Advertisement
E-Paper

মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে হিমশিম বিশ্বজিৎ

এ যেন পরীক্ষার হলে ঢুকে আবিষ্কার করা যে সঙ্গে পেন-পেনসিল নেই! সিনেমার পর্দায় নায়ক হিসাবে বহু বাধাবিপত্তির সামনে পড়েছেন। কিন্তু প্রবীণ বয়সে ভোটে দাঁড়াতে গিয়ে এ হেন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি বিশ্বজিৎ। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তিনি। আজই ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০৫:৪০

এ যেন পরীক্ষার হলে ঢুকে আবিষ্কার করা যে সঙ্গে পেন-পেনসিল নেই!

সিনেমার পর্দায় নায়ক হিসাবে বহু বাধাবিপত্তির সামনে পড়েছেন। কিন্তু প্রবীণ বয়সে ভোটে দাঁড়াতে গিয়ে এ হেন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি বিশ্বজিৎ। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী তিনি। আজই ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে অফিসে পৌঁছে দেখলেন, সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। সারা হয়নি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো কিছু জরুরি কাজও।

শেষ লগ্নে দৌড়ঝাঁপ করে অ্যাকাউন্ট খুলে, কাগজপত্র আনিয়ে কোনও মতে মনোনয়ন জমা দেওয়া গেল বটে! কিন্তু ভোটের ময়দান যে কঠিন ঠাঁই, সেটা প্রথম পর্বেই ঘাম ছুটিয়ে বুঝতে হল প্রাক্তন নায়ককে। বিশ্বজিৎ বললেন, “সব কিছুর পর লড়তে যে পারছি, এটাই ভাল লাগছে। আশা করছি ভালই লড়াই হবে।”

প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে সাহায্য করা, জরুরি কাগজপত্র আগে থেকে জোগাড় করে রাখার ব্যাপারে দলীয় সংগঠনের তরফে এই শিথিলতা হল কেন? রাজনীতির জগতে পোড় খাওয়া অনেকেরই বক্তব্য হল প্রার্থী নিজে, বিশেষত তিনি যদি নতুন প্রার্থী হন, সব নিয়মকানুন জেনেবুঝে প্রস্তুত হতে পারবেন, এমনটা নয়।

এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ দলীয় কর্মীদেরই দায়িত্ব থাকে সব কিছু গুছিয়ে রাখা। ভোটযুদ্ধে বিশ্বজিতের প্রধান দুই সঙ্গী কবীর এবং মহম্মদ আসরাফুদ্দিন অবশ্য বিষয়টিকে বড় করে দেখতে নারাজ। কবীর বলছেন, “আমাদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকায় সামান্য অসুবিধা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।”

কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থাকে যে, অনভিজ্ঞ কর্মীদের উপরে সবটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কেন? রাজনীতির ঝড়ঝাপটা সামলে আসা অনেকেই মনে করছেন, এর মধ্যে দিয়ে দলের তরফে পারদর্শিতা এবং পরিকল্পনার অভাবই প্রকাশ পেয়েছে। ঘটনা হল, অণ্ণার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরই তৃণমূলের প্রথম সারির সব নেতা-সাংসদ ফিরে গিয়েছেন রাজ্যে। তাঁরা ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রচারে। তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস, ১৮১ সাউথ অ্যাভিনিউয়ে অভিজ্ঞ নেতার এখন খুবই অভাব। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য কবীরের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যা নির্দেশ দেওয়ার দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ হচ্ছে না, তা আজকের ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল।

গত চার দিন ধরেই প্রবীণ নায়ক মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, মুম্বই থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নয়াদিল্লিতে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিসে এসে পৌঁছায়নি বলেই বিলম্ব হচ্ছে। মুকুলবাবুও গত কাল কবীরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অযথা তাড়াহুড়ো না করে, ভাল করে কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে দেখেশুনে শনিবার অর্থাৎ শেষ দিনই যেন মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়।

কিন্তু এত সময় নেওয়ার পরেও মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে আজ কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হল বিশ্বজিৎকে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, সকাল সাড়ে দশটার সময় আসবেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ এলেন বেলা সাড়ে বারোটার পর। এসেই গেরো!

নির্বাচন কমিশনের নিয়ম হল, যে নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী লড়বেন, সেখানে তাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজন। সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই নির্বাচনের খরচপত্র করতে হবে। দেখা গেল বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না বিশ্বজিৎ এবং তাঁর টিম। ফলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের পরামর্শে পড়ি কি মরি করে ছুটে নিকটবর্তী নৈনিতাল ব্যাঙ্ক-এ (বিকাশমার্গ) পৌঁছলেন ওঁরা। অনুরোধ-উপরোধ করে দ্রুত অ্যাকাউন্ট খোলা হল। তার পর এসে সেই অ্যাকাউন্টের কাগজ জমা পড়ল।

কিন্তু তাতেও বা শান্তি কই! এ বার আটকাল ভোটার কার্ড-এ। নিয়ম অনুযায়ী কোনও প্রার্থী যে নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে লড়ছেন, তিনি নিজে যদি সেখানকার ভোটার না হন, তা হলে একটি চিঠির প্রয়োজন। প্রার্থী নিজে যেখানকার ভোটার, সেখানকার রিটার্নিং অফিসার ওই চিঠি লিখে দেবেন! দেখা গেল, বিশ্বজিতের ব্যাগে সেই চিঠিও নেই! ও দিকে ঘড়ির কাঁটা ৩টে ছুঁইছুঁই। অর্থাৎ মনোনয়ন

দাখিলের শেষ ঘণ্টা আসন্ন। বাইরে অপেক্ষমান তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে হতাশা, অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। শেষ পর্যন্ত মুম্বইতে ফোন করে অনেক অনুরোধ করার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে এল সেই কাগজ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন বিশ্বজিৎ এবং তাঁর সঙ্গী সমর্থকরা।

মনোনয়ন কি মুখের কথা!

loksabha vote biswajit mumbai nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy