Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
astrazeneca vaccine data

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে আতঙ্ক নয়, বলল পুণের সেরাম ইন্সটিটিউট

ইউরোপ ও আমেরিকায় শীঘ্রই অক্সফোর্ড টিকা অনুমোদন পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত কোভিড টিকা। -ফাইল ছবি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত কোভিড টিকা। -ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ১০:৫৪
Share: Save:

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত কোভিড টিকার উৎপাদনগত ত্রুটির কথা আগেই স্বীকার করেছিল প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটেনে সেই টিকার ট্রায়ালের তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তবে, এই টিকা তৈরির ভারতীয় সহযোগী সংস্থা সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) দাবি করল, ‘এই টিকা নিরাপদ এবং কার্যকর’। ভারতে সব নিয়ম মেনে ট্রয়াল হচ্ছে বলেও জানাল ওই সংস্থা।

পুণের ওই সংস্থা বলেছে, ‘‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড টিকা নিরাপদ। এই টিকা ন্যুনতমভাবে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে নানা বয়সের মানুষের মধ্যে এই টিকা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই পরীক্ষার ফল থেকে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।’’

প্রসঙ্গত, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে টিকার দু’টি ডোজ প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উৎপাদনগত ত্রুটি ঠিক কোথায় হয়েছে, ওই সংস্থার তরফে তা কেন স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি, তা নিয়েও ধোঁয়াশা। এর ফলে ইউরোপ ও আমেরিকায় শীঘ্রই অক্সফোর্ড টিকা অনুমোদন পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে ওই সংস্থা বলেছে, শুধু নেতিবাচক খবর নয়, তাদের টিকার ইতিবাচক সংবাদও পরিবেশন করা জরুরি। সেই সঙ্গে সংস্থার এক কর্তা জানান, টিকার যে ত্রুটি সামনে এসেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার তরফে সম্প্রতি জানানো হয়, ব্রিটেনে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে তাদের বানানো টিকার দু’টি ডোজ দেওয়া হয়েছে। কেন, তা জানানো হয়নি অবশ্য। অক্সফোর্ড টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাটি এও জানায়, ট্রায়ালে টিকার একটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে ২ হাজার ৭৪১ জনের উপর। তাতে দেখা গিয়েছে টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। ট্রায়ালে টিকার দ্বিতীয় ডোজটি প্রয়োগ করা হয়েছে ৪ গুণ বেশি মানুষের উপর। ৮ হাজার ৮৯৫ জন। সে ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, টিকা ৬২ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু দু’টি ডোজ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যার তারতম্য কেন এতটা, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তরফে তা স্পষ্ট ভাবে কেন জানানো হল না, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন তুলছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: যাত্রিবাহী সব বাণিজ্যিক আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

আরও পড়ুন: সপ্তম পর্বের আনলকে নয়া করোনা নির্দেশিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

ব্রিটেনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার চালানো টিকার ট্রায়ালের পদ্ধতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের সংশয়ের আরও একটা কারণ রয়েছে। সেটা হল, যে ক্ষেত্রে টিকা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ২ হাজার ৭৪১ জনের উপর প্রথমে প্রয়োগ করা হয়েছে টিকার অর্ধেক ডোজ। তার এক মাস পর তাঁদের পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর যে ক্ষেত্রে টিকা ৬২ শতাংশ কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ৮ হাজার ৮৯৫ জনের উপর প্রথমেই প্রয়োগ করা হয়েছে টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ। তার এক মাস পর তাদের ফের পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ভাবে কোনও টিকার দু’টি ডোজ দেওয়া হয় না। যদিও বা দেওয়া হয়, তা হলে মানুষের উপর প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংখ্যার তারতম্য এতটা হয় না।

অক্সফোর্ড টিকা পরীক্ষা চলছে গবেষণাগারে। -ফাইল ছবি।

বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, কেন একটি ডোজ যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের রিপোর্টকে মাথায় রেখে টিকার চরম সাফল্য দাবি করা হল? কেন এক দল মানুষ একটি নির্দিষ্ট ডোজের টিকা পেলেন, আর অন্যদল তার থেকে বেশি ডোজের টিকা পেলেন?তাঁদের আরও প্রশ্ন, সম্পূর্ণ ডোজ যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের শরীরেই বা কেন কম কাজ করেছে টিকা?

কেন এটা করা হয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকার তরফে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, সে জন্যই এই টিকা ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়নি তা ৯০ শতাংশ কার্যকর হবে।

অ্যাস্ট্রোজেনেকার নন-অঙ্কোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এগজিকউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মেনি প্যাঙ্গালোস বলেছেন, ‘‘গবেষণাগারের কিছু ত্রুটিবিচ্যুতির জন্যই টিকার অর্ধেক ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছিল।’’ কিন্তু সেই ত্রুটি কোথায় হয়েছিল তা কেন স্পষ্ট ভাবে জানানো হল না, বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন তা নিয়েই। যদিও আমেরিকার সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-কে প্যাঙ্গালোস বলেছেন, ‘‘এই ত্রুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।’’

তড়িঘড়ি বাজারে আসা নিয়ে উদ্বেগের আরও কারণ, আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত এই টিকার অর্ধেক ডোজ নিয়েও ট্রায়াল চালিয়ে উঠতে পারেনি অ্যাস্ট্রোজেনেকা। সে ক্ষেত্রে কবে সেই ট্রায়াল হবে আর তার ভিত্তিতে কবে টিকার অনুমোদন দেবে আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’ তা নিয়েও সংশয় যথেষ্টই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

astrazeneca vaccine data oxford vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE