Advertisement
E-Paper

মোদী অধরাই, চমক দিতে ব্যর্থ অরবিন্দ

প্রচারে থাকার তাগিদ তো ছিলই। বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরার লক্ষ্যও ছিল। এই যৌথ দাঁও মারতে কার্যত অনাহুতর মতোই আজ গুজরাতের গাঁধীনগরে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। শেষ পর্যন্ত চমক দেওয়া আর হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৭
উন্নয়ন প্রশ্নে মোদীকে বিদ্ধ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু খালি হাতেই দিল্লি ফিরতে হল আপ-নেতাকে। তার আগে আমদাবাদের কাছে সাংবাদিক বৈঠকে যাচ্ছেন কেজরীবাল।  ছবি: রয়টার্স।

উন্নয়ন প্রশ্নে মোদীকে বিদ্ধ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু খালি হাতেই দিল্লি ফিরতে হল আপ-নেতাকে। তার আগে আমদাবাদের কাছে সাংবাদিক বৈঠকে যাচ্ছেন কেজরীবাল। ছবি: রয়টার্স।

প্রচারে থাকার তাগিদ তো ছিলই। বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি হিসাবে নিজেদের তুলে ধরার লক্ষ্যও ছিল। এই যৌথ দাঁও মারতে কার্যত অনাহুতর মতোই আজ গুজরাতের গাঁধীনগরে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। শেষ পর্যন্ত চমক দেওয়া আর হয়নি।

মোদীর দেখা পাননি কেজরীবাল। বাড়ি পৌঁছনোর ৫ কিলোমিটার আগেই পুলিশ আটকে দেয় তাঁকে। ক্ষুব্ধ আপ নেতা বলেন, “এক জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভদ্রতাও করলেন না মোদী। আমি তো জঙ্গি নই। কেন দেখা করতে দেওয়া হল না? এটা কি গণতন্ত্র?” শেষে জয়পুর হয়ে দিল্লি ফিরে আসতে হয় তাঁকে। কিন্তু তিনি কেন চার্টার্ড বিমানে দিল্লি ফিরলেন, তা নিয়েও আবার বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে আপ নেতাকে।

মোদীর শাসনে কেমন আছে গুজরাত? তার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতেই চার দিনের সফরে সে রাজ্যে যান কেজরীবাল। ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই আপ-এর জনপ্রিয়তার পারদ নিম্নমুখী। দিল্লিবাসীর একাংশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সদস্য বাড়ানো থেকে চাঁদা সংগ্রহ পড়তির দিকে সবই। এই পরিস্থিতিতে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে এক দিকে আপ-এর চেষ্টা হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়া। আর অন্য দিকে কংগ্রেস নয়, আপ-ই যে বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ, জনমানসে এই বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল দল। তা ছাড়া, সংখ্যালঘু ও কংগ্রেস-বিরোধী শক্তিও ছিল আপ-এর লক্ষ্য। কিন্তু আগামিকাল আমদাবাদে জনসভা বাতিল করে দিয়ে এক দিন আগেই কেজরীবাল যে ভাবে রণে ভঙ্গ দিলেন, তাতে উল্লসিত বিজেপি শিবির। দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখির বক্তব্য, “গুজরাতের মানুষকে বোকা বানানো যে সহজ নয়, তা বুঝতে পেরেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন কেজরীবাল।”

অথচ চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি আপ নেতা। গুজরাতে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক ও জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের পরিকল্পনা ছিল, গুজরাতে সর্বাত্মক ভাবে মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবে দল। যাতে ফের সংবাদমাধ্যমের আলো এসে পড়ে কেজরীবালের উপরে। সেই লক্ষ্যে প্রথম দিনই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন কেজরীবাল। বিজেপির দাবি, নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করতে গুজরাত পুলিশকে প্ররোচিত করেন অরবিন্দ।

মোদীর রাজ্য ঘুরে কেজরীবালের বক্তব্য, “তিন দিনে আমি যা দেখলাম, আর গুজরাত সরকার যা দাবি করছে, তাতে অনেক ফারাক। কচ্ছ বা ভুজের গ্রামে গ্রামে গিয়ে দল সত্যিটা বুঝছে।” তাঁর দাবি, যে মোদী দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের কথা বলেন, সেই মোদীর রাজ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য বাবু বোখারিয়া খনি-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। অরবিন্দ গুজরাতে ঘুরে জেনেছেন, এখানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং বদলির জন্য দর ঠিক করা রয়েছে। রেজিস্ট্রারের চাকরি পেতে ৩৩ লক্ষ টাকা আর ডিএসপি-র বদলির জন্য ২.৭৫ কোটি টাকা। ঘুষ ছাড়া মোদীর রাজ্যে কেউ লাইসেন্স পায় না। এমনকী বিপিএল কার্ড পেতেও ঘুষ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

যদিও বিজেপির দাবি, চমকের রাজনীতি হিসাবেই আজ ফের মোদীর বাড়িতে বিনা আমন্ত্রণে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন কেজরীবাল। আজ সকালে প্রায় শ’দেড়েক সমর্থক নিয়ে মোদীর বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। পুলিশ রাস্তা আটকালে মোদীর সাক্ষাৎ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আবেদন জানান মণীশ সিসৌদিয়া। কেজরীবাল বলেন, “১৬টি প্রশ্ন করার ইচ্ছা আমার। আম আদমির জন্য মোদী কী ভাবছেন, তা জানান মুখ্যমন্ত্রী।” কেজরীবালের প্রশ্নে উঠে এসেছে গুজরাতে কৃষকদের দুরবস্থার কথা। তিনি বলেছেন, গত দেড় বছরে মোদী শুধু শিল্পপতিদের উন্নয়নে সাহায্য করেছেন। অম্বানী থেকে অদানী উন্নতি হয়েছে এদেরই। সাধারণ কৃষক উন্নয়নের সুফল পাননি। জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম সুযোগসুবিধাও পান না মানুষ। রিলায়্যান্স সংস্থার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রশ্নে মোদী কেন নীরব? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেড় বছরে গুজরাতে কৃষি উৎপাদন হয়েছে ১১%। কিন্তু সমীক্ষা থেকে আমরা জেনেছি এখানে উৎপাদন ১.১৮ % কমেছে। তা ছাড়া, রাজ্যে বেকারত্ব নেই বলে দাবি করেন মোদী। অথচ আপ খোঁজ নিয়ে দেখেছে সরকারি চাকরির ১৫০০ পদের জন্য এ রাজ্যে আবেদনকারীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ। তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে শিক্ষিত যুবকরা কী অবস্থায় রয়েছেন এখানে।

গত এক মাসে প্রচারের আলো থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে আপ। তাই প্রচারে ফেরার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে তারা। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে দলকে প্রতিষ্ঠিত করা তাদের লক্ষ্য। কেন না দল বুঝতে পারছে, ক্রমশ জাতীয় রাজনীতিতে নির্ণায়ক শক্তি হিসাবে উঠে আসছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে দলকে বিজেপির বিকল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে গুজরাতকেই বেছে নিয়েছিলেন কেজরীবাল।

মোদীর বিরুদ্ধে কেজরীবাল সরব হওয়ায় কংগ্রেস অবশ্য স্বস্তিতে। দলের মুখপাত্র শক্তি সিংহ গোহিলের বক্তব্য, “গুজরাতের সংস্কৃতিই হল অতিথি দেব ভব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতে এসেছেন। অথচ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি থাকা সত্ত্বেও দেখা করছেন না। এটা সংস্কৃতির পরিপন্থী। কেজরীবালের অবস্থান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, মোদীর কাগুজে উন্নয়নের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলতে কংগ্রেসের পদক্ষেপকেই আসলে সমর্থন করছে আপ।” কংগ্রেস এবং আপ নেতৃত্ব একযোগে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হলেও বিজেপি বলছে, ক্ষতি হচ্ছে কংগ্রেসেরই। এক নেতার কথায়, “কংগ্রেস ভাবছে, মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে কংগ্রেসেরই বি-টিম হয়ে কাজ করছেন কেজরীবাল। কিন্তু কংগ্রেস বুঝছে না, মোদীর বিকল্প রাহুল নয়, কেজরীবাল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আসরে নেমেছেন।”

এরই মধ্যে জয়পুর থেকে চার্টার্ড বিমানে দিল্লি আসা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন কেজরীবাল। আম আদমির হয়ে সর্বক্ষণ সওয়ালে ব্যস্ত কেজরীবাল কেন বেসরকারি বিমান চড়লেন? কে সেই বিমানের ভাড়া মেটালেন? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি নেতৃত্ব। জবাবে দিল্লি নেমে কেজরীবাল টুইট করে জানান, “একটি পত্রিকা সংস্থা ওই বিমানের ভাড়া দিয়েছে।” পাল্টা প্রশ্নে তিনি জানতে চান, “রাহুল গাঁধী আর নরেন্দ্র মোদীর ভাড়া কে দেয়?”

narendra modi kejriwal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy