Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সনিয়াকেও তোয়াক্কা নয়, মাকেনের মুণ্ডপাতে শীলা

সদ্য দিল্লিতে ভরাডুবির পরে আজ এক রকম ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে কংগ্রেসে শুরু হয়ে গেল দোষারোপ-পর্ব! পরাজয়ের দায় রাহুল গাঁধীর উপরে চাপিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কংগ্রেসের অন্দরে চাপানউতোর চলছিল। কিন্তু আজ দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত যে ভাবে একের পর এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে সাক্ষাৎকার দিয়ে দিল্লি ভোটে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অজয় মাকেনের মুণ্ডপাত করেছেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট। এ ধরনের কাজে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী অসন্তুষ্ট হতে পারেন জেনেও দলের নেতা-নেত্রীরা আর তাতে পরোয়া করছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩২
Share: Save:

সদ্য দিল্লিতে ভরাডুবির পরে আজ এক রকম ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে কংগ্রেসে শুরু হয়ে গেল দোষারোপ-পর্ব! পরাজয়ের দায় রাহুল গাঁধীর উপরে চাপিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কংগ্রেসের অন্দরে চাপানউতোর চলছিল। কিন্তু আজ দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত যে ভাবে

একের পর এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে সাক্ষাৎকার দিয়ে দিল্লি ভোটে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অজয় মাকেনের মুণ্ডপাত করেছেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট। এ ধরনের কাজে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী অসন্তুষ্ট হতে পারেন জেনেও দলের নেতা-নেত্রীরা আর তাতে পরোয়া করছেন না।

শীলা আজ অজয় মাকেনের উদ্দেশে বলেছেন, “ওঁকে দেখে আমার দয়া হচ্ছে!” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যে মাকেন খেদ জানিয়ে বলেছেন, এই জঘন্য রাজনীতি নিয়ে কিছু মন্তব্য করাও অপমানজনক। তবে সনিয়া গাঁধীর কাছে নালিশ জানাতে ভোলেননি তিনি। তার আগে আজ দিল্লির দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পি সি চাকোর সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন মাকেন। সনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পরে চাকো বলেছেন, “এই প্রকাশ্য চাপানউতোরে কংগ্রেস সভানেত্রী খুবই অসন্তুষ্ট।”

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সনিয়া যে অসন্তুষ্ট হবেন, তা কিন্তু শীলাও জানতেন। সেটাই প্রত্যাশিত। তা সত্ত্বেও তিনি পিছু হটেননি। তাই বিশ্লেষকদের মনে হয়েছে, শীলার আচরণে গাঁধী পরিবারের কর্তৃত্ব শিথিল হওয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট হচ্ছে, সেটাই তাৎপর্যপূর্ণ।

যদিও গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের মতে, সনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বের বিষয়টি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। দিল্লির রাজনীতিতে শীলা দীক্ষিত ও অজয় মাকেনের টানাপড়েন নতুন নয়। এ বারের নির্বাচনে অজয় মাকেনকে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করার পরে সেই টানাপড়েন আরও তীব্র হয়। শীলা-সরকারের বিরুদ্ধে কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সেই বিষয়গুলি যাতে এ বারের ভোটে ছায়া না ফেলে, সে জন্য মাকেন শুরুতেই বলেছিলেন, “শীলা যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের উদ্দেশ্য হল দিল্লিতে দুর্নীতিমুক্ত শাসন কায়েম করা।”

আজ সেই প্রসঙ্গ তুলেই শীলা বলেন, “গোটা দুনিয়া জানে গত ১৫ বছরে দিল্লিতে কী পরিমাণ উন্নয়নের কাজ হয়েছে। তার সব কৃতিত্বই ছিল কংগ্রেস সরকারের। কিন্তু ভোটের প্রচারে এক বারও মাকেন সে কথা বলেননি। ওঁকে দেখে আমার দয়া হচ্ছে। কারণ, একেবারে ছন্নছাড়া প্রচার হয়েছে এ বার।” এখানেই থেমে থাকেননি শীলা। তাঁর কথায়, “দলের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মাকেন। তিনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারেননি। আমাকেও ডাকা হয়নি। বিজেপি-আপ যখন আক্রমণাত্মক হয়ে প্রচার করছিল, তখন কংগ্রেসের প্রচার ছিল একেবারেই মিনমিনে।”

তবে রাহুলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি শীলা। বরং বলেছেন, “রাহুলের দিকে আঙুল তোলা ঠিক হবে না। তা হলে তো মোদী-অমিত শাহ-ও বিজেপি-র হারের জন্য দায়ী!”

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার মতে, সব দলেই বিবদমান শক্তি থাকে। বিজেপিতেও রয়েছে। কিন্তু মোদী-অমিত শাহের কৃতিত্ব হল, সেই টানাপড়েন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলেও বিজয় গয়ালরা এখনও প্রকাশ্যে টুঁ শব্দ করেননি। কিন্তু কংগ্রেসে সনিয়া-বা রাহুল সেই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেননি।তাই একদিকে দলের নেতা-নেত্রীদের প্রকাশ্য চাপানউতোর নিয়ে সনিয়া-রাহুল অসন্তোষ জানাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতা-নেত্রীরা। শীলা-মাকেন বা পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ ও প্রদেশ সভাপতি প্রতাপ সিংহ বাজওয়া তেমনই উদাহরণ। ফলে গাঁধী পরিবার এখনই মুঠো শক্ত করতে না পারলে আগামী দিনে এই ধরনের খেয়োখেয়ি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের সেই শীর্ষ নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ajay maken sonia gandhi congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE