Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্য-বরাদ্দে কোপ, জেটলির সমালোচনা

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আরও একটি বাজেট আসন্ন। তার আগে আর্থিক ঘাটতিকে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে গিয়ে এক প্রকার নিঃশব্দেই স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু তা জানাজানি হতেই এ বার সমালোচনার মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী তথা মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:০১

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আরও একটি বাজেট আসন্ন। তার আগে আর্থিক ঘাটতিকে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে গিয়ে এক প্রকার নিঃশব্দেই স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু তা জানাজানি হতেই এ বার সমালোচনার মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী তথা মোদী সরকার।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র বলছে, কদিন আগে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব লব বর্মার একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অর্থ মন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজেটে ঘোষিত বরাদ্দ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ছাঁটা হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব আপত্তি করলেও তা মানতে রাজি হননি অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। চলতি আর্থিক বছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে প্রায় ১৭% অর্থই কেটে নেওয়া হয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রক নয়, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বরাদ্দ ছাঁটার ব্যাপারেও এর মধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক।

যদিও এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রকের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে আর্থিক ঘাটতির হার ৪.১ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল মোদী সরকার। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাঁধতে গিয়ে এখন প্রায় লড়াই করতে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রককে। সেই কারণেই কোপ পড়েছে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের উপর।

কিন্তু মুশকিল হল, অরুণ জেটলির ঘাটতি সামলানোর দায় থাকলেও বিরোধীদের তা নেই। তাই বরাদ্দ ছাঁটার খবর ফাঁস হতেই আজ তীব্র সমালোচনায় নেমেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী ভাবছেন, মানুষ কোনও খবর রাখেন না, কিছু বোঝেন না। তাই সহজে বেকুব বানানো যাবে তাঁদের। লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে বিজেপি ঘোষণা করেছিল, তাদের লক্ষ্য হল স্বাস্থ্য খাতে মানুষের খরচ কমানো। সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতায় এসেই তারা ভোল পাল্টাতে শুরু করেছে!”

ঘটনাচক্রে ২০১৫-১৬ থেকেই থেকেই সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্প শুরু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রেখেছে সরকার। যে প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ ও স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পাবে। প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে আগামী চার বছরে প্রয়োজন হবে ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু সেই প্রকল্প শুরুর আগের বছরই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছাঁটার ফলে প্রশ্ন উঠছে, সরকার আগামী দিনে কী ভাবে ওই বিপুল অর্থ জোটাবে?

স্বাস্থ্য খাতে এ দেশের বাজেট বরাদ্দ বরাবরই উন্নত দেশগুলির তুলনায় অনেক কম। গড় জাতীয় উৎপাদনের কমবেশি ১ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয় ভারতে। চিনে এই হার ৩.১ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড় জাতীয় উৎপাদনের ৮.৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচ করা হয়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ আজ এ ব্যাপারে বলেন, “এক ধাক্কায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর অসুবিধে রয়েছে সেটা বোঝা যায়। তবে সন্দেহ নেই এক ধাক্কায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছাঁটা হলে পরিষেবা ব্যাহত হবে। তা ছাড়া এ-ও শোনা যাচ্ছে, এড্স প্রতিরোধ প্রকল্পেও বরাদ্দ ৩০ শতাংশ ছাঁটা হয়েছে।”

মজার বিষয় হল, অতীতে একই পদক্ষেপ করেছিলেন ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। আর্থিক ঘাটতি কমাতে তিনিও সবার আগে সামাজিক প্রকল্পগুলির বরাদ্দ ছাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা নিয়ে মন্ত্রিসভায় প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তৎকালীন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি এ ব্যাপারে মনমোহন-সনিয়ার হস্তক্ষেপও দাবি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও পিছু হটতে হয় চিদম্বরমকে।

আজ সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিলে অভিষেক বলেন, “অতীতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার ও মন্ত্রিসভা চলত। এখন এক ব্যক্তির সরকার চলছে। সেখানে অন্য মন্ত্রীদের মতের কোনও গুরুত্ব নেই, তাঁদের মত প্রকাশের সাহসও নেই।”

budget arun jaitley health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy