Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুম্বইয়ে রয়্যাল-খানা

১০৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কলকাতার চিত্‌পুরের বিখ্যাত মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁ রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের খাবারের বিশেষ খ্যাতি। গোটা ভারতের খাদ্যরসিকদের কাছেই রয়্যাল-এর মোগলাই খাবারের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কলকাতার খাদ্যরসিকদের মাটন চাঁপের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করাবার কৃতিত্ব রয়্যাল-এর।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

১০৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কলকাতার চিত্‌পুরের বিখ্যাত মোগলাই খাবারের রেস্তোরাঁ রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের খাবারের বিশেষ খ্যাতি। গোটা ভারতের খাদ্যরসিকদের কাছেই রয়্যাল-এর মোগলাই খাবারের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কলকাতার খাদ্যরসিকদের মাটন চাঁপের সঙ্গে প্রথম পরিচয় করাবার কৃতিত্ব রয়্যাল-এর। তাই তামাম বাঙালির রয়্যাল-এর প্রতি আলাদা আবেগ রয়েছে। সেই ১৯০৫ সাল থেকে একমাত্র চিত্‌পুরের রয়্যাল ছাড়া এদের আর অন্য কোথাও শাখা ছিল না। প্রবল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রয়্যাল শাখা খোলেনি এত দিন। আনন্দের খবর: ১০৯ বছর পর এ বার রয়্যাল কলকাতায় তার প্রথম শাখা খুলতে চলেছে। রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের অন্যতম কর্ণধার মহঃ ইরফান জানালেন, “কিছু দিনের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার সিসিএফসি ক্লাবের কাছাকাছি এলাকায় রয়্যালের প্রথম শাখা খুলছে।” ইরফান আরও জানালেন, “দীর্ঘদিন ধরেই ক্রেতারা নতুন শাখা খোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এত দিন বাদে ক্রেতাদের ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে তাই ভাল লাগছে।” তবে আরও আগে হয়ত খোলা যেত, অনেক দিন ধরে প্রস্তুতি চললেও কিছু আইনি সমস্যার জন্য দেরি হল বলেও তিনি জানালেন।

দীর্ঘদিনের চাঁপ, বিরিয়ানি, কোর্মা, কালিয়া, রেজালা ইত্যাদির পাশাপাশি সময়ের দাবি মেনে বেশ কিছু তন্দুরি ও নর্থইন্ডিয়ান খাবারও রয়্যালের খাদ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। সেগুলিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, তবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিটি মোগলাই পদ আজও রয়্যালের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ হুসেনের রেসিপি মেনেই তৈরি হয়। তাই আজও এখানকার প্রতিটি মোগলাই পদ সমস্ত প্রজন্মের খাদ্যরসিকদের কাছে সমান জনপ্রিয়। রয়্যালের মোগলাই খাবারপ্রেমী বাঙালিরা যারা মুম্বইয়ে বসে এখানকার মোগলাই খাবারের স্মৃতি রোমন্থন করছেন তারা যাতে মুম্বইয়ে বসেই রয়্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের বিখ্যাত কয়েক পদ মোগলাই খাবার বাড়িতে তৈরি করে খেতে পারেন তার জন্য রয়্যালের কর্ণধার মহঃ ইরফান এখানকার কয়েকটি বিখ্যাত পদের গোপন রেসিপি জানিয়েছেন।

মাটন বিরিয়ানি

উপকরণ: মাটন ২ কেজি, প্রতি কেজিতে ১০ খণ্ড করে কাটতে হবে, মোট ২০ খণ্ড হবে। দেশি ঘি বা সাদাতেল ৫০০ গ্রাম, দারচিনি ৫ গ্রাম, লবঙ্গ ১০ গ্রাম, ছোট এলাচ ১০ গ্রাম, পেঁয়াজের স্লাইজ ৩০০ গ্রাম, আদাবাটা ২০০ গ্রাম, রসুনবাটা ৫০ গ্রাম, নুন আন্দাজমতো, টকদই (ভাল করে ফেটিয়ে নিতে হবে) ২৫০ গ্রাম, উষ্ণ জল ১ লিটার।

প্রণালী: বড় ডেচকি বা হাঁড়ি আঁচে বসিয়ে দেশি ঘি বা সাদাতেল গরম করে দারচিনি, লবঙ্গ, ছোট এলাচ ফোড়ন দিন। পেঁয়াজের স্লাইজগুলো দিয়ে বাদামি রং করে ভেজে নিন। আদা, রসুনবাটা, নুন দিয়ে একটু ভেজে নিন। কাঁচা গন্ধ চলে গেলে মাটনের খণ্ডগুলো দিয়ে নেড়ে ফেটানো টক দই দিন। ক্রমাগত নেড়ে ২০-২৫ মিনিট কষান। মাটন অর্ধেক পেকে এলে ও তেল ছাড়লে উষ্ণ জল ঢেলে দিন। ঢাকনা বন্ধ করে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। মাটন সিদ্ধ হলে আঁচ থেকে নামিয়ে আলাদা করে রাখুন। মিনিট পনেরো বাদে ঢাকনা খুলে হাতা দিয়ে ঝোল থেকে সিদ্ধ করা মাটনের খণ্ডগুলো তুলে আলাদা করে রাখুন। ঝোলের মধ্যে যে ঘি ভাসবে সেটাও হাতা দিয়ে তুলে নিয়ে আলাদা পাত্রে রাখুন। এ বার ঝোলটা বড় ছাকনি বা পরিষ্কার কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে অন্য একটি হাঁড়ির মধ্যে রাখুন।

অন্য উপকরণ: ১টা পাতিলেবুর রস, লঙ্কা গুঁড়ো ২৫ গ্রাম, ঘন দুধ ১ লিটার, ছোট এলাচ ২৫ গ্রাম, লবঙ্গ ৫ গ্রাম, দারচিনি ৫ গ্রাম। ১ পিস জায়ফল, জয়িত্রী ৫ গ্রাম (সব গরমমশালা এক সঙ্গে মিস্কিতে দিয়ে গুঁড়ো করে নিন) জাফরান ২ গ্রাম, কেওড়া জল ছোট বোতলের অর্ধেক, গোলাপ জল ছোট বোতলের অর্ধেক, মিঠা আতর ১ গ্রাম।

প্রণালী: হাঁড়িতে রাখা মাটনের ছাঁকা ঝোলটার মধ্যে পাতিলেবুর রস, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, দুধ, গরম মশলার গুঁড়োর মিশ্রণ, জাফরান, কেওড়াজল, গোলাপ জল, মিঠা আতর দিয়ে হাতা দিয়ে ভাল করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এ বার ওর মধ্যে সিদ্ধকরা মাটনের খণ্ডগুলো দিন। প্রয়োজন হলে আন্দাজ মতো নুন মিশিয়ে নিতে পারেন।

ভাত তৈরির উপকরণ: বাসমতী চাল ২ কেজি, চাল ধুয়ে পরিষ্কার করে জলে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। দারচিনির ১টা বড় স্টিক, আধমুঠো লবঙ্গ, বড় এলাচ ৫টা, আধ মুঠো ছোট এলাচ।

প্রণালী: হাঁড়ি আঁচে বসিয়ে আন্দাজ মতো জল দিন। জল ফুটে উঠলে দারচিনি, লবঙ্গ, বড় ও ছোট এলাচ এবং চাল দিন। সিদ্ধ করুন। চাল ১/৩ অংশ সিদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে ভাত ছেঁকে নিয়ে ভাতটা অন্য হাঁড়িতে রাখা মাটন ও ঝোলের মিশ্রণের মধ্যে ঢেলে দিন। ভাতটা সমান করে বিছিয়ে দিন।

এক বাটি ভাতের মাড়ের সঙ্গে মাটনের ঝোল থেকে তুলে রাখা ঘি-টা মিশিয়ে নিন। এ বার এই মিশ্রণটা হাঁড়ির ভাতের উপর ছড়িয়ে দিন। হাঁড়ির ঢাকনা বন্ধ করে মাখা আটার লেই দিয়ে ঢাকনার চার পাশ বন্ধ করে দিন। একটা ফ্ল্যাট তাওয়া আঁচে বসিয়ে আঁচ বাড়িয়ে বেশি করে গরম করে নিন। এ বার চাটুর উপর হাঁড়িটা দমে বসান। পারলে হাঁড়ির ঢাকনার উপর জ্বলন্ত কাঠকয়লা ছড়িয়ে দিতে পারেন। মিনিট দশেক আঁচ বাড়িয়ে দম নিন। এর পর আঁচ কমিয়ে নিভু আঁচে দমে বসান। যখন দেখবেন মাখা আটার লেই থেকে ধোয়া বেরিয়ে আসছে তখন আঁচ বন্ধ করে দিন। এই অবস্থায় ২৫ মিনিট রেখে দিন। তার পর ঢাকনা খুলে পরিবেশন করুন।

মাটন রেজালা

উপকরণ: হাড় সমেত রেওয়াজি মাটন ১ কেজি, মোট ১০ খণ্ড করে কাটতে হবে। দেশি ঘি ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজ স্লাইজ করে কেটে নিন। আদাবাটা ৫০ গ্রাম, রসুনবাটা ১০ গ্রাম, জল হাফ লিটার বা আন্দাজ মতো, নুন আন্দাজ মতো।

প্রণালী: বড় ডেচকি বা হাঁড়ি আঁচে বসিয়ে অর্ধেক দেশি ঘি গরম করে পেঁয়াজের স্লাইজগুলো দিয়ে একটু নেড়ে নিন। আদা, রসুনবাটা দিয়ে নেড়ে হালকা ভাজুন। মাটনের খণ্ডগুলো দিয়ে জল ও নুন দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। ঢাকনা বন্ধ করে মিনিট ১৫ সিদ্ধ করুন। হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে ঢাকনা খুলে বড় হাতা দিয়ে সিদ্ধ করা মাটনের খণ্ডগুলো তুলে আলাদা করে রাখুন। ঝোল কাপড়ে ছেঁকে আলাদা করে রাখুন।

অন্য উপকরণ: ফেটানো টক দই ৫০০ গ্রাম, দুধ ১ কেজি, অর্ধেক নারকোল বাটা, কাজুবাদাম বাটা ১২৫ গ্রাম, পোস্তবাটা ৫০ গ্রাম, চারমগজ বাটা ৫০ গ্রাম, লবঙ্গ ৩ গ্রাম, ছোট এলাচ ৫ গ্রাম, দারচিনি ৫ গ্রাম, জয়ত্রি ১টা, সাদা গোলমরিচ ৫ গ্রাম, সমস্ত গরম মশলা মিক্সি বা শিলে গুঁড়ো করে নিন। গোলাপজল ২ চা চামচ, কেওড়াজল ২ চা চামচ, মিঠা আতর ২ ফোঁটা, কাবাবচিনি ১০ গ্রাম, গোটা শুকনো লঙ্কা ২০ পিস, গোটা লঙ্কাগুলো জলে ভিজিয়ে রাখুন। জাফরান ২ গ্রাম।

প্রণালী: ছেঁকে নেওয়া মাংসের ঝোলের মধ্যে ফেটানো টক দই, দুধ, নারকোলবাটা, কাজুবাটা, পোস্তবাটা, চারমগজ বাটা দিয়ে হাতা দিয়ে ভাল করে নেড়ে মিশিয়ে নিন। গরম মশলার গুঁড়োর সঙ্গে মিশ্রণটি ছড়িয়ে দিন। ভাল করে মেশান। এ বার সিদ্ধ করা মাটনের খণ্ডগুলো দিন। গোলাপ জল, কেওড়া জল মিঠা আতর ছড়িয়ে দিয়ে খুন্তি দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। এ বার ডেচকি বা হাঁড়ি আঁচে বসিয়ে আঁচ বাড়িয়ে ফোটান। ঝোল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন। এ বার ওর মধ্যে বাকি অর্ধেক ঘি ও কাবাবচিনি ছড়িয়ে ২-৩ মিনিট রান্না করুন। হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে গোটা শুকনো লঙ্কা ও জাফরান ছড়িয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। গরম পরিবেশন করুন রুটি বা পরোটা সহযোগে।

মাটন পাসিন্দা কাবাব

উপকরণ: বোনলেস মাটন ১ কেজি, মোট ১৭ পিস করবেন। প্রতিটি খণ্ড চপার দিয়ে বাড়ি মেরে ফ্ল্যাট করে নিতে হবে। কাঁচা পেঁপে বাটা ৬০ গ্রাম, আদা, রসুনবাটা দুটো মিলিয়ে ১০০ গ্রাম, টক দই ৫০ গ্রাম, নুন আন্দাজ মতো, তাওয়ায় শেঁকা গোলমরিচ, দারচিনি, বড় এলাচ, জয়িত্রী, জায়ফলের গুঁড়োর মিশ্রণ দেড় টেবিল চামচ, কাজুবাটা ৫০ গ্রাম, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ৪ চা চামচ, জলে গোলা জাফরান ২ চা চামচ।

প্রণালী: একটি পাত্রে মাটনের খণ্ডগুলো রেখে তার মধ্যে কাঁচা পেঁপে বাটা, আদা, রসুন বাটা, টকদই, নুন, তাওয়ায় শেঁকা গরম মশলার গুঁড়ো, কাজুবাটা, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, জলে গোলা জাফরান দিয়ে হাত দিয়ে ঘষে ঘষে ভাল করে মাংসের খণ্ডগুলোর গায়ে ভাল করে মাখিয়ে নিন। মিশ্রণ মাখানো মাটনের খণ্ডগুলো ঘণ্টাখানেক আলাদা করে রেখে দিন। ঘণ্টাখানেক বাদে বড় ডেচকি আঁচে বসিয়ে আন্দাজ মতন ঘি গরম করে তার মধ্যে আন্দাজ মতন ঠান্ডা জল ঢেলে দিন। জল ফুটে উঠলে ওর মধ্যে ম্যারিনেট করা মিশ্রণ মাখানো মাংসের খণ্ডগুলো দিয়ে নিভু আঁচে রান্না করুন। মাঝেমধ্যে খুন্তি দিয়ে মাংসের খণ্ডগুলো উল্টে পাল্টে দিন। মাংস সম্পূর্ণ পেকে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। রুটি বা পরোটা সহযোগে পরিবেশন করুন।

ছবি: অনুষ্টুপ ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE