Advertisement
E-Paper

লক্ষ্য যখন ক্ল্যাট

সর্বভারতীয় পরীক্ষা ক্ল্যাট হওয়ার কথা এ বছর ১২ মে। যার মাধ্যমে সুযোগ মিলবে দেশের প্রথম সারির আইন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ার। গত বছরের দুই সফল প্রার্থী জানালেন, কী ভাবে পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরি করেছিলেন তাঁরা। শুনলেন সৌরজিৎ দাসসর্বভারতীয় পরীক্ষা ক্ল্যাট হওয়ার কথা এ বছর ১২ মে। যার মাধ্যমে সুযোগ মিলবে দেশের প্রথম সারির আইন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ার। গত বছরের দুই সফল প্রার্থী জানালেন, কী ভাবে পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরি করেছিলেন তাঁরা।

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

সাপ্তাহিক রুটিন বানিয়েছিলাম

হিউম্যানিটিজ়-এর ছাত্রী ছিলাম। স্কুল জীবন থেকেই লেখালিখি, ডিবেট, ইলোকিউশন দারুণ লাগত। ক্লাস টেন-এর পরীক্ষার পরে বাড়ি থেকে আমাকে কেরিয়ারের পথ নির্বাচনের কথা ভাবতে বলা হয়। আমিও খোঁজখবর শুরু করি। সেই সময়েই আমার এক পরিচিত আমাকে ল’ নিয়ে কেরিয়ারের বিষয়ে বলেন। আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি পড়তে গিয়ে বিষয়টার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তা ছাড়া আইনেও তো ডিবেট করার সুযোগ থাকে। সেটা আমার কাছে ছিল বাড়তি আকর্ষণ। আইন নিয়ে কেরিয়ার গড়ার বিষয়ে জানতে গিয়েই কমন ল’ অ্যাডমিশন টেস্ট (ক্ল্যাট) পরীক্ষার কথা জানতে পারি। তাই একাদশ শ্রেণির শেষের দিক থেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করি।

প্রথম দিকে যদিও বিভ্রান্ত ছিলাম যে পরীক্ষার জন্য নিজেকে কী ভাবে তৈরি করব। তার পর এক শিক্ষকের খোঁজ পাই, যিনি ক্ল্যাট পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেন। তিনিই আমাকে ক্ল্যাটের জন্য তৈরি করে দিয়েছিলেন। আর কোনও কোচিং-এ ভর্তি হইনি। কারণ মনে হয়েছিল কোচিং ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শিক্ষকরা আমার পড়াশোনায় আলাদা করে নজর দিতে পারবেন না। এই সময় আমার দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনাও ছিল। ফলে ক্ল্যাট-এর পড়াশোনা এবং বোর্ডের পড়াশোনা— দুটোই এক সঙ্গে চালাতে হয়েছিল। আমি দৈনিক রুটিন না করে সাপ্তাহিক রুটিন বানিয়েছিলাম ক্ল্যাট-এর পড়াশোনার জন্য। সেটাই যতটা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করতাম।

ইংরেজিতে বরাবরই ভাল ছিলাম। তাই আলাদা করে বিষয়টার জন্য কোনও প্রস্তুতি নিইনি। তাও পরীক্ষার জন্য একটু অন্য ভাবে তো পড়তেই হয়। আমি কয়েকটা মক টেস্ট আগে দিয়ে দেখে নিয়েছিলাম কোথাও কোনও খামতি আছে কি না। সেই অনুযায়ী পড়াশোনা করি। ক্ল্যাট-এর ইংলিশ বিভাগে রিডিং কম্প্রিহেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর জন্য আমি ইউনিভার্সালস প্রকাশনা এবং এ পি ভরদ্বাজ-এর ক্ল্যাট পরীক্ষা সংক্রান্ত বইগুলি দেখেছিলাম।

আমার মোবাইলে বেশ কিছু সংবাদপত্রের অ্যাপ ছিল। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সেগুলো দেখে নিতাম কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এর জন্য। ক্ল্যাট-এর প্রশ্নপত্র দেখলে যে কারও ধারণা হয়ে যাবে কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এ। আমার মতে, রাজ্য স্তরের খবরের তুলনায় জাতীয়, আন্তর্জাতিক এমনকি আইন সংক্রান্ত খবরের উপরেই বেশি জোর দেওয়া উচিত। আর ইন্টারনেটেও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংক্রান্ত বেশ কিছু ভাল ওয়েবসাইটও আছে। সেগুলো দু’একটা দেখতাম সময় পেলে। আর জিকে-র জন্য ইউনিভার্সালস এবং বাজারচলতি অন্যান্য বই দেখে রাখি। যেহেতু আমি হিউম্যানিটিজ় থেকে এসেছি, তাই ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি সম্পর্কে এমনিতেই একটা প্রাথমিক ধারণা ছিল। আমি সিবিএসই বোর্ডে পড়তাম, ফলে এনসিইআরটি-টি বইগুলিও ক্ল্যাট-এর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমার দারুণ কাজে লেগে গিয়েছিল।

লিগাল অ্যাপটিটিউড-এ এ পি ভরদ্বাজ-এ বইটি খুবই খুঁটিয়ে পড়েছিলাম। তা ছাড়া কেরিয়ার লঞ্চার সংস্থার অনলাইন মক টেস্ট দেওয়ার সুবিধে আছে। আমি সেখানে ক্ল্যাট-এর মক টেস্ট পরীক্ষা দিতাম। কেউ যদি মোটামুটি গত চার পাঁচ বছরের ক্ল্যাট-এর প্রশ্নপত্র দেখে এবং সেগুলো সলভ করে, সেটাও তার এই বিভাগের প্রস্তুতিতে দারুণ কাজে লাগবে। যদিও এই পুরনো প্রশ্নপত্রগুলি শুধু লিগাল অ্যাপটিটিউটই নয়, ক্ল্যাট-এ প্রশ্নের ধাঁচ সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে দেবে।

লজিকাল রিজ়নিং ক্ষেত্রে আমি একটাই বই দেখেছিলাম— ম্যাজিকাল সিরিজ় অন লজিকাল রিজ়নিং। আমার মতে, বইটিতে লজিকাল রিজ়নিং-এ যত ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, সবই রয়েছে। ওটা কেউ করে ফেলতে পারলে, লজিকাল রিজ়নিং নিয়ে তার অসুবিধে হওয়ার কথা হয়।

আর শেষে ছিল অঙ্ক। অঙ্কে আমি কোনও দিনই ততটা ভাল ছিলাম না। ফলে ক্ল্যাট-এ বসার আগে আমি ঠিকই করে নিয়েছিলাম, বাকি অংশগুলোয় এমন নম্বর তুলতে হবে যাতে অঙ্কের বিভাগে কম নম্বর পেলেও তা আমার র‌্যাঙ্কিংকে প্রভাবিত না করে। আমার প্রশিক্ষকও বলে দিয়েছিলেন অঙ্কের কয়েকটা অংশ জেনে রাখতে যেগুলো থেকে ক্ল্যাটে প্রশ্ন বেশি আসে। যেমন সিম্পল ও কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট, নাম্বার সিস্টেম ইত্যাদি। ফলে অঙ্কটা আমি প্রতি দিন প্র্যাকটিস করতাম।

সঞ্জুলা চক্রবর্তী

প্রথম বর্ষের ছাত্রী

দ্য ডব্লু বি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস

৮০টা মক টেস্ট দিয়েছিলাম

ক্ল্যাটে ২০০টা প্রশ্ন করতে হয় ১২০ মিনিটে। ফলে এখানে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়। তাই খুব তাড়াতাড়ি প্রশ্ন পড়া এবং সল্ভ করার দক্ষতাটা ভীষণ ভাবে কাজে লাগে। আর সেটা তৈরি হয় প্রচুর মক টেস্ট দিলে। আমি যেমন পরীক্ষার আগে ৮০টা মক টেস্ট দিয়েছিলাম। বিভিন্ন বিভাগের জন্য সময় ভাগও করে নিয়েছিলাম। যেমন, জেনারেল নলেজ অ্যান্ড ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এর জন্য ১০ মিনিট, কম্প্রিহেনশন-সহ ইংলিশের জন্য ২৫ মিনিট, লজিকাল রিজ়নিং-এর জন্য ৩৫ মিনিট, লিগাল অ্যাপ্টিটিউডের জন্য ৩২ মিনিট। আর শেষ ১৮ মিনিট ছিল অঙ্কের জন্য। আসল পরীক্ষাতেও এই সময়ের ভাগটাই অনুসরণ করেছিলাম। আমাদের পরীক্ষা হয়েছিল দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। সমস্ত মক টেস্টও ওই সময়েই দিতাম যাতে পরীক্ষার সময় অসুবিধে না হয়।

পরীক্ষায় শুধু নিজের পেপারটা উপরেই মনোযোগ দিও। তা ছাড়া, পরীক্ষা চলাকালীন খুব প্রয়োজন না হলে কোনও ব্রেক না নেওয়াই ভাল। এতে মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। হয়তো কোনও প্রশ্নের মাঝে তুমি ব্রেক নিলে। এতে প্রশ্নটা ভুলেও যেতে পারো। এসে নতুন করে প্রশ্নটা পড়তে হল। ফলে সময় নষ্ট হল কিছুটা। এখানে দু’মিনিট নষ্ট মানে তুমি হয়তো দশ নম্বরের সোজা প্রশ্ন মিস করে গেলে। বিশেষত লজিকাল রিজনিং বা লিগাল অ্যাপ্টিটিউডের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুবই হয়।

আমার সমস্যা ছিল জেনারেল নলেজ-এ। সেটার জন্য অনেকখানি সাহায্য পেয়েছিলাম ক্ল্যাটাপুল্ট নামের যে কোচিং সেন্টারে পড়তাম, সেখান থেকে।

ক্ল্যাটের ইংরেজির জন্য একাদশ শ্রেণি থেকে বিভিন্ন ভাল ইংরেজি উপন্যাস পড়া দরকার। বিশেষত জোর দিতে হয় ভোক্যাবুলারির উপর। এর জন্য দেখা যেতে পারে নরম্যান লিউইস-এর ‘ওয়ার্ড পাওয়ার মেড ইজ়ি’ বইটি। তা ছাড়া স্পিড রিডিং-ও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দক্ষতা কিন্তু পরে জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও কাজে লাগে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মূল শব্দগুলো বেছে নিয়ে একটা গোটা অংশকে বুঝে ফেলতে হবে। ধরো, একটা বাক্যের মধ্যে পনেরোটা শব্দ রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটা মূল শব্দ। ওই শব্দগুলো বেছে নিয়ে তুমি মনে মনে বাক্যটা নিজের মতো তৈরি করে ফেললে। এর জন্য টোনি বুজ়ান-এর ‘দ্য স্পিড রিডিং বুক’ বইটি দেখতে পারো।

অঙ্কের ক্ষেত্রে ম্যাজিকাল বুক অব কুইকার ম্যাথস, এম টাইরা-র বইটা খুবই কাজের। এসবিআই প্রোবেশনারি অফিসারদের পরীক্ষার জন্য এই বইটা ছেলেমেয়েরা পড়ে।

লজিকাল রিজনিং-এর ক্ষেত্রে প্র্যাকটিস করার সঙ্গে তোমাকে চিন্তাভাবনাও করতে হবে। হতেই পারে প্রচুর প্রশ্ন করেছ। কিন্তু পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন এল যেটা আগে করোনি। সে ক্ষেত্রে তোমাকে মাথা খাটিয়ে উত্তরটা বার করতে হবে।

লিগাল রিজ়নিং-এর ক্ষেত্রে গত দশ বছরে ক্ল্যাটে যে ধরনের প্রশ্ন এসেছে সেগুলো ভাল করে করতে হবে। তা ছাড়া এখানকার প্রশ্নগুলির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পূর্বধারণা ও পক্ষপাত সরিয়ে রেখে বিচার করার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে। তা হলেই লিগাল অ্যাপটিটিউডে আর অসুবিধে হবে না।

জেনারেল নলেজ-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন এডুকেশনাল ওয়েবসাইটে (যেমন www.gktoday.in) যে সব জিকে দেওয়া থাকে সেগুলো তৈরি করো। এ ছাড়া দৈনিক বাংলা, ইংরেজি সংবাদপত্রও পড়া দরকার। আমি যেমন ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রটা খুঁটিয়ে পড়তাম। ওটা আমাকে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-এর পাশাপাশি ইংরেজির ভোকাবুলারি তৈরি করতেও সাহায্য করেছিল।

অনেকে পরীক্ষার আগে তিন মাস পড়েও ক্ল্যাট দেয়। সে ক্ষেত্রে দিনরাত পড়াশোনা করতে হয়। আমি একাদশ শ্রেণি থেকেই পড়াশোনা শুরু করি। যদিও সেই সময় জয়েন্ট, আইআইটি-র জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তা হলেও ক্ল্যাট-এর পড়াশোনাটা অবহেলা করিনি। মক টেস্টে অনেক সময়েই কম নম্বর পেতে পারো। তাতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। খামতিগুলি দূর করার চেষ্টা করতে হবে। হতেই পারে যে মক টেস্টে তোমার স্কোর ভাল হল না, আসল পরীক্ষার দিনে দারুণ পরীক্ষা হল। ক্ল্যাটের ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাসটা ভাল করে দেখে রাখো। আগের বছর পর্যন্ত পরীক্ষা পরিচালনার ভার ছিল নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের উপর। এ বছর কনসর্টিয়াম অব ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটিজ় পরীক্ষাটি পরিচালনা করছে। এ বছর সিলেবাসে কোনও পরিবর্তন হল কি না সেটা জানা প্রয়োজন।

অগ্নিভ চক্রবর্তী

প্রথম বর্ষের ছাত্র

দ্য ডব্লু বি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস

CLAT Preparation Mock Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy