Advertisement
E-Paper

পরিষেবা চেয়ে তুমুল বিক্ষোভ

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ। প্রায় দশ দিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ বহির্বিভাগও। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে নার্স বা ফার্মাসিস্টরা কাজ করেন না। এ রকমই গুচ্ছ অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে চিকিৎসকে আটকে রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০৩:০২
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইকে জটলা গ্রামবাসীর। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইকে জটলা গ্রামবাসীর। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ। প্রায় দশ দিন ধরে চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ বহির্বিভাগও। চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে নার্স বা ফার্মাসিস্টরা কাজ করেন না। এ রকমই গুচ্ছ অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে চিকিৎসকে আটকে রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা।

ঘটনাটি কাশীপুর ব্লকের সোনাথলী পঞ্চায়েতের ক্রোশজুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে। পরে ক্রোশজুড়ি গিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কাশীপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)। তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে সোনাথলী পঞ্চায়েতের পুরোটা-সহ পাশের রাঙ্গামাটি-রঞ্জনডি, হদলদা-উপড়রা, আগরডি, গৌরাঙ্গডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ২০-২২টি গ্রামের বাসিন্দা নির্ভরশীল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম পরিষেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। বাসিন্দাদের ক্ষোভের সঙ্গে সহমত রাজনৈতিক দলগুলির স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও।

এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন হাসপাতালে দেখা গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের সোনাথলী লোকাল কমিটির সম্পাদক নিত্যানন্দ মণ্ডল, বিজেপি কর্মী অজিত রায়দের। তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। এবং এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রর হাল ফেরাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভিতরে রয়েছেন চিকিৎসক অরূপ চট্টোপাধ্যায়। বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। বহির্বিভাগের বাইরে রয়েছেন জনা চারেক পুলিশকর্মী। প্রথম দিকে কিছুক্ষণ হাসপাতালে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামবাসী। পুলিশ গিয়ে তালা খোলায়। বহির্বিভাগের পাশেই অন্তর্বিভাগ। সেখানে দরজায় ঝুলছে তালা। গ্রামবাসীদের দাবি, অনেক দিন ধরেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে দশ শয্যা বিশিষ্ট এই অন্তর্বিভাগ। কল্লোল দে, প্রদীপ মণ্ডল, বিশ্বনাথ বাউরি, আভাস বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীমন্ত বাউরিরা জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক থাকলেও প্রায় দশ দিন ধরে কেউই আসছেন না। ফলে অন্তর্বিভাগের পাশাপাশি বহির্বিভাগও বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ দিন অবশ্য এসেছিলেন এক চিকিৎসক। সেই অরূপবাবু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় পড়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কিছু দিন হাসপাতালে আসতে পারিনি। বিষয়টি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানেন।’’

হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অবশ্য বিস্তর ক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালে কদাচিৎ দেখা মেলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের। পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। সামান্য কারণেও এখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয়।” হাসপাতালের নার্স ও ফার্মাসিস্টদের বিরুদ্ধেও একগুচ্ছ অভিযোগ বিএমওএইচের কাছে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কল্লোলবাবু, প্রদীপবাবুদের কথায়, ‘‘ডাক্তার না থাকা অবস্থায় কারও সামান্য কেটে গেলে বা জ্বর, পেট ব্যথা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলেও নার্সরা সরাসরি জানিয়ে দেন, ডাক্তার না থাকায় তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।”

বিক্ষোভের খবর পেয়ে এ দিন দুপুরে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ লালমোহন ভট্টাচার্যকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন বিএমওএইচ নেতাজী সিংহ সর্দার। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা। চিকিৎসক অরূপবাবুকেও ডেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন নেতাজীবাবু। পরে তিনি জানান, ক্রোশজুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দুই চিকিৎসকই অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েক দিন হাসপাতালে আসতে পারেননি বলে বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। তাঁদের কাছে অতিরিক্ত চিকিৎসক না থাকায় কাউকে এখানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। বিএমওএইচ বলেন, ‘‘এ দিন আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অরূপবাবু সপ্তাহে ছ’দিন সকাল ন’টা থেকে তিনটে পর্যন্ত বহির্বিভাগে বসবেন। অন্য চিকিৎসক আজিজুল লস্কর সপ্তাহে তিন দিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করবেন।’’

এই ব্যবস্থায় সপ্তাহে তিন দিন অন্তর্বিভাগ বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্য দফতরের কার্যত কিছুই করার নেই বলে জানান নেতাজীবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রোশজুড়ি হাসপাতালে যে সংখ্যক ডাক্তার থাকার কথা, দীর্ঘদিন ধরেই তা নেই। ফলে দু’জনকে দিয়েই কোনও রকমে কাজ চালাতে হচ্ছে। কারও পক্ষেই সপ্তাহে ছ’দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করা সম্ভব নয়। ফলে, বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ পাশাপাশি চিকিৎসক না থাকলে নার্সদের পক্ষে যতটুকু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব, তা দেওয়ার লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন বিএমওএইচ।

Agitation Hospital adra pharmacist BMOH
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy