Advertisement
E-Paper

গোয়েন্দারা কি মন্দ বন্ধু? ব্যোমকেশ থেকে ফেলুদা, সকলেই কি নিঃসঙ্গ? রইল রহস্য কাহিনির তত্ত্বতালাশ

গোয়েন্দাদের সাধারণ মানূষের থেকে পৃথক দেখাতে এবং তাদের অধিকতর বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে অধিকাংশ সাহিত্যেই তাদের বন্ধু তথা সহচরদের তেমন ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন হিসাবে দেখানো হয়নি। তাহলে তাদের সঙ্গে সঙ্গীদের সম্পর্কের সমীকরণ ঠিক কী?

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ১০:০০
A saga of the sleuths and their friends

ব্যোমকেশ-অজিত, ফেলুদা-জটায়ু বাঙালি গোয়েন্দাদের ‘বন্ধু’রা কি নিছক সহচর মাত্র? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

“শার্লক হোমসের জুড়িদার যেমন ডাক্তার ওআটসন, সরলাক্ষ হোমের তেমনি ডাক্তার বটুক সেন— এই আমি। তবে আমি ওআটসনের মতন হাঁদা নই।” উক্তিটি যে বটুক সেন নামক চরিত্রের, তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু পরশুরাম অর্থাৎ কি না রাজশেখর বসু দুঁদে গোয়েন্দা শার্লক হোমসের সম্পর্কে এমনি উক্তি করিয়েছিলেন তাঁর চরিত্র বটুককে দিয়ে ‘সরলাক্ষ হোম’ গল্পে। গল্পটির নাম শুনেই অনুমান করা যায়, সেটি শার্লক হোমসের দিকে আড়নয়ানে তাকিয়ে একটি বৃহৎ বক্রোক্তি। কিন্তু পরশুরামের মতো ধীশক্তিসম্পন্ন মানুষ হোমসের বন্ধু ওয়াটসনকে কী নজরে দেখতেন, তা অনুমান করতে বেগ পেতে হয় না।

গোয়েন্দা এবং তার সহকারী অথবা সহচর— এই জুটি আবিশ্ব রহস্য সাহিত্যে ভূরি ভূরি লভ্য। আর সর্বত্র এই জুটিকে ‘বন্ধু’ বলেই দেগে দেওয়া হয়েছে। তা সে হোমস-ওয়াটসনই হোক বা ব্যোমকেশ বক্সী-অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা ফেলুদা-জটায়ু, কিরীটী-সুব্রত অথবা পাল্প সাহিত্যের দীপক চ্যাটার্জি-রতনলাল, গল্পকাঠামো সর্বদাই ‘বন্ধুত্ব’-এর দিকেই নির্দেশ করে। সহচরহীন গোয়েন্দা নেই, এমন নয়। হাতের কাছে আগাথা ক্রিস্টির মিস মার্পলের সমগ্র থাকলে পাতা উল্টিয়ে দেখুন, তার কোনও ‘সাইডকিক’ অর্থাৎ সহচর ছিল না। সুতরাং, বন্ধু/ সহচর বিহীন গোয়েন্দা বস্তুটি মোটেই মণিহারা ফণী নয়। তবু সারা বিশ্বের গোয়েন্দা সাহিত্যে বন্ধু জুটির আনাগোনা হাতে গোনা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। ক্রিস্টির হুনহার হুনর এরকুল পোয়ারোরই তো ক্যাপ্টেন হেস্টিংস নামে এক ‘সাইডকিক’ ছিল। অবশ্য হেস্টিংসকে খানিক দম্ভ মেশা মেজাজের পোয়ারো কতটা ‘বন্ধু’ বলে মনে করত, সে কথা ক্রিস্টি লিখে যাননি। এ দিকে, বাংলার জনপ্রিয়তম গোয়েন্দা ব্যোমকেশ ও ফেলু মিত্তির কিন্তু যথাক্রমে অজিত ও জটায়ু ওরফে লালমোহনবাবুকে বন্ধু বলেই মেনেছে, এমন প্রমাণ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সত্যজিৎ রায়ের লেখায় বারংবার উপস্থিত।

ব্যোমকেশ সংসারী হওয়ার পরেও কিন্তু অজিতকে তার বাসা থেকে ছাড়তে চায়নি।

ব্যোমকেশ সংসারী হওয়ার পরেও কিন্তু অজিতকে তার বাসা থেকে ছাড়তে চায়নি। ছবি: সংগৃহীত।

কিন্তু প্রশ্ন এখানেই যে, গোয়েন্দাদের ‘সাইডকিক’ আর ‘বন্ধু’ কি একই বস্তু? ‘সাইডকিক’ শব্দটির মধ্যেই কেমন একটা ‘এক পৈঠা নীচে’-গোছের ইঙ্গিত রয়েছে। তা ছাড়া, গোয়েন্দাদের সাধারণ মানূষের থেকে পৃথক দেখাতে এবং তাদের অধিকতর বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে অধিকাংশ সাহিত্যেই তাদের বন্ধু তথা সহচরদের তেমন ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন হিসাবে দেখানো হয়নি। অথচ এ কথা সমাজে প্রতিষ্ঠিত যে, বন্ধুত্ব হওয়া উচিত সমানে সমানে। তা-ই যদি হবে, তা হলে কেন আবিশ্ব গোয়েন্দা কাহিনির গোয়েন্দাদের সহচরেরা গোয়েন্দার সমান বুদ্ধিসম্পন্ন হয় না? এ প্রসঙ্গে ক্রাইম সাহিত্যের ব্যাখ্যাকর্তা এরিন রোল তাঁর ‘দ্য রোল অফ দ্য সাইডকিক ইন ডিটেক্টিভ ফিকশন’ নিবন্ধে দেখিয়েছেন যে, প্রায় প্রত্যেক গোয়েন্দারই এক জন ‘সাইডকিক’-এর প্রয়োজন পড়ে। কারণ, গোয়েন্দার কাছে আসা কেসগুলির খুঁটিনাটি, সেগুলির তদন্ত কতদূর অগ্রসর হল, সে সব বিষয়ে গোয়েন্দা সাইডকিকের সঙ্গেই আলোচনা করে। সে কারণে অধিকাংশ গোয়েন্দা কাহিনিতে সাইডকিকই কথক তথা লেখকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যেমন, ব্যোমকেশের ক্ষেত্রে অজিত, হোমসের ক্ষেত্রে ওয়াটসন। কিন্তু ফেলুদার ক্ষেত্রে দেখা যায় তার সাইডকিক তথা তদন্তকথক হল তার তুতোভাই তোপসে। তা হলে এ ক্ষেত্রে লালমোহনবাবু ওরফে জটায়ুর ভূমিকা ঠিক কী? খলনায়ক মগনলাল মেঘরাজের ডেরায় যখন জটায়ুকে ছুরি ছোঁড়ার খেলায় বোর্ডে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়, তখন ফেলুদা বিষয়টিকে নিজেরই অপমান বলে ধরে নেয় এবং কাহিনির অন্তিমে সে মগনলালের উপরে একই উপায়ে শোধ তোলে।

অথচ ফেলুদার সামগ্রিক গল্পেই জটায়ুকে খানিক মাঠো দেখানো হয়েছে, সে কথা ফেলুদার পাঠক মাত্রেই জানেন। অন্য দিকে, আবার ফেলুদাই স্বীকার করেছে যে, সমসাময়িক রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের দুনিয়ায় লালমোহনবাবুই একমাত্র পাঠযোগ্য। পাশাপাশি, লালমোহনের বইতে যে বিস্তর তথ্যগত অসঙ্গতি থাকে, সে কথা ফেলু মিত্তির বার বার বলে দেয়। এ থেকে ফেলুদাকে জটায়ুর এক ধাপ উপরে দেখিয়েছেন সত্যজিৎ। মুশকিলটা এখানেই। ওয়াটসন যদি হোমসের মনোভাব পুরোপুরি বুঝতে পারত, তা হলে হোমস কাহিনিমালার আর দরকারই পড়ত না। ব্যোমকেশ আর অজিতের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য। অজিত ব্যোমকেশের কীর্তির কথক। কিন্তু এখানে শরদিন্দু এক অভাবিত ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। অজিত প্রতিষ্ঠিত লেখক। সে ব্যোমকেশ-কাহিনির কথকমাত্র নয়। প্রায় প্রতিটি ব্যোমকেশ-কাহিনিতে অজিতের স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে। সত্যান্বেষীর মনস্তত্ত্ব সে অনুধাবন করে না, ব্যোমকেশের আচার-আচরণ ও কথাবার্তার ধারাবিবরণীর সমান্তরালে সে নিজের ব্যাখ্যা, নিরীক্ষণ ও পরিপার্শ্বের বর্ণনাও সমানতালে দিয়ে থাকে। ব্যোমকেশও সাহিত্য বা সঙ্গীত-চিত্রকলা বিষয়ে অনেক সময়েই অজিতের ভাষ্যকে মান্যতা দেয়। কিন্তু লক্ষণীয় এই যে, অজিত ব্যোমকেশ কাহিনির কথক হিসাবে দীর্ঘকাল উপস্থিত থাকলেও পরে শরদিন্দু তাকে সে ভূমিকা থেকে অব্যাহতি দেন। ‘শরদিন্দু অমনিবাস’-এর সম্পাদক প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন, “কয়েক বছর পরে অজিতকে সরিয়ে দিয়ে শরদিন্দুবাবু নিজে কথকের আসন গ্রহণ করেছে। সম্ভবত অজিতের সাহিত্যচর্চার ফল ব্যোমকেশকে খুশি করতে পারেনি।” আবার এই উক্তির সঙ্গেই প্রতুলচন্দ্র উল্লেখ করেছিলেন অজিতের সঙ্গে ব্যোমকেশের বন্ধুত্ব কিন্তু ক্ষুণ্ণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া দরকার ‘বন্ধুত্ব শব্দটির উপরে।

উল্টো দিকে, কিরীটি রায় আর সুব্রতর সম্পর্কের সমীকরণে কিন্তু এই উচ্চ-নীচ ভেদ রয়েছে। কখনও কখনও কিরীটিকে সুব্রতর প্রায় অভিভাবকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হতে হয়েছে। কিরীটি-কাহিনি পড়তে বসলে দেখা যাবে,‌ কিরীটী আর সুব্রতর আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এক নয়। কিরীটী একটু বেশিই সাহেবি। এক সময় একটা রসিকতা প্রচলিত ছিল নীহাররঞ্জন গুপ্তকে নিয়ে। নীহারবাবু কিরীটীর ড্রইংরুম আর তার বেশভূষাতে কত টাকা খরচ করে ফেলছেন, তা নিয়ে। ও দিকে সুব্রত অর্থবান হলেও সে সেকালের মধবিত্ত মূল্যবোধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। একটি কিরীটী-কাহিনিতে তো একটা পানশালায় সুব্রতকে নিয়ে গিয়ে সুরাপানের শিক্ষাও কিরীটী দিয়েছে দেখা যায়। ফলে কিরীটী আর সুব্রতর সম্পর্কের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব’ ব্যাপারটা তেমন গোছালো নয়। সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা হিসেবে জপ্রিয় হয়েছেন একেনবাবু, একেন্দ্রনাথ সেন। সুজন দাশগুপ্তের রচনায় একেনের অভিযানের প্রেক্ষিত এক রকম ছিল, আর সিনেমা-সিরিজে আর এক রকম। যদি পর্দার একেনবাবুর কথাই ধরা যায়, তা হলে তার ‘সাইডকিক’ দু’জন বাপি আর প্রমথ। অন্য গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রে যে রকম হয়, গোয়েন্দা ধারালো, মগজাস্ত্রে যে শান দেওয়া তা দেখলেই বোঝা যায়, একেনের ক্ষেত্রে তেমন নয়। একেন বরং উল্টোটা। তার চেহারা অনেকটাই জটায়ুর মতো। হাবভাব জটায়ুর ‘অজ্ঞতা’র সঙ্গে বেশ খানিকটা উদ্ভট রস মেশালে যেমন হয়, তেমনই। একেনের সঙ্গী বাপি আর প্রমথ কিন্তু তার ‘সাইডকিক’ নয় (অন্তত পর্দায়), নিছক বন্ধুই। একেন-চিত্রনাট্যকে তাই খানিক ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে গোয়েন্দা আর তাদের বন্ধুত্বের কিস্‌সায়। তবে একেন তার খামখেয়ালিপনা দুই বন্ধুর ঘাড়ে চাপালেও তদন্ত কাহিনির স্পয়লার দিয়ে রসভঙ্গ করে না।

একেনবাবুর সঙ্গে প্রমথ আর বাপির বন্ধুত্ব কি সত্যিই নিখাদ?

একেনবাবুর সঙ্গে প্রমথ আর বাপির বন্ধুত্ব কি সত্যিই নিখাদ? ছবি: সংগৃহীত।

গোয়েন্দা আর তার কথক তথা সাইডকিকের সম্পর্ক কি শুধুমাত্র সাসপেন্সকে তুঙ্গে তোলার জন্যই? এরিন রোল তাঁর নিবন্ধে দেখিয়েছেন, সাইডকিক কার্যত পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির বাহন। কিন্তু যে সব গোয়েন্দা কাহিনিতে সাইডকিক নেই? উত্তর ইউরোপের দেশগুলির রহস্য কাহিনির মতো যেখানে গোয়েন্দা নিঃসঙ্গ? সুইডিশ লেখক হাকান নেসেরের ভ্যান ভিটেরেন, নরওয়েজিয়ান লেখক জো নেসবোর হ্যারি হোল, সুইডেনেরই হেনিং ম্যানকেলের কুর্ট ওয়াল্যান্ডার— এরা সকলেই নিঃসঙ্গ গোয়েন্দা। অবশ্য এরা কেউই ব্যোমকেশ বা ফেলুদার মতো প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নয়। এরা সকলেই পুলিশ কর্মী। কেউ প্রাক্তন, কেউ বা পদে বহাল রয়েছে। জ্যঁর হিসাবে এই সব কাহিনিকে ‘পুলিশ প্রসিডিওরাল’ বলে দাগিয়ে দেওয়া যায়। পুলিশে কাজ করতে গিয়ে তাদের সহকর্মীর সাহায্য লাগে। কিন্তু সহকর্মী কি ‘বন্ধু’? বাংলায় সাম্প্রতিক কালে পুলিশ প্রসিডিওরাল কাইহিনি লিখে নজর কেড়েছেন রাজর্ষি দাশ ভৌমিক। তাঁর গোয়েন্দা কানাইচরণ হরফের চৌহদ্দি ডিঙিয়ে ওয়েব সিরিজেও মুখ দেখিয়েছে। কানাইচরণের এক সাগরেদ রয়েছে— সৌভিক। সে-ও পুলিশকর্মী। রাজর্ষির কাছে এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করায় তিনি বললেন, “পুলিশি রহস্য কাহিনিতে সাইডকিকদের গোয়েন্দারা প্রশিক্ষণ দেয় ঠিক। কিন্তু একটা অলিখিত নিয়ম রয়েছে। সাইডকিক কখনওই গোয়েন্দার জায়গা নেবে না। তোপসে কখনও ফেলুদা হবে না। সৌভিকও তেমনি কখনওই কানাইচরণ হবে না।” রাজর্ষির মতে, পুলিশি রহস্য কাহিনিতে এমন একটা ধারা রয়েছে যে, গোয়েন্দা তার অনুবর্তীদের সেই ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়, যে এক দিন তার জায়গা নিতে পারবে। সেখানে সম্পর্কটা গুরু-শিষ্যের বা ছাত্র-শিক্ষকের। তবে এমন সম্পর্কের মধ্যেও একটা বন্ধুত্বের আভাস থেকে যায়ই। কখনও আবার যায়ও না।

ফেলুদা, জটায়ু, তোপসে— এই ত্রয়ীর সম্পর্কে ক্ষমতার খেলা কিন্তু রয়েছে।

ফেলুদা, জটায়ু, তোপসে— এই ত্রয়ীর সম্পর্কে ক্ষমতার খেলা কিন্তু রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলা সাহিত্যে নিঃসঙ্গ গোয়েন্দার অভাব রয়েছে। তার মূলে বাঙালির আড্ডাবাজ, বন্ধুবাৎসল্যের স্বভাবকেই দায়ী করা যায়। তবে একেবারে যে নিঃসঙ্গ গোয়েন্দা বঙ্গসাহিত্যে নেই, তা-ও নয়। অভিরূপ সরকারের গোয়েন্দা আদিত্য মজুমদারের সে অর্থে কোনও সাইডকিক নেই। বিমল নামের এক জন তার ‘খব্‌রি’র কাজ করে, কিন্তু তাকে কখনওই আদিত্যের ‘বন্ধু’ বলা চলে না। ব্যোমকেশ-কাহিনিতে মাঝেমধ্যে বিকাশ বলে যে ছোকরা উঁকি দিয়ে যায়, বিমলের ভূমিকাও তারই মতো। কেন আদিত্য নিঃসঙ্গ, প্রশ্ন রাখলে অভিরূপ জানালেন, “গোয়েন্দা আর সাইডকিকের সম্পর্কে অনেকটা বৈপরিত্য থাকে। আমি ইচ্ছে করেই কোনও কন্ট্রাস্ট রাখতে চাইনি।” নূপুর নামের একটি মেয়েও মাঝেমধ্যে আদিত্যকে সাহায্য করে। কিন্তু তার সঙ্গে আদিত্যের বয়সের ফারাক বিস্তর। ফলত বন্ধুত্ব নাস্তি। সমান্তরালে আবার আদিত্যের একটা মাঝারি গোছের বন্ধুজগৎ রয়েছে। তাদের মধ্যে গৌতম দাশগুপ্ত পুলিশের বেশ উচ্চপদে আসীন। আদিত্যকে সে যথেষ্ট সাহায্য করে। কিন্তু তার সঙ্গেও যে আদিত্যের নিয়মিত আড্ডা বা যোগাযোগ থাকে, তা নয়। কোনও কেস এলে আদিত্য গৌতমের শরণাপন্ন হয়। গৌতমও তার সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়ায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার উপর অভিরূপের মতে, খানিক বেশি বয়সে বিয়ে করে আদিত্য একটু ঘরকুনো হয়ে গিয়েছে। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর নিয়মিত নেই।

সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে গোয়েন্দা কি এক নিঃসঙ্গ প্রাণী? বন্ধুময় বিশ্বে সে কি একা? সমাজমাধ্যম বা অন্য কোনও সূত্রেই কিন্তু সে বন্ধুত্বের বন্ধনে বাঁধা পড়ে না। ব্যোমকেশ হয়তো ব্যতিক্রম। অজিতের সাহিত্য জগতের পরিসরে সে বড় একটা পা বাড়ায় না। কথক হিসেবে অজিত ব্যোমকেশের মামলাগুলির বিবরণ দিলেও সে-ও তদন্তের চলন অনুসরণ করেই লেখে। এই যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, এবং সমদূরত্ব বজায় রেখে চিরকুমার অজিতের বিবাহিত ব্যোমকেশের গৃহে বাস, এ উদাহরণ তো ফেলনা নয়! মিস মার্পল থেকে শুরু করে হ্যারি হোল বা ভ্যান ভিটেরেন, এরা সম্ভবত এক একটি সিল্যুয়েট। সূর্যের পড়ন্ত আভায় তাদের নিঃসঙ্গতা উদ্ভাসিত। ক্ষুরধার বুদ্ধি আর রহস্যভেদের অপার ক্ষমতাই কি তাদের বন্ধুহীন করে তোলে? প্রশ্ন থেকে যায়।

Crime Stories Byomkesh feluda Ekenbabu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy