বদায়ূঁ ধর্ষণ কাণ্ডে ধৃত পাঁচ অভিযুক্ত। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে দুই পুলিশকর্মীও (ডান দিকে সাধারণ পোশাকে)। ছবি: পিটিআই
সাত দিনে ছ’টা গণধর্ষণ! ঠেকানো দূরে থাক, অভিযোগ উঠছে, দুষ্কৃতীদের আড়াল করছে পুলিশই!
সাংবাদিক বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্নে ঝাঁঝিয়ে উঠছেন মুখ্যমন্ত্রী! বিক্ষোভকারীদের সামলাতে জলকামান ব্যবহার করছে তাঁর পুলিশ!
বাকি রইলেন সমাজের গণ্যমান্যরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি। এত হইচইয়ের মধ্যেও আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন তাঁরা। আজ একটি টিভি চ্যানেলকে ধর্ষিতার পরিবারের এক সদস্য বলেন, “ওরা বলেছে, মিডিয়া চলে গেলে মহাভারত বানিয়ে ছাড়ব!”
ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশ। আর একের পর এক এমন ঘটনায়, প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার অখিলেশ যাদবের সরকার। বদায়ূঁর কাটরা গ্রামে দুই বোনকে গণধর্ষণ করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসার পরই রিপোর্ট তলব করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ সরাসরি সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে চিঠি এল তাঁর দফতর থেকে। কড়া আইন থাকতেও তা প্রয়োগ না করা নিয়ে প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করেছেন রাজনাথ। দিল্লি যে বিষয়টি হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না, আজ সে বার্তা দিয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধীও। তিনি বলেন, “এই বীভৎস ঘটনা যে সরকার আটকাতে পারে না, তাদের চলে যাওয়াই দরকার।”
বদায়ূঁর ঘটনায় কেন্দ্রের মতোই সরব রাজ্য বিজেপিও। আজ লখনউয়ে বিজেপি মহিলা মোর্চার কয়েকশো সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের দিকে মিছিল করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথে পুলিশ মিছিল আটকে দিলে এক প্রস্ত ধস্তাধস্তিও হয়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে জলকামান ছোড়ে পুলিশ। ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা রাস্তাতেই ধর্নাতেই বসে পড়েন। পরে মহিলা সংগঠনের সভানেত্রী কমলাবতী সিংহ ও ছয় মহিলা সাংসদ-সহ ১২ জনের এক প্রতিনিধি দল দেখা করেন প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি (স্বরাষ্ট্র)-র সঙ্গে।
রাতের দিকে খবর আসে, রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি অনিলকুমার গুপ্তকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব জাভেদ উসমানিকে সরানো হয়েছিল গত পরশু। কাল পদ গিয়েছিল বদায়ূঁর এক শ্রম অফিসারের। বিজেপি নেত্রীরা দেখা করে যাওয়ার পরই এ ভাবে তড়িঘড়ি কেন প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিকে সরানো হল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
জোড়া গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছিল আগেই। শনিবার থেকে ধর্ষিতা দুই বোনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রীতিমতো লাইন পড়ে গিয়েছে নেতা-নেত্রীদের। সে দিন কাটরা গ্রামে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। রবিবার যান মায়াবতী। এর পর আর দেরি করতে চায়নি বিজেপি শিবির। আজ ধর্ষিতাদের বাড়ি যান সপুত্র রামবিলাস পাসোয়ান। মোদী সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী রামবিলাসের কটাক্ষ, “গ্রামে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের কোনও মন্ত্রীর আসার সময় হয়নি! হয় গ্রামবাসীদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই তাঁদের বা অপরাধীদের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত রয়েছে!” বদায়ূঁর অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এক দিকে দল, অন্য দিকে কেন্দ্র মোদী সরকার আজ সারা দিন ধরেই রাজনৈতিক চাপ বজায় রেখেছে অখিলেশ প্রশাসনের উপর। প্রথম আক্রমণ যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠি হয়, তা হলে দ্বিতীয়টি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজিকে জাতীয় মহিলা কমিশনের তলব। কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মার মন্তব্য, “উত্তরপ্রদেশে গণধর্ষণ যেন থামছেই না। পুলিশ কী করছে!”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানান, “তফসিলি জাতি বা উপজাতির কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশেষ ধারায় অভিযোগ করার নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি দিয়ে ওই বিশেষ আইনের ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পরামর্শ দিয়েছে।” যদিও রাজ্যের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে তফসিলি জাতি-উপজাতি আইনের যে ধারা ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, তা আদৌ প্রযোজ্য নয়।
আজ লখনউয়ে কেন্দ্রের চিঠি পৌঁছনোর পরে রাজ্যপাল বি এল জোশীর সঙ্গে দেখা করতে যান অখিলেশ। যদিও সরকারের মুখ বাঁচাতে সমাজবাদী পার্টি নেতা গৌরব ভাটিয়া বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে পুলিশ অফিসারেরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও গোটা বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে তৎপর সব রাজনৈতিক দল।”
উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের অস্বস্তি এ দিন আরও বাড়িয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি বিবৃতি। এ দেশে গণধর্ষণ যে হারে বাড়ছে তার সমালোচনা করে মুখ খুলেছেন ভারতে রাষ্ট্রপুঞ্জের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটর লিসে গ্রান্দে। তাঁর কথায়, এটা শুধু মেয়েদের নয়, মানবাধিকারের প্রশ্ন। বদায়ূঁর পরিবার এবং অন্য নির্যাতিতারা যাতে বিচার পান, সেই দাবিও করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy