Advertisement
E-Paper

ধূসর বর্ণে কী এসে যায়? শ্যামা মেয়েতেই মজেছে জগৎ, দেখিয়েছেন ৭ অভিনেত্রী

শ্যামাঙ্গিনী সাত অভিনেত্রী আজও প্রাসঙ্গিক। একটু হলেও তাঁরা সাহসী হতে শিখিয়েছেন মানুষকে। তবে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য বড়ই কঠিন পথ পেরোতে হয়েছে তাঁদের। গায়ের রং শ্যামলা বলে ধাক্কা খেতে হয়েছে প্রতি পদে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০১
ছবির দুনিয়ায় ৭ শ্যামাঙ্গিনী।

ছবির দুনিয়ায় ৭ শ্যামাঙ্গিনী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

চতুর্দিক যখন ফরসা মেয়েদের নিয়ে মজে, সেই সময়ে তাঁরা দাপট দেখিয়েছেন গোটা দেশে। যে সময়ে ফরসা মানে ‘পরিষ্কার’, কালো মানে ‘ময়লা’, সেই সময়ে শ্যামাঙ্গিনী হয়ে গর্ববোধ করেছেন তাঁরা। সেই সাত অভিনেত্রী আজও প্রাসঙ্গিক। একটু হলেও তাঁরা সাহসী হতে শিখিয়েছেন মানুষকে। তবে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য বড়ই কঠিন পথ পেরোতে হয়েছে তাঁদের। গায়ের রং শ্যামলা বলে ধাক্কা খেতে হয়েছে প্রতি পদে। কাউকে সাদা মেকআপ করে ফরসা করানোর চেষ্টা হয়েছে, কাউকে মনের সুখে গালমন্দ করা হয়েছে। সেই নায়িকাদের যাত্রায় চোখ রাখা যাক—

রেখা: এখন তিনি বর্ষীয়ান। কিন্তু যৌবন জুড়ে কেবল লড়া‌ই করতে হয়েছে তাঁকে। চেহারা নিয়ে বিচারের ভিড়ে যেন প্রতিভা চাপা পড়ে গিয়েছিল। চারদিক থেকে তাই ‘মোটা’, ‘কালো’, ‘কুৎসিত’ এই ধরনের বিশেষণই ভেসে আসত। প্রশ্ন উঠত, এই মহিলা ইন্ডাস্ট্রিতে কী-ই বা করবেন? সেই রেখাই একদিন সুপারস্টার। আজো তাঁর রূপে মুগ্ধ বলিউড। একই নারী, শুধু খানিক উন্নত হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গি। আজ ওই শ্যামাঙ্গিনী যখন কাঞ্জিভরম পরে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক মেখে, মোটা কাজল এঁকে, গয়নায় শরীর ভরিয়ে লোকসমক্ষে আসেন, তখন তাঁর বিবরণে ‘অসামান্য সুন্দরী’ বিশেষণটিই মানায়।

রেখা।

রেখা। ছবি: সংগৃহীত।

কাজল: জোড়া ভ্রু, শ্যামলা গায়ের রং, তন্বী নন। যাঁকে নায়িকা হিসেবে মেনে নিতেই পারছিল না দেশের দর্শক, তিনিই কি না এক সময়ে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠলেন! সেই ‘কালো সিমরন’কে দেখেই মুগ্ধ কয়েক প্রজন্ম। ‘কালো’, ‘মোটা’ বিশেষণ শুনতে শুনতেই বড় হয়েছেন কাজল। কিন্তু মনে মনে বিশ্বাস করার চেষ্টা করতেন, তিনি সুন্দর। ৩২-৩৩ বছর বয়স থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চারণ করতেন, ‘‘আমি যথেষ্ট সুন্দর।’’ কাজলের মতে, যত দিন পর্যন্ত বিশ্বাস না হয়, তত দিন পর্যন্ত মিথ্যে বলে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আগে নিজেকে বিশ্বাস করিয়ে তার পর বাইরের জগতের সঙ্গে লড়াই করাটা খানিক সহজ।

কাজল।

কাজল। ছবি: সংগৃহীত।

বিপাশা বসু: ‘‘শ্যামলা রঙা মেয়ে, আমার প্রথম বিশেষণ কেন কেবলই এটা?’’ প্রশ্ন তুলেছিলেন বিপাশা বসু। তাঁকে প্রথম দেখলে কেন কেবল তাঁর গায়ের রংটাই চোখে পড়ে? কেন তাঁর রূপ, কেন তাঁর প্রতিভা বিশেষণের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে না? মডেলিং প্রতিযোগিতায় জেতার পর সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে, ‘জয়ী হয়েছে কলকাতার শ্যামলা মেয়ে’। কেবল মাত্র গাত্রবর্ণের দোহাই দিয়ে বার বার আলাদা করে দেওয়া হত সমসাময়িক নায়িকাদের থেকে। সারা জীবনই এই বিশেষণের সঙ্গে বাঁচতে বাঁচতে ধীরে ধীরে সেটিকেই পছন্দ করতে শুরু করেন বিপাশা। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, মানুষের চোখে লাগা থাকা রং দেখার নেশা তিনি কাটাতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর এই রংই মোহময়ী, রহস্যময়ী, যৌন আবেদনময়ী করে তুলল গোটা বলিউডের সামনে। এ ভাবেই আলাদাই হয়ে থাকলেন বিপাশা, কিন্তু নিজেকে ভালবেসে। সকলের ভালবাসা পেয়ে।

বিপাশা বসু।

বিপাশা বসু। ছবি: সংগৃহীত।

প্রিয়ঙ্কা চোপড়া: কালো মেয়েকে ফরসা বানিয়ে অভিনয় করানোর গল্পের বড় উদাহরণ প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। তবে 'শ্যামলা, শ্যামলা' শুনে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগত, ‘শ্যামলা’ কাকে বলে? ‘ফরসা’ই বা কাকে বলে? কোনটি আসলে মাপকাঠি? কোনটির ভিত্তিতে বাকিটা তৈরি হচ্ছে? এমনই প্রশ্ন বার বার কুরে খেত তাঁকে। একটি প্রসাধনী সংস্থার সঙ্গে বিজ্ঞাপনের চুক্তি ছিল প্রিয়ঙ্কার। সেই সংস্থা ফরসা হওয়ার ক্রিম বানালে সেগুলিরও বিজ্ঞাপন হত। প্রিয়ঙ্কাকে এমনই এক বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে, কালো, অসফল মেয়ে ফরসা হয়ে যাওয়ার পর একে একে চাকরি পেল, প্রিয় পুরুষকে পেল, জীবন সুন্দর হল। ছবিতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ফরসা মেয়েরা অনেকটা এগিয়ে থাকতেন শ্যামলা মেয়েদের তুলনায়। আর যদি শ্যামলা মেয়ের কাছে সুযোগ যেত, তা হলে তাঁকে মেকআপ আর আলোর সাহায্যে ফরসা করানো হত।

প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।

প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। ছবি: সংগৃহীত।

পাওলি দাম: মুখ্য চরিত্র মানে ফরসা মেয়ে, পার্শ্বচরিত্র মানে শ্যামলা মেয়ে— ইন্ডাস্ট্রি যে এমন সমীকরণেই বিশ্বাসী, তা খুব দ্রুত বুঝেছিলেন পাওলি দাম। বার বার কেবল নায়িকার বোনের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পেতেন। কিন্তু পাওলি তাঁর নাছোড়বান্দা স্বভাব থেকে বেরোননি কখনও। তাই নিজের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ দেরিতে হলেও এসেছে। নিজের মাটি শক্ত করেছেন পাওলি। এক সময়ে যে শ্যামলা রং ছিল তাঁর পেশার শত্রু, তা-ই হয়ে উঠল তাঁর মিত্র। বিশেষণের বোঝা কাঁধ থেকে না নামলেও তাকে নিজের করে নিতে শিখেছেন পাওলি।

পাওলি দাম।

পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত।

কঙ্কনা সেনশর্মা: ছোট থেকে মায়ের সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা শুনতে হয়েছে কঙ্কনা সেনশর্মাকে— ‘অপর্ণা সেনের মতো সুন্দর নয় তাঁর মেয়ে’। ‘কম সুন্দর শ্যামলা মেয়ে’ হয়েই একের পর এক পুরস্কার তুলে নিয়েছেন হাতে। কঙ্কনা যদিও কখনওই নিজেকে অসুন্দর মনে করেননি। নিজের চোখে তিনি বেশ সুন্দর। তাঁর মায়ের সৌন্দর্য আর তাঁর সৌন্দর্য যে ভিন্ন প্রকারের, তা তিনি অস্বীকার করেন না। তাই তুলনা আসে না মনে। প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী কঙ্কনা। তাই ফরসা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপন করার ডাকে সাড়া দেননি কখনওই।

কঙ্কনা সেনশর্মা।

কঙ্কনা সেনশর্মা। ছবি: সংগৃহীত।

তিলোত্তমা সোম: ফরসা মানে কেবল সুন্দর নয়, প্রতিপত্তিশালী, ধনবান, উচ্চবিত্তও বটে! আর কালো মানে অসুন্দর, দরিদ্র। এমনই ধারণার সম্মুখীন হয়ে অবাক হয়েছিলেন তিলোত্তমা সোম। ‘মনসুন ওয়েডিং’ ছবিতে পরিচারিকার চরিত্রে অভিনয় করার পর থেকে তিনি কেবলই একই ভূমিকায় অভিনয়ের ডাক পেতেন। হলিউডের এক ছবিতে এক বার তাঁকে মেকআপে আরও শ্যামলা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন পরিচালক। তাঁর যুক্তি, গরিব চরিত্রের তুলনায় একটু বেশিই সুন্দরী তিনি। শুনে অবাক হয়েছিলেন তিলোত্তমা। প্রশ্ন জাগে, সৌন্দর্য আর আর্থিক অবস্থার সম্পর্ক কবে থেকে ব্যস্তানুপাতিক হয়ে গেল? তবে তিনি ফরসা হওয়ার চেষ্টা করেননি। নিজের গায়ের রংকে ভালবেসে, অভিনয়কলার দিকেই মন দিয়েছেন। আজ হয়তো অনেকেরই তাঁর চেহারার আগে প্রতিভার দিকেই নজর যায়।

তিলোত্তমা সোম।

তিলোত্তমা সোম। ছবি: সংগৃহীত।

Skin Colour Bollywood Actress Skin Tone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy