Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International News

আর আবর্জনা নয়, আর্জি আমেরিকার, ভয়ঙ্কর ট্র্যাফিক জ্যাম মহাকাশে!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র (‘এ-স্যাট’) ছুড়ে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের ঘোষণা করার পরেই তা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্বজুড়ে।

মহাকাশে আবর্জনা। - প্রতীকী ছবি

মহাকাশে আবর্জনা। - প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ১৫:২২
Share: Save:

আরও বেশি আবর্জনায় ভরিয়ে তুলবেন না মহাকাশ। পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে সাড়ে সর্বনাশ ডেকে আনবেন না মহাকাশের।

ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভারতের উপগ্রহ ধ্বংসের ঘোষণার পর গভীর উদ্বেগে সব দেশের কাছেই বৃহস্পতিবার এই অনুরোধ জানালেন অস্থায়ী মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শাহানান। ফ্লোরিডায় শাহানান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যেটা বলতে চাইছি, তা হল, আমরা সকলেই রয়েছি মহাকাশে। পৃথিবী রয়েছে এই মহাকাশেরই একটা দিকে। সেই মহাকাশটা যেন দুর্বিষহ হয়ে না ওঠে। মনে রাখবেন, মহাকাশটা এমন একটা জায়গা যেখানে আমরা ব্যবসা করতে পারি। মহাকাশ এমন একটা জায়গা যেখানে আমরা সকলেই স্বাধীন ভাবে নানা ধরনের গঠনমূলক কাজ করতে পারি।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র (‘এ-স্যাট’) ছুড়ে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের ঘোষণা করার পরেই তা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্বজুড়ে। উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব জুড়ে। সরাসরি ভারতের নামোল্লেখ না করে সমালোচনায় সরব হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সরব হয়েছে পেন্টাগন। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসাও।

মহাকাশ বাহুবল জাহিরের জায়গা নয়!

মার্কিন মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মহাকাশ বাহুবল জাহির করার জায়গা নয়। সেটা করতে গিয়ে অন্য দেশের বিপদ ডেকে আনাটাও ঠিক নয়।

ভারত ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর মহাকাশে পৃথিবীর কাছের কক্ষপথে (লো আর্থ অরবিট) ইতিমধ্যেই উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষের অন্তত ২৫০টি টুকরোটাকরার হদিশ পেয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড।

পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডেভ ইস্টবার্ন বলেছেন, ‘‘টুকরোটাকরাগুলি যত এগিয়ে আসবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দিকে, ততই তা দেখা যাবে আরও বেশি করে। তাই ওই সংখ্যা (২৫০টি) আরও বাড়তে পারে।’’

তবে ওই ঘটনায় পৃথিবীর ৩৭০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিমানবাহিনীর মহাকাশ কমান্ডের ভাইস কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডেভিড থম্পসন।

মহাকাশের আবর্জনা। ছবি- নাসা

মহাকাশ ধ্বংস হলে তাকে আগের অবস্থায় ফেরানো যাবে না: নাসা

নাসার চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন বলেছেন, ‘‘আমরা যদি মহাকাশকে এই ভাবে নষ্ট করে ফেলি, তা হলে কিন্তু তাকে আর আগেকার অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।’’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করার পর অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মহাকাশে থাকা অন্য বস্তুগুলিকে ধাক্কা মারে। তার ফলে, ধ্বংসাবশেষের একটি মেঘ তৈরি হয়। যেটা মহাকাশের অন্য বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে একের পর এক বিপত্তি হতে পারে।

১৯৫৭ থেকে ২০১৫: মহাকাশে যে ভাবে বেড়েছে আবর্জনা, দেখুন ভিডিয়ো

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বুধবারই জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ধ্বংসাবশেষ থেকে ঝুঁকির পরিমাণ খুব কম। এতে শুধু পৃথিবীর লো আর্থ অরবিটেই কিছু প্রভাব পড়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেগুলি পৃথিবীতে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিনের পর ভারতই চতুর্থ দেশ, যে এই ধরনের অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। ১৯৫৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম অ্যান্টি স্যাটেলাইট পরীক্ষা চালায়। কিন্তু তখন মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের ছিল নেহাৎই নগণ্য।

লাল বাতি জ্বলে গিয়েছে মহাকাশে!

এমনিতেই দুর্বিষহ ট্র্যাফিক জ্যামে হাঁসফাঁস করছে মহাকাশ। কোনও যান পাঠানোর আগে এ বার নাসা, ইসরো, ইএসএ-কে জেনে নিতে হবে, লাল বাতি ‘সবুজ’ হল কি না মহাকাশে!

বিভিন্ন দেশের পাঠানো ভুরি ভুরি মহাকাশযান এতটাই যানজট পাকিয়েছে এই সৌরমণ্ডল আর তার বাইরের ব্রহ্মাণ্ডে যে, বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোনও মূহুর্তে। ঘটতে পারে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একটি করে বড়সড় দুর্ঘটনা। ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে যে কোনও মহাকাশযান। আর তা ভেঙে পড়তে পারে আমাদের মাথায়!

আরও পড়ুন- বিশ বছরের রুটিন বদলে হঠাৎ পাগলাটে হয়ে উঠল গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ!​

আরও পড়ুন- মহাকাশ যুদ্ধ কি খুব দূরে​

এই মূহুর্তে মহাকাশযান, কৃত্রিম উপগ্রহ, টেলিস্কোপ মিলিয়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি পার্থিব জিনিসপত্র রয়েছে মহাকাশে। সংখ্যাটা আর পাঁচ বছরে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

দুঃসংবাদটি দিয়েছে বিশ্বের সবক’টি দেশের সবক’টি মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়ে ওঠা ‘ইন্টার-এজেন্সি স্পেস-ডেব্রি কো-অর্ডিনেশন কমিটি (আইএডিসি)’। কমিটি বলছে, এর উপর যদি ভারতের ‘এ-স্যাট’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মতো বোঝা বাড়তে থাকে, তা হলে বিপদ আরও বাড়বে।

মহাকাশে আবর্জনা: নাসার ভিডিয়ো

আইএডিসি-র এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক হিল্লোল গুপ্ত বলছেন, ‘‘আইএডিসি এ ব্যাপারে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায়।’’

আন্তর্জাতিক প্রস্তাবে কী কী বলা হয়েছে?

লরেল থেকে হিল্লোলবাবু জানিয়েছেন, ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আগামী দিনে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মহাকাশে। কোনও না কোনও ভাবে কোনও মহাকাশযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে মহাকাশে থাকা কোনও কৃত্রিম উপগ্রহের। ফলে, সেই কৃত্রিম উপগ্রহগুলি চুরচুর করে ভেঙে পড়তে পারে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটা করে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মহাকাশে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে সেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বা তার মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE