Advertisement
E-Paper

দূষণের জন্য তন্দুরি খানায় নিষেধাজ্ঞা দিল্লিতে! কবাব কতটা পরিবেশ দূষণ করে? অন্য শহরেও হতে পারে এমন?

সাধারণ ধারণা বলছে, খাবারের স্বাদ এবং গন্ধের অনেকটাই নির্ভর করে তা কী ভাবে রান্না করা হচ্ছে সেই পদ্ধতির উপর। যেমন গরম অঙ্গারে ঘিয়ে মাখানো মাংস সেঁকা হলে তার গন্ধ গিয়ে মেশে মাংসের ভিতরে। তাতেই বাড়ে স্বাদ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৫
কাবাব-এ দূষণ?

কাবাব-এ দূষণ? ছবি : শাটারস্টক।

দম বিরিয়ানিকে যদি প্রেসার কুকারে রান্না করা হয়, তবে কি তাকে দম বিরিয়ানি বলা যাবে? ঠিক তেমনি কয়লার তন্দুরে ঘি মাখিয়ে ঝলসানো মাংস বা খামিরির যে স্বাদ, তা কি গ্যাসের উনুন বা বৈদ্যুতিক উনুনে রান্না করা হলে পাওয়া সম্ভব?

সাধারণ ধারণা বলছে, খাবারের স্বাদ এবং গন্ধের অনেকটাই নির্ভর করে তা কী ভাবে রান্না করা হচ্ছে সেই পদ্ধতির উপর। যেমন গরম অঙ্গারে ঘিয়ে মাখানো মাংস সেঁকা হলে তার গন্ধ গিয়ে মেশে মাংসের ভিতরে। তাতেই বাড়ে স্বাদ। তবে সে সব প্রশ্ন আর যুক্তিপূর্ণ উত্তর নিয়ে আপাতত ভাবতে রাজি নয় দিল্লি সরকার। দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তন্দুরি রান্নার পদ্ধতিতেই।

ফলে কবাব, টিক্কা, তন্দুরি রুটি বা তন্দুরি চিকেনের যে খাঁটি স্বাদ তা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন খাদ্য রসিকেরা। আর যেহেতু দিল্লি শুধু ভারত নয়, দুনিয়ার খাদ্য মানচিত্রে তার তন্দুরি খানার জন্যই বিখ্যাত, তাই ‘গেল গেল’ রব উঠেছে ভোজনরসিক মহলেও। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দূষণের দোহাই দিয়ে দিল্লিতে যা হল, তা কি অন্য শহরেও হতে পারে?

ঠিক কী বলেছে দিল্লি সরকার?

প্রতি বার শীতেই দিল্লির দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আর প্রতি বছরই সেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পদক্ষেপ করে সরকার। কখনও জোড়-বিজোড় নীতি চালু করা হয়, কখনও আবার রাশ টানা হয় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারে। তবে খাবারের উপর এ ভাবে আগে কোপ পড়েনি। এ বার পড়ল। দিল্লির পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি (ডিপিসিসি) দিন কয়েক আগেই একটি নির্দেশিকায় দিল্লির সমস্ত হোটেল, রেস্তরাঁ, ধাবা, ক্লাউড কিচেন এবং রাস্তার ধারের খাবার বিক্রেতাদের উদ্দেশে জারি করা নির্দেশিকায় বলেছে, ‘‘তন্দুরে রান্না করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বদলাতে হবে। বদলে ব্যবহার করতে হবে গ্যাসের উনুন, বৈদ্যুতিক উনুনের মতো বিকল্প পদ্ধতি।“ এয়ার প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ পলিউশন আইনের অধীনে এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তারা।

কী প্রভাব পড়তে চলেছে?

দিল্লির খাবার নিয়ে কথা বলতে হলে প্রথমেই আসে তার তন্দুরি খানার কথা। নয়াদিল্লির লাজপত নগর, করোল বাগ, সুভাষ নগরের তন্দুরি খাবারের খ্যাতি আছে। আর পুরনো দিল্লির জামা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তো বিকেল নামেই কাঠ কয়লার উনুনে কবাবের সুগন্ধে। চাঁদনি চক অঞ্চলেও বহু দোকান রয়েছে, যারা বহু যুগ ধরে খাঁটি মোগলাই এবং তন্দুরি খাবার প্রচলিত পদ্ধতিতেই বানিয়ে আসছে। পর্যটক এবং খাদ্যরসিকেরা সেই খাঁটি স্বাদ নিতে এই এলাকাতেই খেতে আসেন। এখানকার বিখ্যাত তন্দুরি খাবার হল— শিক কবাব, চিকেন টিক্কা, চাঁপ, চিকেন কবাব, তন্দুরি রোটি। দূষণ সংক্রান্ত নোটিসের পরে এই সমস্ত দোকানগুলির জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে তো বটেই, খাদ্যরসিকেরাও তাঁদের পছন্দের স্বাদ পাবেন না।

কবাব বানানোর পদ্ধতি কি দূষণের কারণ হতে পারে?

পরিবেশবিদেরা বলছেন, কয়লার উনুনের ধোঁয়া যে সাধারণ উনুনের চেয়ে বেশি, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। আর এই ধরনের উনুন ভিড়ে ঠাসা বাজার এলাকায় দীর্ঘ ক্ষণ ধরে জ্বলতেই থাকে, যা বাতাসে দূষিত কণা মেশার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শীতে যখন বাতাসের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়, তখন যদি একই এলাকায় অনেক তন্দুরি উনুন জ্বলে তবে তা বাতাসের একিউআইকে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্য শহরেও কি হতে পারে?

দিল্লির পরিবেশ দূষণের মূল কারণ কয়লার তন্দুর না হলেও দূষণ বাড়লে, তা প্রভাব ফেলতে পারে বাতাসে। অর্থাৎ বাতাসে দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, লখনউের মতো মেট্রো শহরে কি হবে? এই সব শহরেও তো তন্দুরি খাবার খাওয়ার চল রয়েছে। সেখানেও শীতে বা অন্য সময়ে বাতাসে দূষণের মাত্রা ছাড়লে এমন পদক্ষেপ করার প্রসঙ্গ উঠতে পারে! দিল্লি সেই পথ দেখিয়ে দিল।

Tandoori food ban Delhi Pollution pollution creating food
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy