চাকা ঘুরে যায়।
গুজরাত দাঙ্গার পরে তাঁকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল আমেরিকা। সেই নরেন্দ্র মোদীই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে, এ বার মার্কিন আইনসভার যৌথ অধিবেশনে তাঁকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রস্তাব সামনে এসে গেল। আর তা দিলেন খোদ মার্কিন আইনসভারই দুই সদস্য।
সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার কথা মোদীর। ওই সময়ে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে।
সেই সফরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাতে মার্কিন আইনসভার যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে পারেন, সে জন্য মার্কিন প্রতিনিধি সভার দুই সদস্য আইনসভার স্পিকার জন বোনারকে চিঠি লিখেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন আইনসভার সদস্য এড রয়ই প্রতিনিধি সভার বিদেশ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সামরিক সম্পর্ক সব দিক থেকেই দেখা যাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার জন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু নেই। ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বের সম্পর্ক একুশ শতকে একটা সদর্থক রূপ পেতে পারে।”
এই যুক্তিতেই মোদীকে মার্কিন কংগ্রেসে বলার সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাবনা। তাঁর সঙ্গে ওই চিঠিতে সই করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি সভার আর এক রিপাবলিকান সদস্য জর্জ হোল্ডিং। ঘটনা হল, গুজরাত দাঙ্গার পরে, ২০০৫ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের
প্রশাসন মোদীকে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতাকে গুরুতর ভাবে হরণ করা’র অভিযোগে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল।
আর সময়ের চাকা ঘুরে গিয়ে সেই মানুষটিই ভারতের মতো দেশে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসায় বুশের রিপাবলিকান পার্টির নেতারাই এমন প্রস্তাব নিয়ে এলেন।
কূটনৈতিক মহল যদিও মনে করছে এমন প্রস্তাব এলেই যে তাতে সায় মিলবে এবং ভুটানের মতো আমেরিকাতেও আইনসভার যৌথ অধিবেশনে মোদীর বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ এসে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। স্পিকার যেমন তাঁর মতামত জানাননি, তেমনি এ ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে, সময়ই তা বলবে। এই প্রস্তাব আইনসভার সদস্যদের মস্তিস্কপ্রসূত না কি এর পিছনে ওবামা প্রশাসনের বিদেশ নীতির কোনও কৌশলগত ভূমিকা রয়েছে, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। যাই হোক না কেন, গোটা বিষয়টি মার্কিন মুলুকে গোধরা কলঙ্কিত মোদীর সম্পর্কে বিরোধিতাকে প্রশমিত করতে যে সাহায্য করবে, তা বলাই যায়। আর তাতে ওবামা ও মোদী দু’পক্ষেরই লাভ।
মার্কিন প্রশাসন যে মোদীকে নিয়ে পুরনো জটিলতা চাপা দিতে তৎপর, তা বেশ কিছু দিন থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা। ভোটে জেতার পরেই বারাক ওবামা মোদীকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান, তাঁকে সে দেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ করেছেন।
ওবামা প্রশাসনের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনও দিন কয়েক আগে মন্তব্য করেছেন, ‘‘ভিসা বিতর্ক এখন ইতিহাস।’’ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে মোদীর আমন্ত্রণ করার সিদ্ধান্তেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। ওবামা প্রশাসনও এশিয়ায় চিনের ভারসাম্য রাখতে ভারতকে কাছে পেতে চায়। ব্যবসা আর সামরিক সমঝোতায় মোদী সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে আগ্রহী আমেরিকা।
আইনসভায় ভাষণের সূযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন মুলুকের সেই আগ্রহ কতটা কাজ করে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy