Advertisement
E-Paper

ভাল না মন্দ রাজা, বিচার চান তিনি ভোটেই

বাজা তোরা, রাজা যায়। রাজা নন। রাসা। গোটা ভারত তাঁকে একডাকে চেনে এ রাজা বলে। নীলগিরির মানুষের স্থানীয় উচ্চারণে তিনিই রাসা। আন্দিমুথু রাসা। বিএসসি, এলএলএম, এমপি।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৫

বাজা তোরা, রাজা যায়।

রাজা নন। রাসা। গোটা ভারত তাঁকে একডাকে চেনে এ রাজা বলে। নীলগিরির মানুষের স্থানীয় উচ্চারণে তিনিই রাসা। আন্দিমুথু রাসা। বিএসসি, এলএলএম, এমপি।

মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণের মতো ইতিহাস বইয়ে মনমোহন-সাম্রাজ্যের পতনের কারণ লেখা হলে, রাজার নাম আসবেই। ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার টু-জি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে প্রধান অভিযুক্ত। যে দুর্নীতি থেকেই মনমোহন-সরকারের ‘শনির দশা’ শুরু।

রাজার লোকসভা কেন্দ্র নীলগিরিতে এসে অবশ্য বোঝার উপায় নেই, প্রাক্তন টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রী ১৫ মাস তিহাড় জেলে কাটিয়ে ফিরেছেন। ও সব শুনলে তিনি হাসেন। ফিল্টার কফিতে গলা ভিজিয়ে নেন। তার পর ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি সেই মামলা শেষ হয়ে যাবে। সবাই সাক্ষী দিয়েছে, আমি নির্দোষ। কিন্তু আদালতের বিচারের আগে আমি আপনাদের বিচার চাই। আমি এখন আপনাদের আদালতে।” পোস্টারে-ব্যানারেও সেই জনাদেশ-এর ডাক। ভোটেই বিচার হোক তিনি ভাল রাজা না মন্দ রাজা। কেউ প্রশ্ন করার আগে নিজেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে এনে সেটাকেই পাল্টা হাতিয়ার করছেন। বলছেন, “আমার দোষটা কী? মোবাইলটা বড়লোকদের হাতের মুঠোয় বন্দি ছিল। আমি গরিবদের আয়ত্তে এনে দিয়েছি। স্পেকট্রাম সস্তায় বেচেছিলাম বলেই মানুষ সস্তায় কথা বলতে পারছে। কিন্তু সবার সেটা সহ্য হল না।”

নীলগিরির গরিব কৃষক, কেরল-কর্নাটক থেকে রোজগারের আশায় আসা শ্রমিক স্পেকট্রাম কী বস্তু, বোঝে না। তাই টু-জি কেলেঙ্কারির খুঁটিনাটিও তাঁদের মাথায় ঢোকে না। তাঁরা জানেন, সব রাজনীতিকই দু’পয়সা কামায়। না হয় রাজাও কামিয়েছেন। কিন্তু চার বছর আগে যখন ধস নামল, মেঘ-ভাঙা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ধুয়ে গেল, তখন রাজাই ছিলেন তাঁদের পাশে। ছ’মাসের মেরামতির কাজ এক মাসে হয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার, নীলগিরিকে তিনিই দু’হাতে আগলে ছিলেন। রাজ্যের বাকি এলাকার মতো নীলগিরিতে বিদ্যুৎ সঙ্কটও নেই।

তাতে অবশ্য রাজা নিশ্চিন্ত নন। তিনি ছুটছেন। নীলগিরি বিরাট এলাকা। অর্ধেক পাহাড়, অর্ধেক সমতল। রাজার তাই দু’টো সাংসদ অফিস। একটা পাহাড়ের ওপর, উটিতে। অন্যটা সমতলের মেট্টুুপালায়মে। রাজাও চড়াই-উতরাই ভাঙছেন। কখনও চা-বাগানের মহিলা শ্রমিকদের মধ্যে। কখনও উটির বাজারে, মারিয়াম্মন মন্দিরের সামনে। হাজার হোক, নীলগিরি তাঁর নিজের এলাকা নয়। নিজের কেন্দ্র পেরামবালুর সংরক্ষিত কেন্দ্র হয়ে যাওয়ায় গত লোকসভায় নীলগিরিতে সরে আসতে হয়েছিল। এ বার অবশ্য তিনি বুক বাজিয়ে বলছেন, ‘‘এখন আমি তোমাদেরই লোক। আরও পাঁচ বছর সেবা করার সুযোগ চাই।” কিন্তু জয়ললিতা তাঁকে নিশ্চিন্ত থাকতে দিচ্ছেন না। নীলগিরি পাহাড়ের কোডানাড়ুতে আম্মার বাগানবাড়ি। চেন্নাইয়ে খুব গরম পড়লে এই বাগানবাড়ি থেকেই রাজ্যপাট চালান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শপথ নিয়েছেন, রাজাকে হারাবেনই।

রাজা তাই প্রচারে কোনও ফাঁক রাখছেন না। ভিড় টানতে নীলগিরিতে রাজার হয়ে প্রচার করছেন দক্ষিণী সিনেমার বিখ্যাত অভিনেত্রী খুশবু। জনতা অবশ্য রাজার প্রচারে ‘রাজকুমারী’কে দেখার আশায় ছিল। করুণানিধি-কন্যা কানিমোঝি। তিনিই রাজার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দুর্নীতির ছক কষেছিলেন বলে অভিযোগ। এডিএমকে নেতারা প্রচার করছেন, রাজা ঘুষের টাকা এনে কানিমোঝির হাতে তুলে দিয়েছেন। কানিমোঝি তা পরিবারের সিন্দুকে ঢুকিয়েছেন। দু’জনের মনের মিল না থাকলে এমন বোঝাপড়া কী ভাবে হয় সেটাও তামিল রাজনীতির পুরনো পিএনপিসি। কানিমোঝি কিন্তু রাজার হয়ে প্রচারে আসেননি। তামিলনাড়ু জুড়ে কানিমোঝির প্রচার-রথ আর ডজনখানেক গাড়ির কনভয় ছুটে বেড়াচ্ছে। বাড়ির মেয়ের মতো ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছেন। পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মহিলাদের ক্ষোভ উস্কে দিচ্ছেন। কিন্তু নীলগিরি বাদ।

দুর্নীতি থেকে গা বাঁচাতেই কি এই দূরত্ব রেখে চলা? ডিএমকে-র উটির জেলা সম্পাদক রামচন্দ্রন বলছেন, “দুর্নীতির অভিযোগ আসলে দ্রাবিড়দের বিরুদ্ধে আর্যদের ষড়যন্ত্র। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া রাজার হলফনামা দেখুন। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য মাত্র ৩ কোটি ১৬ লক্ষ। সবটাই আইনের পেশার আয়।” এ সবে মাথা না ঘামিয়ে উটির তরুণ ব্যবসায়ী এন প্রকাশের মতো অনেকে আবার ‘বিকল্প’ও খোঁজেন। পারিবারিক কফি-চকোলেট-ইউক্যালিপটাস তেলের ব্যবসার অঙ্ক কষতে কষতেই তাঁর সোজা কথা, “ডিএমকে, এডিএমকে, কংগ্রেস তো অনেক হল। এ বার নরেন্দ্র মোদীকে একটা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।”

কিন্তু নীলগিরির প্রার্থী-তালিকায় যে বিজেপি-র নামটাই নেই। বিজেপি প্রার্থী করেছিল এস গুরুমূর্তিকে। দিনক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর মনোনয়ন পেশ করায় তাঁর মনোনয়নই বাতিল হয়ে গিয়েছে। নীলগিরিতে জোর জল্পনা, রাজাই নাকি গুরুমূর্তিকে কিনে নিয়েছেন। কারণ এডিএমকে-বিরোধী ভোটে ভাগ বসাত বিজেপি। তাতে জয়ললিতার সুবিধে হত। আবার ডিএমকে-র স্থানীয় নেতাদের পাল্টা অভিযোগ, যারা গুজব ছড়াচ্ছে, এ সব সেই এডিএমকে-র কারসাজি। বিজেপি থাকলে এডিএমকে-রই ভোট কাটত। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে দু’বার বিজেপি নীলগিরি দখল করেছিল। এ বারও বিজেপি নেতারাও ভাল ফলের আশায় ছিলেন।

সে আশায় নীলগিরির প্রিয় গোলাপের কাঁটা ফুটেছে। গোলাপের নাম রাজা। উটির রোজ গার্ডেনের সামনে প্রচারের ঢাক বলছে, ‘নীলাগিরিয়িন রোসা, নাম্মা রাসা।”

premangshu chowdhury nilgiri a raja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy