বয়স অল্প মানেই হাতে-পায়ে দুরন্তপনা। এই দেখলেন সন্তান চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তো পরমুহূর্তেই সে উধাও! ছোটবেলায় সন্তানদের ছটফটানি সামলাতে বাবা-মায়েরা হিমশিম খান ঠিকই, তবে দুশ্চিন্তা করেন না। চিন্তা বাড়ে তখনই, যখন দেখা যায় অস্থিরতা রয়েছে সন্তানের মনেও। যার ফলে কোনও কাজেই মনোযোগী হতে পারছে না সে। পড়তে বসলে ভুল হচ্ছে। পরীক্ষায় ছোটখাটো ভুলের জন্য নম্বর খারাপ হচ্ছে। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অভিযোগ করছেন ‘অন্যমনস্ক’ বলে। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ওই ধরনের অন্যমনস্কতার কারণ শুরুতেই খুঁজে সমাধান করতে বলছেন মনোবিদেরা। আমেরিকার মনোবিদ জোনাথন হাইট জানাচ্ছেন, শিশুদের কাছে প্রিয় জিনিস হারিয়ে যাওয়াটাও একটা চিন্তার বিষয়। যা তার মন আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে। তাতেও মনঃসংযোগের অসুবিধা হতে পারে।
কী কী কারণে সন্তান অন্যমনস্ক হতে পারে?
কিশোর বয়স পর্যন্ত সন্তানের মনঃসংযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়ার অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। তবে পাঁচটি বিষয় খেয়াল রাখলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
১। অনুপ্রেরণার অভাব
অনুপ্রেরণার অভাবে বড়রাই কাজে মন বসাতে পারেন না, ছোটদের আর দোষ কী! ছোটরা যে কোনও বিষয়েই ‘পুরস্কার’কে গুরুত্ব দেয়। সেই ‘পুরস্কার’ প্রশংসা হতে পারে, বাবা-মায়ের আদরও হতে পারে। একটা বই, কিংবা রংপেন্সিলের বাক্স কিংবা একটা লজেন্সও হতে পারে। এমন ছোটখাট বিষয় থেকেই আরও ভাল করার উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা পায় তারা। আবার যিনি শিক্ষক বা যিনি পড়াচ্ছেন, তাঁর পড়া বোঝানোর ধরন থেকেও উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা পেতে পারে ছোটরা। অন্যথায় মনঃসংযোগের অসুবিধা হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।
২। পুষ্টি এবং ঘুমের সমস্যা
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য যে যে পুষ্টির দরকার, তা কি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছে আপনার সন্তান? যদি না পায়, তবে তার প্রভাব পড়তে পারে মনঃসংযোগেও। আবার শিশুদের জন্য রাতে যে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম দরকারি, তা না হলেও তাদের মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে।
৩। হারিয়ে যাওয়া খেলনা বা প্রিয় জিনিস
ছোটদের পড়ার জিনিস এবং খেলার জিনিস আকছার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। দুরন্তপনার জন্যই তাদের জিনিসপত্রের ঠিকঠিকানা থাকে না। প্রিয় জিনিস বা প্রিয় খেলনা আকছার হারিয়ে ফেলে তারা। মনোবিদ বলছেন, প্রিয় জিনিস হারিয়ে ফেলার দুঃখ ছোটদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সেই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী না হলেও মনঃসংযোগে প্রভাব ফেলতে পারে। তার কারণ, প্রিয় খেলনা বা প্রিয় জিনিসের সঙ্গে ছোটদের অনেক রকম আবেগ জুড়ে থাকে। সেই আবেগের বাঁধন অনেক ক্ষেত্রে বেশ জোরালো হয়। তেমন জিনিস হারিয়ে গেলে তা সর্ব ক্ষণ ভাবাতে থাকবে শিশুকে। ফলে সে বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়বে। নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে শেখানো সে ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।
৪। দৃষ্টি আকর্ষণ
ছোটরা সব সময়েই চায় সবার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে। বাবা-মা বা কাছের মানুষের মনোযোগ পেতে। অনেক সময়ে সেই মনোযোগ না পেলে তারা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।
৫। পারিবারিক সমস্যা
বাড়িতে প্রতিকূল পরিবেশ, অশান্তিও ছোটদের অমনযোগী করতে পারে। বাবা-মায়ের সম্পর্কে সমস্যা কিংবা প্রিয় মানুষের দূরে চলে যাওয়া, বাড়ি বদলও ছোটদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।