Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Cyber Crimes

সন্তান কি অনলাইনে নিরাপদ? জানেন না ৯০ শতাংশ অভিভাবকই

সম্প্রতি আট থেকে ১৫ বছর বয়সিদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬৯ শতাংশই অনলাইন অপরাধের শিকার। কেউ হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, কেউ নিশানা হচ্ছে সাইবার বুলিংয়ের।

A photograph of a mobile phone

গত কয়েক মাসে একাধিক ঘটনার সূত্রে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে অনলাইন অপরাধ নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে কলকাতা পুলিশ। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫৬
Share: Save:

বারো বছরের একটি মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখে, নিজের ভিডিয়ো পোস্ট করত সে। ভিডিয়োয় তার কথা জড়িয়ে যাওয়া, একটানা বলতে অসুবিধার বিষয়টি এবং মাথার ছোট চুল নিয়ে শুরু হয় ‘ট্রোলিং’ (সাইবার নির্যাতন)। বাবা-মাকে জানায় মেয়েটি। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার বদলে মেয়েটিকেই তাঁরা বকাবকি করেন সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহারের জন্য।

গত কয়েক মাসে একাধিক ঘটনার সূত্রে শিশু, কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে অনলাইন অপরাধ নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে কলকাতা পুলিশ। দেখা যায়, একাধিক মৃত্যুর জন্য দায়ী অনলাইন অপরাধ। লালবাজার সূত্রের খবর, সম্প্রতি আট থেকে ১৫ বছর বয়সিদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬৯ শতাংশই অনলাইন অপরাধের শিকার। কেউ হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, কেউ নিশানা হচ্ছে সাইবার বুলিংয়ের। কাউকে ফুসলিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের ‘কন্টেন্ট’, কেউ বা অজানতেই শিশু পর্নোগ্রাফির শিকার। কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা জানেন না এ বিষয়ে কী আইন রয়েছে বা সন্তানের সঙ্গে এমন কিছু ঘটলে কী করণীয়।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পটনার চাণক্য ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটির একটি যৌথ সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে, অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবক অনলাইন যৌন হেনস্থা, ইন্টারনেট সুরক্ষা নিয়ে সচেতন নন। পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকে করা এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সন্তান অনলাইন অপরাধের শিকার হলেও পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না অনেকেই। ৯০ শতাংশ অভিভাবক এই সংক্রান্ত আইন নিয়ে সচেতন নন। শিক্ষকদেরও একটি বড় অংশ পড়ুয়াদের অনলাইন আসক্তি বা অ্যাপ প্রীতি, অনলাইন ক্লাসে সুরক্ষার বিষয়ে অন্ধকারে। ৭ ফেব্রুয়ারি ইন্টারনেট সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে সমীক্ষার কথা সামনে এনে সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা তৃণা চক্রবর্তী জানান, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী শিশুদের অনলাইন অপরাধের শিকার হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

তাই নতুন করে ভাবছে পুলিশও। লালবাজারের সাইবার শাখার এক কর্তা বলেন, ‘‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বেড়েছে স্মার্টফোন, কম্পিউটারের ব্যবহার। স্কুল-কলেজের ক্লাসও নেট-নির্ভর। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিশু-কিশোরদের মতো অপরিণত মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবসাও। অভিভাবকদের পক্ষেও সর্বক্ষণ নজরদারি করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগে প্রথমে গেমেরচেহারায় হাজির হচ্ছে অপরাধী। পরে গেমের নেশা ধরিয়ে চলছে ব্ল্যাকমেল। ডার্ক ওয়েবে শিশুর ভয় পাওয়ার দৃশ্যও কন্টেন্ট।’’ আর এক অফিসারের কথায়, ‘‘বিষয়টি এক সময়ে এমন মাত্রায় পৌঁছচ্ছে যে, শিশুটি নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছে। এর বড় কারণ অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব।’’

লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ৩৯ শতাংশ শিশু-কিশোর অনলাইনে ঘৃণা ভাষ্যের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু ২৯ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, তাঁদের সন্তানের এই অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। ১৯ শতাংশ শিশু-কিশোর যেখানে জানিয়েছে তারা অনলাইন হুমকির শিকার, সেখানে মাত্র ১১ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, এমনটা ঘটেছে। একটি ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা সমীক্ষার পরে ২০২২ সালে জানিয়েছিল, ভারতের ৮৫ শতাংশ বালক-বালিকাই সাইবার বুলিং, ৪২ শতাংশ অনলাইনে যৌন হেনস্থার শিকার। ২৮ শতাংশ ব্যক্তিগত ক্ষতির হুমকি পেয়েছে। ফলে চিন্তা শুরু হয়েছে, এমন অপরাধ থেকে বাঁচার উপায় কী?

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছে। তার বেশ কয়েকটিশিশুদের অনলাইন অপরাধ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি বলে খবর। পাশাপাশি, পুলিশ জানাচ্ছে,স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারে ‘পেরেন্টাল কন্ট্রোল’ রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়।সন্তানদের বোঝাতে হবে অনলাইন অপরাধের দিকগুলি। প্রয়োজনে দ্রুত পুলিশের দ্বারস্থ হতে হবে।সাইবার গবেষকেরা বলছেন, সচেতনতার পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপও জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE