Advertisement
২০ মে ২০২৪

মুম্বইয়ে ইতিউতি অনেক পাখি

ফিরতি পথে, পাম বিচ রোডের টি এস চাণক্য রোড-এর কাছে বিস্তীর্ণ জলাভূমির ধারে আবারও গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। হাজারে হাজারে গোপালি-কমলা ছটা মাখা ফ্লেমিংগো পাখিদের অবাধ আড্ডা সেখানে। দু’চাকা চার চাকা গাড়ি ও বেশ কিছু মানুষজনেরও ভিড় সেখানে। যারা জায়গাটার হদিস রাখেন, তাদের কাছে বেশ হট স্পট এলাকা এই তালাও। স্থানীয় পরিবেশবিদদের হিসেব মতো প্রায় ১০,০০০ ফ্লেমিংগো এই বছর এখানে আস্তানা গেড়েছে যেটি খুবই আশাপ্রদ। বিগত কুড়ি বছরে এক সঙ্গে এত বেশি ফ্লেমিংগো নাকি এখানে দেখা যায়নি। কেমন যেন খেই হারিয়ে যাচ্ছে, এত এত ফ্লেমিংগো পাখি চোখের নাগালে দেখে। যেন গোলাপি রঙা পেজা তুলো চাপ চাপ হয়ে আছে। মুম্বইয়ে অনেক পাখি দেখলেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।আকাশে তখনও লালচে রং মাখা এক চিলতে ভোর। ফিকে হয়ে যায়নি তখনও সে ভোরের নিষ্কলুষতা। এমন একটা ঘুম ঘুম সকালকে সঙ্গী করে পাম বিচ মার্গ সাঁতরে চলেছি। পথের দু’পাশে আকাশচুম্বী অভিজাত ফ্ল্যাট, নিখুঁত ভাবে বন সৃজন করা গাছগাছালি, উদ্যান, মসৃণ সড়কপথ নিয়ে নভি মুম্বইয়ের এই অঞ্চলটা বেশ পরিপাটি ঢেলে সাজানো। ভাসি-নেরুল-সী উড পর্যন্ত আসতেই নজরে এল ডান হাতি সাইনবোর্ডটা। ‘নভি মুম্বই ইকো-সিটি প্রজেক্ট’—লেসার ফ্লেমিংগো পাখিদের ছবি ও পথনির্দেশ।

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০০:১৯
Share: Save:

আকাশে তখনও লালচে রং মাখা এক চিলতে ভোর। ফিকে হয়ে যায়নি তখনও সে ভোরের নিষ্কলুষতা। এমন একটা ঘুম ঘুম সকালকে সঙ্গী করে পাম বিচ মার্গ সাঁতরে চলেছি। পথের দু’পাশে আকাশচুম্বী অভিজাত ফ্ল্যাট, নিখুঁত ভাবে বন সৃজন করা গাছগাছালি, উদ্যান, মসৃণ সড়কপথ নিয়ে নভি মুম্বইয়ের এই অঞ্চলটা বেশ পরিপাটি ঢেলে সাজানো। ভাসি-নেরুল-সী উড পর্যন্ত আসতেই নজরে এল ডান হাতি সাইনবোর্ডটা। ‘নভি মুম্বই ইকো-সিটি প্রজেক্ট’—লেসার ফ্লেমিংগো পাখিদের ছবি ও পথনির্দেশ। স্থানীয় ভাষায় লেসার ফ্লেমিংগো পাখিকে ‘ছোট রোহিত’ বলা হয়। ডান দিকের কাঁচা সড়ক পথে গাড়ি ঘোরাল আমাদের অটোর সারথি।

আনন্দবাজার পত্রিকা মুম্বই ক্রোড়পত্রের জন্য এ বার মনস্থ করেই রেখেছি মুম্বইয়ের কংক্রিটের জঙ্গলেও দূর দূরান্ত থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের কথা নিয়ে কিছু লিখব। তাই প্রায় ঘুম চোখেই, ক্যামেরা কাঁধে, ঘরের মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে অটো বুক করে বেরিয়ে পড়েছি পরিযায়ী পাখি দেখার আহ্লাদে।

মুম্বই নভি মুম্বইয়ের বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে, যেগুলো বহু দূরান্ত থেকে আসা নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের আপাত স্বর্গরাজ্য। বিশেষত প্রজননের সময়টাতে হাজার হাজার মাইল আকাশপথ উড়ান দিয়ে তারা চলে আসে। হয়তো যাত্রাপথে চলমান গাড়িতে বসেই চোখে পড়েছে কোনও ঝিলের চড়ায় এই সমস্ত পাখির হট্টমেলা। কিন্তু, ওই যা হয় আর কী— যাওয়া আসার পথে গাড়ি থামিয়ে, হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে, খানিক কাছে যেয়ে ভাল ভাবে পরখ করার ইচ্ছে থাকলেও চলতি পথে সব সময় সম্ভবও হয় না। তবু আমরা ট্যাঁকের রেস্ত, সাধ-সাধ্যের মেলবন্ধন হলেই দৃষ্টি খিদে মন নিয়ে চলে যাই পাহাড়-জঙ্গল-সমুদ্র-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট-ধর্মস্থান, আরও কোথায় না কোথায়। কাছে দূরে আমাদের ভ্রমণ উপাখ্যান চলতেই থাকে। অথচ রবিকবির সেই বহু পঠিত কবিতা আওড়ে বলতেই পারি:

“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া...”

কী পাখি যেন সব? হর্নবিল, ইবিস, ফ্লোমিংগো, এরা, পিনটেইলস, স্যান্ডপাইপার, হেরন? পক্ষী বিশারদ বা সে অর্থে শৌখিন বার্ড ওয়াচার তো নই। শুধু ক্যামেরার লেন্সে ভরে নিই সামনের এই জলা জায়গাটায় ঝাঁক ঝাঁক পরিযায়ী পাখিদের অন্থহীন জটলা। কিছু ভরে রাখি ক্যামেরার ভিডিও মোড অন করে, জুম কখনও বাড়িয়ে-কমিয়ে। সী উড অঞ্চলের জলার কাছে এই অঞ্চলটায় নির্জনতা থম ধরে আছে। পাম বিচ মার্গ লাগোয়া প্রাইভেট রোড ধরে কিছু মানুষ আপমনে হাঁটছেন, জগিং করছেন। ঝিলের জলে পাখিদের রমরমা দেখতে থাকি অপলক।

ফিরতি পথে, পাম বিচ রোডের টি এস চাণক্য রোড-এর কাছে বিস্তীর্ণ জলাভূমির ধারে আবারও গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। হাজারে হাজারে গোপালি-কমলা ছটা মাখা ফ্লেমিংগো পাখিদের অবাধ আড্ডা সেখানে। দু’চাকা চার চাকা গাড়ি ও বেশ কিছু মানুষজনেরও ভিড় সেখানে। যারা জায়গাটার হদিস রাখেন, তাদের কাছে বেশ হট স্পট এলাকা এই তালাও। স্থানীয় পরিবেশবিদদের হিসেব মতো প্রায় ১০,০০০ ফ্লেমিংগো এই বছর এখানে আস্তানা গেড়েছে যেটি খুবই আশাপ্রদ। বিগত কুড়ি বছরে এক সঙ্গে এত বেশি ফ্লেমিংগো নাকি এখানে দেখা যায়নি।

কেমন যেন খেই হারিয়ে যাচ্ছে, এত এত ফ্লেমিংগো পাখি চোখের নাগালে দেখে। যেন গোলাপি রঙা পেজা তুলো চাপ চাপ হয়ে আছে। জলরেখা বরাবর এগোতেই যেন টেলিভিশনের ‘অ্যানিমাল প্ল্যানেট’। অনেকেই এসেছেন দামি বায়নাকুলার-টেলিলেন্স লাগানো জুম ক্যামেরা, ট্রাইপড নিয়ে। ক্যামেরাকে প্রশ্রয় দিয়েছি দেদার ছবি তুলে রাখার। এখানে সবাই প্রায় ফিশফিশিয়ে কথা বলছেন, পরিবেশের নির্জনতাকে মর্যাদা দিয়ে চোখের নাগালে এত ফ্লেমিংগোর জটলা আর ওড়াউড়ি দেখতে দেখতেই কাটিয়ে দিই উচ্ছ্বাস ঘেরা কিছু অনুভবী মুহূর্ত।

বায়নাকুলারে চোখ লাগিয়ে এক প্রৌঢ় দম্পতি পাশেই ছিলেন। অহেতুক ভাব জমাই। ভদ্রলোকের নাম নিখিল উপাধ্যায়। থাকেন নেরুল অঞ্চলের কেন্দ্রীয় বিহার কমপ্লেক্সে। ভদ্রলোক জানালেন তাঁরা প্রথম যখন এখানে আসেন তখন পাম বিচ রোডের পার্শ্ববর্তী জলাগুলোয় পদ্ম, শালুক ফুলও ফুটতে দেখেছেন। জলাগুলোয় পাখির আসা যাওয়া, বসত থাকলেও এই বার পাখির সংখ্যা যেন অনেকটাই বেশি। শ্রীমতী উপাধ্যায়ও বলেন, “আশা রাখি আমরা এই অঞ্চলগুলোর নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পারব।” আমাদের সামনেই ‘মুম্বই মিরর’ পত্রিকার এক তরুণ সাংবাদিক ও তাঁর সহকর্মী ট্রাইপড-এ ক্যামেরা তাক করছিলেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ‘নভি মুম্বই এনভায়ারমেন্ট প্রিসারভেশন সোসাইটি’ বা সংক্ষেপে NMEPS নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠিত হয়েছে এবং তারা এই উন্মুক্ত জলাভূমি রক্ষার জন্য জনস্বার্থ মামলাও নাকি দায়ের করেছেন। বম্বে হাইকোর্টের কাছে NMEPS-এর মূল দাবিদাওয়াগুলো হল, সরকার যাতে উপকূলরেখাগুলির স্থায়িত্ব রক্ষার দিকে অবিলম্বে জোর দেন, ভূমিক্ষয় রোধ-এর দিকেও নজর রাখেন, সাগরের খাঁড়ির উৎপন্ন ম্যানগ্রোভগুলিকে সজীব রাখা যাতে প্লাবন, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মূল ভূখণ্ডকে ‘প্রাকৃতিক ভাবেই’ মোকাবিলা করা যায়। এঁরা আরও চাইছেন স্থানীয় বেআইনি দখলদারদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। টি এস চাণক্যর কাছেই একটা কাঁচা পথ চলে গেছে, একটা গাছে ঝোলানো সাইনবোর্ডে লেখা—শ্রী বামনদেব মার্গ। সেখানে নাকি বেআইনি ভাবে একটা মন্দির গঠনের কাজও শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার।

হাইকোর্ট-এ এ বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলাও (PIL) দায়ের করেছে যে গত এক বছরে কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা মনোভাব জলাজমিগুলিকে ঠিকমতো দেখভাল করছে না। ফলে এই জলাজমি বা ওয়েট বডি ক্রমশ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। PIL আগামী এক মাসের মধ্যে কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের অপেক্ষায় আছে।

এই অঞ্চলগুলি সাইট সিয়িং-এর পক্ষে বেশ আদর্শ হতে পারে। অনুকূল আবহাওয়ায় ছোট কানওলা একপ্রকার পেঁচা, বক, ফ্লেমিংগো এবং আরও নানা প্রজাতির পাখপাখালি এ সব অঞ্চলে অবাধে বিচরণ করে। কারণ হল মুম্বইয়ে এখনও বেশ কিছু অঞ্চল, সাগরের খাঁড়ি ঢুকে এসেছে যেখানে, খোলা জমি, ঝিল, বিল, বৃষ্টির জমা জলের তালাও, ঘন ঝোঁপঝাড় কর্দমাক্ত এলাকা, চাষের জমি আছে এমন সব অঞ্চলেই পরিযায়ী পক্ষীকুলের এন্তার জটলা। খাঁড়ি ও ভাটার টানে জল সরে যাওয়া কিছুটা কাদাবালি মেশানো এলাকায় এপ্রিল থেকে জুন, কখনও তা আবার জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পরিযায়ী পাখিদের প্রজনন সময়।

মুম্বইতে এমন বেশ কিছু নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই পরিযায়ী ও অন্যান্য স্থানীয় ভারতীয় পাখিদের মিলনমেলা দেখা যায়। মানকুদ-ভাসি সেতু, যেটিকে ভাসি ব্রিজও বলা হয়, সেখানে খানে খাঁড়ি পাড় বরাবর ম্যানগ্রোভের ঝোপে প্রচুর পাখির নির্ঝঞ্ঝাট আস্তানা। উড়ান অঞ্চলটিতেও বালি ভরাট এলাকাটি পরিযায়ী পাখিদের মুক্তাঞ্চল। পাম বিচ রোড বরাবর বিলগুলিতে পরিযায়ী পাখি ক্যাসপিয়ান টের্নস, প্লোভারস, গাল, হেরন, পার্পল হেরন, বারবেটস ইত্যাদির সঙ্গে গাছগাছালিগুলিতে স্থানীয় ভারতীয় পাখি মুনিয়া, কোকিল, বুলবুল, কাঠঠোকরা হামেশাই দেখা যায়।

হারবার লাইনে সেওরি স্টেশন-এর পূর্ব দিকে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস ও তার আশেপাশে, লম্বা ঠ্যাংওলা নানান জলচর পাখিদের পাঠশালা বসে যায়। ভাটার সময় জল সরে গেলে কাদা মাখা ঘোলা জলের চড়ায় দূর থেকে মনে হয় যেন গোলাপি সাদা ভেলভেটের কার্পেট বিছানো আছে। প্রায় হাজার দশেক ফ্লেমিংগো পাখির এটাই অস্থায়ী আস্তানা তখন। জলচর পাখিদের হট্টমেলায় সামিল হেরন, টের্নস, গালস, গডউইট, প্লোভার, ঈবিশ, স্যান্ডপাইপার, ইগ্রেটস, সিন্ধু ঈগল, ইমপেরিয়াল ঈগল ইত্যাদি। আবার দেশজ পাখি মাছরাঙা, ঘুঘু, ম্যাগপাই রবিন, বুলবুলি, ওরিয়লও সেখানে ভিড় জমায়।

আইরেলি খাঁড়িতে আবার ফ্লেমিংগো দেখতে এলে নৌকা ভাড়া করে খাঁড়ির অনেকটা ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। স্থানীয় নৌকাওলারা ৩ ঘণ্টার জন্য ১৫০০ টাকা ভাড়া নেয়। ওদের জোয়ার ভাটার সমস্ত ক্ষণগুলো অভিজ্ঞতার নিরিখে জানা। জোয়ারের জল ছাপিয়ে এলেই নৌকা পাড়ি জমায়। লেসার ও গ্রেটার ফ্লেমিংগো এখানে আসে কুচ থেকে। নানান মখমলি ঝলক তুলে তাদের উড়ে চলা ক্যামেরা বন্দি করার সুযোগ হেলায় হারাতে চান না পক্ষী নিরীক্ষণকারীরা। আইরেলি ব্রিজের ধার ঘেঁষে তেরো-পনেরো সেক্টর পর্যন্ত প্রায় ব্যাকওয়াটারের সীমানায় ম্যানগ্রোভ ঝোপে এদের নিঃসীম ওড়াউড়ি।

ভাসাই রোড-এর বাসিন্দা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফার প্রদীপ গুপ্ত জানালেন, তাঁরও ‘বার্ড ওয়াচিং’-এর যথেষ্ট শখ রয়েছে। ভাসাই ওয়েস্ট থেকে সানসিটি হয়ে, নির্মল শঙ্করাচার্য মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে বর্ষার জলপুষ্ট জমিতে জুন-জুলাই থেকে প্রায় মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ক্রেন, ইন্ডিয়ান ব্ল্যাক ইবিস পাখিদের নিত্য জমায়েত শুরু হয়ে যায়। মাহিম নেহরু পার্ক, MNP সমধিক পরিচিত, ৩০ বছর আগেও ছিল এলাকার যাবতীয় আঁস্তাকুড় অঞ্চল। ক্রমশ এটাই সতেজ সবুজ অঞ্চলে বিবর্তিত হল। কাছ দিয়ে কুল কুল বয়ে গেছে মিঠি নদী। বান্দ্রা-সিওন রোড-এর কাছে এখানে মাহিম খাঁড়িতে শুধুমাত্র ৮০ রকম প্রজাতির প্রজাপতিরই দেখা মেলে না, এ ছাড়া পক্ষীপ্রেমীদের জন্য লাফিং ডাভ, গডউইট, গ্রেটার স্পটেড ঈগল, উডপিচার, সিকরা পাখিরাও উঁকিঝুঁকি দেয় দেদার।

মুম্বইয়ের কারনালায় প্রায় ১৪৭ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। তার মধ্যে ৩৭ ধরনেরই পরিযায়ী পাখি। এর মধ্যে ম্যাগপাই রবিন, মালবার হুইশলিং ট্রাশ, প্যারাডাইসে ফ্লাই ক্যাচার, র্যাকেট টেল ড্রংগো, সিন্ধুঈগল, ঘুঘু, সোনালি গলা কাঠঠোকরার দেখা মেলে। আবার ভিকরোলির একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলকে বলা হয় ‘বুচার বার্ড এরিয়া’। এখানে কিছু কালো ডানার চিল, ইন্ডিয়ান কর্মোরেন্ট, হলুদ গ্রীবা বুলবুল, জুভেনাইল মুনিয়া, মাছরাঙা, হামেশাই দেখতে পাওয়া যায়।

পাওয়াই লেকেও নানান পাখপাখালির পরিপাটি সংসার। এখানে সোনালি ডানার জাকানা, কমন কুট, গ্লসি ইবিস, লেজওলা জাকানা, লাল শেলডাক, পার্পল মুর্হেন, সাদা বুলওলা জলমোরগ, ফ্লাই ক্যাচার। ড্রংগো, ওমপ্রে, হুইশকর্ড ট্রেইন, সুন্দর ডানাওলা কাক, বুলবুল, গোল্ডেন ওরিয়ল— নানান আধা জানা আধা অচেনা পাখির বসত। মুলুন্দ-আইরোলির বর্তমান সেতুর কাছে ভাণ্ডুপ পাম্পিং স্টেশন এলাকাও পক্ষীপ্রেমীদের কাছে খুবই লোভনীয় স্থান। নাম না জানা একটা ঝিল-এর মাঝে কতই না পাখির ঐক্যতান। কী পাখি নেই সেখানে? স্পুনবিল, ফ্লেমিংগো, স্যান্ডপাইপার, ইবিস, রেড শঙ্ক, হরিয়ের, ক্যাসপিয়ান টের্নস, স্পটেট ডাভ, সানবার্ড, ওয়ার্বের্লাস, ব্যবলার্স, হুপাস, কমন লোরা, ইন্ডিয়ান রোলার, রেড ল্যাপউইং ইত্যাদি অজানা অচেনা কিংবা কেবলমাত্র নামটুকুই শোনা পাখিদের রাজ্যপাট। খুব ভোরবেলা নয়তো সূর্যাস্তের ঘণ্টা দুই আগে এই পাখিদের সাক্ষাৎ পাওয়ার মোক্ষম সময়।

পাখি দেখার কী আর শেষ আছে— সেবার গোরেগাঁও এ ‘সঞ্জয় গাঁধী জাতীয় উদ্যান’ বেড়াতে গিয়েও দেখেছি, বড় বড় গাছগাছালি ঘেরা শান্ত নির্জনতাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ছারখার করে দিচ্ছিল অনবরত পাখির কিচিরমিচির। এই সব অনুভব শুধুই মনের। কংক্রিটের জঙ্গল ঘেরা মুম্বইয়ে এই প্রাকৃতিক ব্যাঞ্জনাগুলোই তো উপরি পাওনা।

নভি মুম্বইয়ে থাকি, তাই কখনও সখনও ভাসির সেক্টর দশ-এর ‘রাজীব গাঁধী জগার্স পার্কে’ বেড়াতে চলে আসি, এমনিই। এখানে চৌপট্টিতে বৈকালিক ভ্রমণ মন্দ লাগে না। ব্যাকওয়াটারের ধার বরাবর বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে বক জাতীয় দীর্ঘ গ্রীবা ও লম্বা সরু ঠ্যাংওলা পাখিদের ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো। জলাশয়ের চড়াগুলোয় কখনও খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে গুগলি শামুক কীটপতঙ্গ। কখনও জলাশয়ের জল থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে ছোট মাছ। ব্যাকওয়াটারের পাড়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে কিংবা চকিতে উড়ে গিয়ে আবার খানিক দূরে গিয়ে বসছে। শুধু দেখে যাওয়া ওদের সাদা ডানার ঝলকানি। মোবাইল ক্যামেরায় কখনও আনমনে ভরে রাখি ওদের নানান গতিপ্রকৃতি। প্রকৃতি ও পরিবেশের কাছে আমরাও তো ধরা পড়ে যাই কত সহজেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhuchhanda mitra ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE