Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

যোজনা কমিশন তুলেই রাজ্যকে বাড়তি ক্ষমতা

তখনও প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হননি নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লিতে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে আসতেন তিনি। তাঁর বক্তৃতায় একটা দাবিই বারবার উঠে আসত। তা হল, রাজ্যের হাতে আরও আর্থিক ক্ষমতা। রাজ্যকে উন্নয়নে শরিক করা। প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেই পথেই পা বাড়ালেন নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

তখনও প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হননি নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লিতে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে আসতেন তিনি। তাঁর বক্তৃতায় একটা দাবিই বারবার উঠে আসত। তা হল, রাজ্যের হাতে আরও আর্থিক ক্ষমতা। রাজ্যকে উন্নয়নে শরিক করা।

প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেই পথেই পা বাড়ালেন নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতা দিবসে যোজনা কমিশনের অবসান ঘোষণা করে মোদী জানিয়েছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে রাজ্যগুলিকেও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। যার অর্থ, আগামী দিনে টাকা খরচের ক্ষেত্রে আর যোজনা কমিশনের বেঁধে দেওয়া সীমায় আটকে থাকতে হবে না। এই ব্যাপারে রাজ্যগুলির হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সমীকরণ বদলে যাবে। দিল্লি থেকে সকলের জন্য উন্নয়নের একই নকশা তৈরি করে না দিয়ে, এক এক এলাকার চাহিদা অনুযায়ী এক এক রকম উন্নয়নের নকশা তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোজনা কমিশনের ‘দাদাগিরি’-র অভিযোগ তুলতেন তিনি। যোজনা কমিশন বিলুপ্ত করে দিয়ে সেই ‘দাদাগিরি’ এ বার বন্ধ করে দিলেন।

যোজনা কমিশনের বদলে নতুন যে প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে, তার আকার কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে যোজনা কমিশনের কর্তাদের বৈঠকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা হল, নতুন প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকারের স্থায়ী প্রতিনিধি থাকবেন। সেখানে রাজ্যগুলির সমস্যা সরাসরি উঠে আসবে। এত দিন উন্নয়নের অর্থ চাইতে প্রতি বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দরবারে আসতে হতো। তার আগে যোজনা কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে রাজ্যের আমলাদের বৈঠকে ঠিক হতো, উন্নয়নে কোন রাজ্য কত টাকা খরচ করবে, কোন খাতে কতটা খরচ হবে সব। মনে করা হচ্ছে, নতুন ব্যবস্থায় রাজ্যগুলি কোথায় অর্থ খরচ করতে চায়, তা রাজ্যগুলিকেই ঠিক করতে দেওয়া হবে। যোজনা কমিশনের বদলে নতুন প্রতিষ্ঠান শুধু উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণের কাজটি দেখবে। মোদীর বক্তব্য, বছরে একবার যোজনা কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের বৈঠক করে কোনও সমস্যার সমাধান করা যায় না। নতুন প্রতিষ্ঠানে পাকাপাকি ভাবে রাজ্যের প্রতিনিধি থাকবেন। সেখানে রাজ্যের সমস্যাগুলি নিয়ে নিয়মিত ভাবে আলোচনা হবে।

মোদী বারবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা মিলে দেশ চালাতে পারেন না। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। মনে করা হচ্ছে, অর্থ বরাদ্দের বদলে নতুন প্রতিষ্ঠানটির কাজ হবে মূলত উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জোগান দেওয়া এবং উন্নয়নমুখী প্রকল্পের রূপায়ণের কাজে তদারকি করা। সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন বাবদ অর্থ বরাদ্দের দায়িত্ব চলে যাবে অর্থ মন্ত্রকের হাতে।

২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে ৫.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বার যোজনা কমিশনের বদলে বরাদ্দ বণ্টনের দায়িত্ব পাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য বি কে চতুর্বেদী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছেন। এত দিন যোজনা কমিশনের কাছে রাজ্যগুলি নিজেদের ক্ষোভ জানাতে পারত। নতুন ব্যবস্থায় কী ভাবে তা হবে, স্পষ্ট নয়। আমি নিশ্চিত, সরকার এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।”

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্যগুলির দাবিদাওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন রাজ্যগুলির কথা শোনার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নির্দিষ্ট এক জন আমলাকে নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি শুধু মাত্র রাজ্যগুলির সমস্যা ও দাবিদাওয়া খতিয়ে দেখবেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্যের আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোন সমস্যার সমাধানের কাজ কতখানি এগোলো, তার পর্যালোচনা করা হবে। নির্বাচনী প্রচারে মোদী অভিযোগ তুলেছিলেন, মনমোহন সরকার বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্যগুলিকে আর সেই সমস্যার মুখে ফেলতে চান না মোদী।

সরকারি সূত্রের বক্তব্য, নতুন ব্যবস্থায় রাজ্যগুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় সাহায্য বরাদ্দের কাজটি অর্থ কমিশনও করতে পারে। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলির মধ্যে অর্থ বরাদ্দের কাজ সরাসরি অর্থ মন্ত্রকই করতে পারে। তবে এই সব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি এখনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

planning commission new delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE