদ্দেশ্য পুরোপুরি রাজনৈতিক। তা ছাড়া, প্রতি বছর বিজয়া দশমীর দিন আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত যে বক্তৃতা দেন, এ বার তা দূরদর্শনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। এর পিছনেও রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এটা সরকারি সংবাদমাধ্যমের অপব্যববহার শুধু নয়, নির্বাচনী আচরণ বিধিরও লঙ্ঘন।
কংগ্রেস সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামলেও বিজেপি কিন্তু শান দিচ্ছে তাদের পুরোনো অস্ত্রেই। লোকসভা ভোটের সময়ও রবার্ট বঢরার জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। মোদী, অরুণ জেটলিরা এ ব্যাপারে মুখর হওয়ার পর পাল্টা মুখ খোলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। লোকসভা ভোট মিটতেই বিষয়টি ধামা চাপা পড়ে যায়। এখন আবার হরিয়ানায় তো বটেই, অন্য রাজ্যের ভোটেও কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে ওই দুর্নীতির অভিযোগ ও তার সঙ্গে গাঁধী পরিবারের যোগ নিয়ে ফের সরব হয়েছেন মোদী।
বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা ডিএলএফ-এর সঙ্গে বঢরার একটি জমি-চুক্তি দু’বছর আগে খারিজ করে দিয়েছিলেন হরিয়ানার জমি রাজস্ব দফতরের আমলা অশোক খেমকা। কিন্তু হুডা সরকার পরে এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গড়ে। গত জুলাই মাসে ওই কমিটি জানিয়ে দেয়, রবার্টের জমি-চুক্তি বৈধ ছিল। আড়াই মাস বাদে আজ হঠাৎই একটি সংবাদপত্রে সেই রিপোর্ট নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর এ দিনই হিসারে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যে কংগ্রেস সরকার জানে তারা আর ক্ষমতায় ফিরবে না। তাই ভোটের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গত কাল জামাইকে জমি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।” এখানেই থেমে না থেকে প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করে এ-ও বলেন, “নিশ্চয়ই ওপর থেকে ডান্ডা মেরে হুডা সরকারকে দিয়ে এটা করানো হয়েছে।” সন্দেহ নেই, এ কথা বলে সনিয়াকেই নিশানা করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোটের মুখে বঢরার জমি কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলাটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মোদী ‘গত কাল রবার্টকে জমি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করায়। বিজেপি শিবির এখনও এর ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে মোদী ওই অভিযোগ করার পরপরই তাঁকে আজ পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আনন্দ শর্মা, শাকিল আহমেদ-সহ বিভিন্ন কংগ্রেস নেতা। শাকিল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কি কিছুই বোঝেন না! নাকি জেনেশুনে মানুষকে বোকা বানাতে চাইছেন! জুলাই মাসের ১৬ তারিখ ভূমি রাজস্ব দফতর রবার্ট বঢরার জমি-চুক্তি বৈধ বলে ঘোষণা করেছে। তখন আদর্শ আচরণবিধি কোথায় ছিল?” প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, “লোকসভা ভোটের সময় নরেন্দ্র মোদী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু এখন তো উনি প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ ধরনের মিথ্যা প্রচার করতে কাউকে দেখিনি।”
রবার্টের জমি কেলেঙ্কারি ছাড়াও গুড়গাঁও, সোনীপত-সহ হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প ও আবাসন গড়ে তোলাকেও হুডা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র করছে বিজেপি। তা ছাড়া প্রচারে গিয়ে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা এ-ও বলছেন যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতাদের সম্পত্তির পরিমাণ বাড়লেও কৃষকদের বা রাজ্যের মানুষের মাথা পিছু আয় বাড়েনি।
সেই অভিযোগ খণ্ডন করে কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ আজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, উনি একটু পড়াশুনা করুন। দিল্লি ও গোয়া বাদ দিয়ে দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে হরিয়ানায় মাথা পিছু আয় সব থেকে বেশি। দশ বছর আগে কংগ্রেস যখন হরিয়ানার ক্ষমতায় আসে, তখন মাথা পিছু বার্ষিক আয় ছিল ৩৭ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy