Advertisement
E-Paper

মন কেমন

নতুন কলেজে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে? পছন্দের ভবিষ্যৎ গড়তে বাধা দিচ্ছেন বাবা-মা? নাকি, প্রেমিকার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে চলতে পারছ না? টিনএজ-এর নানা সমস্যা। মন খুলে জানাও আমাদের। মুশকিল আসান করতে পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞরা। আজ উত্তর দিচ্ছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ জয়ন্তী বসুনতুন কলেজে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে? পছন্দের ভবিষ্যৎ গড়তে বাধা দিচ্ছেন বাবা-মা? নাকি, প্রেমিকার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে চলতে পারছ না? টিনএজ-এর নানা সমস্যা। মন খুলে জানাও আমাদের। মুশকিল আসান করতে পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞরা। আজ উত্তর দিচ্ছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ জয়ন্তী বসু

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৩

ক্লাস ইলেভেন-এ পড়ি। বাবা ব্যবসা করেন, মা হাউসওয়াইফ। গত তিন বছর ধরে লক্ষ করছি অনেক ছোট ছোট কথাতেই ভীষণ রেগে যাচ্ছি, চিৎকার করছি, বাড়ির লোকের গায়ে হাতও তুলছি। কখনও বাড়ির জিনিসও ভেঙে ফেলছি। নিজের মোবাইলটাই ভেঙে ফেলেছি। রাগ পড়ে গেলে খুব খারাপ লাগছে। দিন দিন রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। আর যখন দেখছি বন্ধুর থেকে আমার খারাপ রেজাল্ট হচ্ছে, তখন আরও রাগ বেড়ে যাচ্ছে। কেঁদেও ফেলছি মাঝেমধ্যে। আমি ভাল পড়াশোনা করে নিজের কেরিয়ার গড়তে চাই। কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছি না। এখন আর্টস নিয়ে পড়ছি। কিন্তু বেশি ক্ষণ পড়তে পারছি না। এক ঘণ্টার বেশি এক জায়গায় বসতেই পারছি না। আমার কি কোনও সমস্যা হচ্ছে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

একটু সমস্যা তোমার হচ্ছে বইকী। নিজের আবেগের ওপর তোমার নিয়ন্ত্রণ থাকছে না, এটাই সমস্যা। তুমি এখন ক্লাস ইলেভেন-এ পড়ো, মানে ধরে নিচ্ছি ক্লাস নাইন থেকে, অর্থাৎ চোদ্দো-পনেরো বছর বয়স থেকে, নিজের স্বভাবে এই বদল তুমি লক্ষ করেছ। এই বয়সটাই সংবেদনশীলতার সময়, নিজেকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার, নতুন সম্পর্কও তৈরি হওয়ার সময়। আর এই সময় আমাদের চারিদিকে অনেক কিছু ঘটতেও থাকে। তোমার চিঠিতে তুমি শুধু তোমার অসুবিধেগুলো বলেছ, কিন্তু কোনও ঘটনা তোমাকে বিচলিত করছে কি না, তা বলোনি। ফলে আমাকে উত্তর দিতে হচ্ছে দুটো আলাদা প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে। এই মানসিক বদলের পিছনে ব্যক্তিগত ঘটনা, বিশেষত সম্পর্কজনিত সমস্যা আছে ধরে নিয়ে এগোলে এক ভাবে আলোচনা করতে হবে। আবার তেমন কোনও বড় ঘটনা ছাড়াই আচমকা সমস্যা শুরু হয়েছে, এই সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি থেকেই শুরু করি। তোমার যে লক্ষণগুলো বলেছ, মনঃসংযোগের অভাব, রেজাল্ট খারাপ হওয়া, অল্পে বিরক্ত হওয়া বা রেগে যাওয়া, কেঁদে ফেলা, এগুলো কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে বিষাদরোগের লক্ষণ হতে পারে। তেমন কোনও বিশেষ ঘটনা ছাড়াই এই রোগ দেখা দিতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে বিষাদরোগের প্রথম লক্ষণ হয় বিষণ্ণতা। কিন্তু তোমার বয়সে এর প্রকাশ নানা রকমের হতে পারে। তুমি যা বলেছ তা ছাড়াও কয়েকটা সাধারণ লক্ষণ হল— সহজে ক্লান্ত লাগা, খিদের অভাব বা অতিরিক্ত খিদে, ঘুমের অভ্যাস বদল, বার বার শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়া, নিজেকে দোষী মনে হওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে ভাল না লাগা, একঘেয়ে লাগা ইত্যাদি। যেহেতু বিষণ্ণতা বললে মন খারাপের কথাই আমাদের মনে হয়, তাই শিশু কিশোরদের মধ্যে এই লক্ষণগুলি চিনতে তারা নিজেরাই ভুল করে, বড়রাও বুঝতে পারেন না। যদি মনে হয় যে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তোমার মধ্যে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে এবং ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তা হলে কোনও মনঃচিকিৎসক বা মনস্তাত্ত্বিকের সাহায্য নাও। তিনি তোমার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারবেন, ওষুধ বা কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজন আছে কি না। আর তোমাকে ঠিকমত পথনির্দেশ দিতে পারবেন।

আবার অনেক সময় পারিবারিক সম্পর্কের সমস্যা, বন্ধুদের সঙ্গে সমস্যা, বা কোনও বিশেষ ভালবাসার মানুষের সঙ্গে সমস্যা এই ধরনের লক্ষণের জন্ম দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু ছোটখাটো পারিবারিক সমস্যা আগের থেকেই ছিল, বয়ঃসন্ধিতে এসে সেই বিষয়গুলি নতুন ভাবে অসুবিধেজনক মনে হচ্ছে। এই সময় বাবা-মায়েরাও ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তার দুটো কারণ। প্রথমত, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির দুটি প্রধান পরীক্ষা এই সময় হয়; সন্তানের রেজাল্ট নিয়ে বাবা-মা চিন্তায় থাকেন। দ্বিতীয়ত, এই সময় ছেলেমেয়েদের নিজেদের বন্ধুবান্ধবের জগৎ তৈরি হয়, যা তাদের বাবা-মায়েদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই নিয়েও তাঁদের দুশ্চিন্তা হয়। সন্তানের সঙ্গে বোঝাপড়ার সমস্যা সাময়িক হলেও কখনও কখনও তীব্র আকার নেয়। বাবা-মা আর সন্তান, উভয়ের জন্যেই তা কষ্টের কারণ। কোনও ভালবাসার মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবও এই সময় বিষাদের কারণ হতে পারে। বয়ঃসন্ধিতে দেহমনের সাহচর্যের চাহিদা বাড়ে, সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে বিবেচনার ভুল হওয়াও স্বাভাবিক। বাবা মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকলে এবং নিজের ওপর আস্থা থাকলে এই সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়।

তুমি যে লক্ষণগুলো বলেছ, সেগুলি তোমার বয়সে অনেকের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু তাই বলে উপেক্ষা করার মতোও নয়। তোমার চিঠিতে আমি দুটি আশাব্যঞ্জক দিক দেখতে পাচ্ছি। এক, তুমি তোমার লক্ষ্য ভুলে যাওনি। পড়াশোনা করে কেরিয়ার করতে চাও, সে কথা মনে রেখেছ। দ্বিতীয়ত, তুমি নিজের অসুবিধে সম্পর্কে সচেতন এবং তা কাটিয়ে উঠতে চাও বলেই চিঠি লিখছ। এই সমস্যা সমাধানের একটা রাস্তা হল, কোনও ভাল লাগার বিষয়ে, যেমন খেলাধুলো, গান ইত্যাদিতে নিজের অবসর সময়কে ভরিয়ে রাখা। তুমি যদি বাবা-মায়ের কাছে বা অনুরূপ কোনও মানুষের সঙ্গে তোমার অসুবিধা আর তার সম্ভাব্য সমাধানগুলি আলোচনা করতে পারো, হয়তো নিজেই পথ খুঁজে পাবে। তবে লক্ষণগুলি যদি চলতেই থাকে, তবে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নেওয়া উচিত।

নতুন কলেজে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে? পছন্দের ভবিষ্যৎ গড়তে বাধা দিচ্ছেন বাবা-মা? নাকি, প্রেমিকার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে চলতে পারছ না? টিনএজ-এর নানা সমস্যা। মন খুলে জানাও আমাদের। মুশকিল আসান করতে পরামর্শ দেবেন বিশেষজ্ঞরা। ইমেল: prastuti@abp.in। বিষয়: mon kamon. অথবা, চিঠি পাঠাও এই ঠিকানায়:
মন কেমন, প্রস্তুতি, আনন্দবাজার পত্রিকা, এ বি পি প্রাঃ লিঃ, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

Jayanti Basu Psychological Support Psychological Tips Manage Stress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy