নামে ঠান্ডা, কিন্তু তাতে কী! এ শব্দের প্রভাব বেশ সাড়া জাগানো। এক কালে আফ্রো-আমেরিকান সম্প্রদায়ের বেপরোয়া বোহেমিয়ান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করতে এ শব্দের ব্যবহার হত। এখন বাঙালি তরুণ প্রজন্মের আড্ডাতেও আকছার শোনা যায়! ‘কুল’ হওয়া তাদের কাছে এক উঁচুদরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যাঁরা সেই গুণের অধিকারী, তাঁদের সমীহের চোখে দেখেন অল্পবয়সিরা। কেউ অনুকরণ করার চেষ্টা করেন, কেউ বা গুণগ্রাহী হয়ে পড়েন। ‘কুল’ ব্যক্তিদের প্রেমেও পড়েন মানুষজন। কিন্তু ‘কুল’ হতে গেলে কী করতে হয়? এই প্রথম এক গবেষণায় তার একটি অঙ্ক কষা ‘ফর্মুলা’ পাওয়া গেল।
‘কুল’ হওয়া কাকে বলে? ‘কুল’ হওয়া মানে কি সুখে-দুঃখে অবিচল থাকতে পারার গুণ, যা শ্রীমদ্ভাগবৎগীতায় বলা হয়েছে! না কি স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারা, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে উদ্বেগকে পাত্তা না দিয়ে স্রেফ বর্তমানে বাঁচতে পারাকে ‘কুল’ বলা হবে? যাঁরা এ শব্দের প্রয়োগ করেন, তাঁদের কাছে এ প্রশ্নের জবাব চাইলে অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দিতে পারেন। কেউ বলবেন, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে বিপ্লব করাই সবচেয়ে ‘কুল’ ব্যাপার। কেউ বলবেন, যুগের হাওয়া মিলিয়ে নিজেকে বদলে ফেলা এবং তালে তাল মিলিয়ে সমান গতিতে চলতে পারাও ‘কুল’। কারও কাছে আবার সবার থেকে আলাদা ভাবে ভাবতে পারা আর তাকে বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা ‘কুল’। কেউ বলবেন, দারুণ রসবোধ থাকাকেও ‘কুল’ বলা যেতে পারে। সম্ভবত যত জনকে এ প্রশ্ন করা যাবে, তত নতুন নতুন ধারণা এবং ভাবনা পাওয়া যাবে। কিন্তু এর মধ্যে আসল কোনটি? কোন গুণটি বা গুণগুলি থাকলে সত্যিই এক দারুণ আকর্ষণীয় চরিত্রের অধিকারী হবেন?
সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি’ এর উত্তর দিয়েছে। তারা বলছে একজন মানুষের মধ্যে মোটামুটি মূলগত ৬টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই তিনি ‘কুলনেস’ রপ্ত করতে পারবেন। এই ছ’টি গুণ কী কী?
১। একস্ট্রোভার্সান অর্থাৎ খোলাখুলি কথা বলতে পারার ক্ষমতা। অর্থাৎ লুকিয়ে-চুরিয়ে কথা গোপন রেখে ভাব প্রকাশ করা নয়। একলা গুমরে মরাও নয়। মানুষের সঙ্গে খোলাখুলি মিশতে পারার ক্ষমতা। ভাবের আদানপ্রদান করার ক্ষমতা।
২। হেডোনিজ়ম অর্থাৎ যেখানে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য আপাতত হল সুখী থাকা। তা কী ভাবে পাওয়া সম্ভব তার নানা ধরনের তত্ত্ব থাকতে পারে। অবশ্যই তার খারাপ এবং ভাল দিকও আছে। কিন্তু মূল বিষয় হল বর্তমানে সুখী থাকার চরম ইচ্ছে। তবে অবশ্যই অন্যের ক্ষতি না করে।
৩। ক্ষমতা। এটি থাকলে আত্মবিশ্বাস থাকে। ক্ষমতা যে কোনও ধরনের হতে পারে। নিজের কর্মক্ষমতা, আর্থিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, বুদ্ধি এবং মেধার ক্ষমতাও আত্মবিশ্বাস জোগায়।
৪। সাহস। ভয় পেলে অর্ধেক গুণ জলে। তাই ‘কুল’ হওয়ার জন্য সাহস থাকা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে চিরাচরিতের বাইরে পা রাখার আত্মবিশ্বাস আসবে কোথা থেকে।
৫। ঔদার্য। সব কিছুকে একই দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার না করে খোলামনে বিচার করার এবং গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। একপেশে মনোভাব মোটেই ‘কুল’ নয়।
৬। আত্মনিয়ন্ত্রণ। মেজাজ হারানো, দুর্ব্যবহার, কান্নায় ভেঙে পড়া খুবই ‘আনকুল’ অর্থাৎ কি না ‘কুল’ নয়। এক জন মানুষ যিনি নিজের আচরণে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন, তিনি হেরে গিয়েও জিততে পারেন এবং বাজিমাত করতে পারেন।