Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শৌচাগার পেয়ে স্বামীর ঘরে ফিরলেন পারোদেবী

বৌ গোসা করে চলে গেলেন বাপের বাড়ি। বিয়েও প্রায় ভেঙে যায় আর কী! শেষমেশ অবশ্য মান ভাঙল বৌয়ের। ঘরের বৌ ফিরল ঘরে। হাসি বরের মুখে। কী ভাবে? নেপথ্যের কারিগরটি আর কেউ নয়, একটি শৌচাগার। পটনার কাগজবিক্রেতা অলখের বৌ পারোর মন ভিজেছে তাতেই। গল্পটা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে পাঁচটা বছর। ২০০৯ সালে। অলখ নিরঞ্জনের সঙ্গে বিয়ে হয় পটনার বাসিন্দা পারোদেবীর। সমস্যার শুরু প্রায় তখন থেকেই।

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

স্বপন সরকার
পটনা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:৫৬
Share: Save:

বৌ গোসা করে চলে গেলেন বাপের বাড়ি। বিয়েও প্রায় ভেঙে যায় আর কী! শেষমেশ অবশ্য মান ভাঙল বৌয়ের। ঘরের বৌ ফিরল ঘরে। হাসি বরের মুখে। কী ভাবে?

নেপথ্যের কারিগরটি আর কেউ নয়, একটি শৌচাগার। পটনার কাগজবিক্রেতা অলখের বৌ পারোর মন ভিজেছে তাতেই।

গল্পটা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে পাঁচটা বছর। ২০০৯ সালে। অলখ নিরঞ্জনের সঙ্গে বিয়ে হয় পটনার বাসিন্দা পারোদেবীর। সমস্যার শুরু প্রায় তখন থেকেই। পটনার কাছে স্বদেশিপুর গ্রামে অলখের বাড়িতে কোনও শৌচাগার ছিল না। প্রকৃতির ডাকে সবাই ছুটতেন মাঠে-ঘাটে। এই নিয়ে স্বামীর সঙ্গে অশান্তি লেগেই লাগত পারোদেবীর। সন্ধে না নামলে প্রাকৃতিক কাজে বাড়ির বাইরে বেরোতে লজ্জা লাগত তাঁর।

অভাবের সংসার। শৌচাগার তৈরির টাকা জোগাড় করতে পারেননি অলখও। দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে তাতেই। রেগেমেগে সোজা বাপের বাড়ি চলে যান পারোদেবী। সঙ্গে নিয়ে যান দু’বছরের ছেলেকেও। স্বামীকে বলে যান, ‘হয় শৌচাগার তৈরি কর, নয়তো ভুলে যাও আমায়।’ সেটা ২০১২ সালের কথা।

এর পর পার হয়েছে আরও দু’টো বছর। অলখের কাছ থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন পারোদেবী। এ ব্যাপারে সাহায্য চেয়ে ‘মহিলা হেল্প-লাইন’-এ ফোনও করেন। খুলে বলেন সব কথা। সব শুনে তারা হাঁ! শুধু একটা শৌচাগারের জন্য এক দম্পতির বিয়ে ভাঙতে চলেছে? খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন সুলভ শৌচালয় কর্তৃপক্ষ। পারো দেবীর শ্বশুরবাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য দেওয়া হয় অর্থ।

‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিস অর্গানাইজেশন’ নামে এই সংস্থার মুখপাত্র মদন ঝা বলেন, “পারোদেবীর বাড়িতে ১ লক্ষ টাকা খরচ করে শৌচাগার তৈরি হয়েছে। ‘ঘর ঘর শৌচালয়’ আন্দোলনে তাঁর এই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্।” এ কারণেই তাঁকে দেড় লক্ষ টাকা পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়িরও বেশ কিছু কাজ বাকি ছিল। তার জন্য আরও তিন লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে পারো দেবীকে। সংস্থার দাবি, সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ নয়, তাঁদের নিজস্ব তহবিল থেকেই এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। রাতারাতি দেশের ‘ঘর ঘর শৌচালয়’ আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠে খুশি পারোদেবীও।

ছেলেকে নিয়ে স্বামীর কাছে ফিরতে পেরে আনন্দ আর ধরে না তাঁর। পারোদেবীর কথায়, “বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে শৌচাগার তৈরি করতে বলতাম। সূর্য না ডুবলে যেতে পারতাম না। কী যে সমস্যা!” স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে এখন ডগমগ অলখও। বললেন, “বৌয়ের খুব অসুবিধা হচ্ছে বুঝতাম। কিন্তু শৌচালয় তৈরির টাকা আমার কাছে ছিল না। বৌকে বলেছিলাম। কিন্তু ও জেদ ধরল। ঘর ছেড়ে চলে গেল।”

শৌচাগার নেই বলে স্বামীর ঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর বদলে অন্য কেউ এই ভাবে সাহায্য করবে, তা কখনও ভাবেননি পারোদেবী। তিনি বলেন, “কিছু টাকা ছেলের পড়াশোনার জন্য বাঁচিয়ে রাখব। বাকিটা দিয়ে বাড়ির কাজ শেষ করব।” আর অলখ বলছেন, “স্ত্রী, ছেলেকে তো পেলামই। সঙ্গে শৌচালয়ও! এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swapan sarkar alakh niranjan parodebi toilet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE