উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের রক্ত পরীক্ষার কিটের অভাব নিয়ে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের তরফে সুপারকে স্মারকলিপি। বুধবারের নিজস্ব চিত্র।
এনসেফ্যালাইটিসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একের পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। অথচ তা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের মধ্যে কোনও সচেতনতা প্রচার বা বিষয়টি পরিষ্কার করে বোঝানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে এখনও অনেক ছাত্রছাত্রী হস্টেলে ফিরতে চাইছেন না।
বুধবার এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয় জুনিয়র চিকিৎসক এবং ছাত্রছাত্রীদের একটি সংগঠনের তরফে। তাতে বিব্রত হয়ে পড়েন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার অধ্যক্ষ অনুপ রায় সাসপেন্ড হওয়ার পর দায়িত্ব নিয়েছেন সমীর ঘোষ রায়। ওই দিনই তিনি কলকাতায় যান। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি ফিরবেন। সমীরবাবু বলেন, “কলেজে গিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ সৌমেন চক্রবর্তী জানান, হস্টেল ছেড়ে কারা চলে গিয়েছেন তা তিনি জানেন না। তিনি হস্টেল সুপারদের সঙ্গে কথা বলবেন। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস অবশ্য বলেন, “এনসেফ্যালাইটিস ছোঁয়াচে নয়। সে সমস্ত ছাত্রছাত্রী চলে গিয়েছেন তারা ভয় পেয়েছেন। হয়তো বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার জানা নেই। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে তাদের বোঝানোর ব্যবস্থা করা হবে।
ডেন্টাল কলেজের অন্তত ১০ জন পড়ুয়াও হস্টেল ছেড়ে ভয়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে ১ অগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় তাঁরা ফিরেছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী যাঁরা ভয়ে চলে গিয়েছিলেন তাদের একাংশ ফেরেননি। পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন হাসপাতাল সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সদস্য একদল জুনিয়র চিকিৎসক এবং পড়ুয়া। গত ৩১ জুলাই তাঁরা মালবাজারের ক্রান্তি এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করেন। সেখানে আসা ৫০০ রোগীর মধ্যে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ রয়েছে সন্দেহ হওয়ায় ৫০ জনের রক্ত সংগ্রহ করে এনেছিলেন তাঁরা। অথচ কিটের অভাবে তা মঙ্গলবার পর্যন্তও পরীক্ষা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের সুপার এবং মাইক্রো বায়োলজির চিকিৎসকদের দাবী নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি রোগী, জেলা থেকে আসা রক্তের নমুনাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিট যা ছিল সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিটের সরবরাহের জন্য জানানো হয়েছিল। সেই মতো কিট এসেছে। তাদের নমুনাগুলিও শীঘ্রই পরীক্ষা করা হবে। সব্যসাচী দাস অবশ্য বলেন, “মঙ্গলবার চার বাক্স কিট এসেছে। আপাতত কিটের সমস্যা নেই। আরও কিছু কিট সরবরাহের জন্য ফের আবেদনও করা হয়েছে।”
মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার-এর সহকারি সভাপতি দীপক গিরি, চন্দন কুমার সিটরা জানান, বারবার কিট সরবরাহের আবেদন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে সকলের পরীক্ষা এক সঙ্গে করাও হচ্ছে না। সেখানে এনসেফ্যালাইটিসে গত জুলাই মাস থেকেই ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে রক্ত পরীক্ষা কিটের জন্য এ ভাবে অপেক্ষা করতে হবে কেন? তারা রক্ত পরীক্ষার জন্য যে নমুনাগুলি নিয়ে এসেছিলেন সেগুলি কিটের অভাবেই পরীক্ষা করা যায়নি। অথচ কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাইছেন না।
আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে অন্তত আট জনের খিঁচুনি, মাথা ব্যথা, বমির মতো এনসেফ্যালাইটিস রোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের রক্তের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এক জনকে এ দিন রেফার করা হয়। অভিযোগ, রক্তের নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠাতে প্রায় তিন দিন সময় নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে আরও বেশি সময় লাগছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতাল সুপার সুজয় বিষ্ণু। তিনি বলেন, “এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি রক্তের নমুনা জমা হওয়ার পর তা পাঠানো হচ্ছে। এতে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy