Advertisement
০৭ মে ২০২৪
হারপ্যানজিনা সংক্রামক রোগ। তবে ভয় নেই। ঠিক মতো চিকিৎসায় সেরে যায় এ রোগ।
Herpangina

ভয় না পেয়ে সতর্ক থাকুন

সম্প্রতি হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ-এর বাড়বাড়ন্তে অনেক বাচ্চাই আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দি। দু’টিই একই ধরনের ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ।

ছ’মাস বয়স থেকে সাত-আট বছরের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি হয় রোগ দু’টি।

ছ’মাস বয়স থেকে সাত-আট বছরের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি হয় রোগ দু’টি।

ঊর্মি নাথ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০১
Share: Save:

সহপাঠী ও সমবয়সিদের সঙ্গে যত মেলামেশা করবে, কথা বিনিময় হবে ততই ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, তারা ভাগ করে নিতে শিখবে, সুস্থ ভাবে বড় হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু গত দু’বছর এই স্বাভাবিক ছন্দে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আবার তাদের পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ আসে। কিন্তু সম্প্রতি হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ-এর বাড়বাড়ন্তে অনেক বাচ্চাই আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দি। দু’টিই একই ধরনের ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। তাই মেলামেশা বন্ধ রাখতে হয়। ছ’মাস বয়স থেকে সাত-আট বছরের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি হয় রোগ দু’টি।

মল, হাঁচি, কাশি, মুখের লালার মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথের ভাইরাস। বেশ ছোঁয়াচে, তাই স্কুলে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বাড়িতে একটি বাচ্চার হলে অন্য বাচ্চাটির হওয়ার সম্ভবনা থাকে। রোগ দু’টির কারণ বলতে গিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, ‘‘হারপ্যানজিনার মতো সমান ছোঁয়াচে ও গুরুত্বপূর্ণ হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগটি। স্ট্রেন কিছুটা আলাদা তবে দু’টিই একই ভাইরাসের থেকে হয়, কক্সস্যাকিভাইরাস, এন্টারোভাইরাস এবং একোভাইরাস। প্রধানত এই তিনটে ভাইরাসই দায়ী হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ-এর জন্য। সাধারণত সাত-আট বছরের বড় বাচ্চাদের খুব একটা হয় না। তবে ব্যতিক্রমও আছে, ১০-১২ বছরের বাচ্চাদেরও হতে দেখেছি। যদিও সে রেশিয়োটা বেশ কম।’’

রোগ দু’টির লক্ষণ

জ্বর, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ-এর প্রধান লক্ষণ। জ্বর আসার পরে তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে অসুখটি শরীরে দেখা দিতে। এ সময়েই ভাইরাস আক্রান্ত বাচ্চাটির কাছ থেকে অন্য বাচ্চাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। হারপ্যানজিনা হলে জ্বর হওয়ার ক’দিন পরে গলা ও আলজিভের পাশে ছোট ছোট দানার মতো ঘা হয়। হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগেও মুখের মধ্যে একই রকম ঘা হতে দেখা যায়। তবে এ রোগের ক্ষেত্রে ইনফেকশন মুখের ভিতর ছাড়াও হাতের কনুই, নিতম্ব ও পায়ে হতে পারে। হারপ্যানজিনায় ইনফেকশন মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই এই লক্ষণগুলো দেখে বোঝা যায় হারপ্যানজিনা নাকি হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ। কিন্তু এর বাইরেও আরও একটি লক্ষণ আলাদা করে হারপ্যানজিনাকে। এই বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অর্পূব ঘোষ বললেন, ‘‘জ্বর হলে মুখের ভিতরে ভাল করে দেখতে হবে। গলার ভিতরে, আলজিভের পাশে ইনফেকশন বা ঘা সীমাবদ্ধ থাকলে সেটা হারপ্যানজিনা। কিন্তু ঘা যদি মাড়ি, জিভ, মুখের ভিতরে ছড়াতে থাকে তা হলে সেটা হারপেটিক জিনজাইভোস্টমাটাইটিস। এই রোগ কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য ভাইরাস থেকে হয়। হারপ্যানজিনা ও হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগের উপশম পদ্ধতি অনেকটা একরকম, কিন্তু হারপেটিক জিনজাইভোস্টমাটাইটিস-এর চিকিৎসা আলাদা। তাই চিকিৎসা শুরুর আগে রোগের ঠিক ডায়াগনোসিসটা খুব জরুরি।’’

চিকিৎসা

হারপ্যানজিনা বা হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ আগাম প্রতিরোধ করার কোনও ভ্যাকসিন নেই। সেভাবে কোন ওষুধও নেই। স্বাভাবিক ভাবে এই রোগ থেকে সেরে উঠতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাত দিন। এর উপশম দাঁড়িয়ে আছে প্যারাসিটামল আর সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্টের উপর। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। জ্বরে খাবার ইচ্ছে চলে যায়, গলায়, আলজিভে ঘা হয়ে ব্যথার জন্য গিলতে কষ্ট হয়। এই দু’টি কারণে বাচ্চারা একেবারে খেতে চায় না। ফলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে যায়। বিশেষ করে ফ্লুয়িড ইনটেক কমে গেলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মুখের ভিতরে ঘা থাকায় ঝাল, মশলাদার ও নুন জাতীয় খাবার দিলে তাদের যন্ত্রণা বাড়বে, তাই নরম, গলা, মিষ্টি জাতীয় খাবার দিতে হবে। যেমন পাতলা করে সুজি, গলানো আইসক্রিম ইত্যাদি। ‘‘আমি অভিভাবকদের সাজেস্ট করি গলানো আইসক্রিম দিতে। একেবারে ঠান্ডা আইসক্রিম না দিয়ে সেটা কিছুটা গলিয়ে দিলে খেতে সুবিধে হয় এবং বাচ্চারা আইসক্রিম খাওয়ার লোভে খেয়েও নেয়,’’ পরামর্শ দিলেন ডা. ঘোষ।

বাচ্চাদের এই রোগ দু’টি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। এই রোগের প্রতিরোধের জন্য যেহেতু কোনও ভ্যাকসিন নেই তাই বাচ্চাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপরে জোর দিতে হবে। স্কুল, খেলার মাঠ বা বাইরে থেকে এসে খেতে বসার আগে এবং মলত্যাগের পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে বা তাকে অভ্যেস করাতে হবে। এই অভ্যেস শুধু বাড়িতে নয়, স্কুলেও করতে হবে। বিশেষ করে টিফিন খাওয়ার আগে এবং বাথরুম ব্যবহারের পরে। অসুখ সেরে যাওয়ার পরেও কিছুদিন শরীর বেশ দুর্বল থাকে। এই সময় পুষ্টিকর খাবারের উপরে জোর দিতে হবে। তাই সম্পূর্ণ সেরে ওঠার পরই স্কুলে বা বাইরে খেলতে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে পাঠানো উচিত। অনেকের ধারণা বাড়িতে পোষ্য থাকলে এই রোগ ছড়াতে পারে। তা কিন্তু নয়, তবে বাড়িতে বাচ্চারা থাকলে পোষ্যদেরও যতটা সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। কারণ পোষ্যদের সঙ্গে বাচ্চাদের সখ্য সবচেয়ে আগে তৈরি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Herpangina Viral infection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE