Advertisement
E-Paper

ধাঁধায় ফেলছে প্লেটলেট, কমলেই সতর্ক হোন

ধোঁকা দিচ্ছে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকাও। গায়ে ব্যথা। সঙ্গে জ্বর। পাঁচ দিনের মাথায় মধ্যবয়সী টেকনোক্র্যাট এক ভদ্রলোক চিকিৎসকের পরামর্শে গেলেন রক্ত পরীক্ষা করাতে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা হল।

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৭

ধোঁকা দিচ্ছে প্লেটলেট বা অণুচক্রিকাও।

গায়ে ব্যথা। সঙ্গে জ্বর। পাঁচ দিনের মাথায় মধ্যবয়সী টেকনোক্র্যাট এক ভদ্রলোক চিকিৎসকের পরামর্শে গেলেন রক্ত পরীক্ষা করাতে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা হল। জীবাণু মিলল না। কিন্তু দেখা গেল, প্লেটলেট কমে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষে (স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লক্ষ থেকে সাড়ে চার লক্ষ)।

রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ, পর পর কিছু দিন প্লেটলেটের সংখ্যা মাপাতে হবে। ভদ্রলোক তাই করলেন। দেখা গেল, প্লেটলেট কমছেই। দ্বিতীয় দিন ৮০ হাজারে নেমেছে। তৃতীয় দিন ৪০ হাজারে। চিকিৎসক কিছুটা বিভ্রান্ত। তিনি ফের ডেঙ্গির জীবাণুর পরীক্ষা করাতে দিলেন। তখনও জীবাণু মিলল না।

ম্যালেরিয়া নয়, ডেঙ্গিও নয়। তা হলে এমন কী হয়েছে, যাতে প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত কমছে? তা হলে কি দেহের ভিতরে কোথাও রক্তপাত হচ্ছে যা বোঝা যাচ্ছে না? কিংবা অন্য বড় কোনও ধরনের সংক্রমণ কি? টেকনোক্র্যাট ভদ্রলোকের রাতের ঘুমই চলে গেল। কিন্তু শুধু প্যারাসিটামল আর প্রচুর পরিমাণে জল, স্যুপ, ফলের রস খেয়ে সাত দিনেই দিব্যি সুস্থ হলেন ওই ভদ্রলোক।

আবার সল্টলেকের এক স্কুলশিক্ষিকার ডেঙ্গি ছাড়াই প্লেটলেট কমে যাওয়ায় চিকিৎসক তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিকের কড়া ডোজ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আয়রন ট্যাবলেট, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। শিক্ষিকার বুক ধড়ফড় বেড়ে গেল। বাড়ল রক্তচাপও। শুরু হল শ্বাসকষ্ট। শেষমেশ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাঁকে। সেখানকার চিকিৎসক রসিকতা করে বলেন, ‘‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যে সব ওষুধ দরকারই ছিল না, তা দেওয়া হয়েছে।’’ সব ওষুধ বন্ধ করে কেবল তরল খাবারের পথ্যেই এখন সেরে উঠেছেন মহিলা।

দক্ষিণ কলকাতার এক কিশোরের রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা আট হাজারে নেমে যাওয়ার পরেও রোগ ধরা না পড়ায় চিন্তায় পড়েন তার চিকিৎসকেরা। প্যারাসিটামল, অধিক পরিমাণে জল খাওয়ানোর পরেও কোনও ভাবেই প্লেটলেটের সংখ্যা না বাড়ায় ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার জীবাণু আছে কি না, পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ওই কিশোরের রক্তে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্সের পরজীবী কিলবিল করছে। এর পরে শুধু ক্লোরোকুইনের নির্দিষ্ট ডোজেই সুস্থ হয়ে যায় ওই কিশোর।

প্লেটলেট কমে যাওয়ার পিছনে রহস্যটা তা হলে কী?

শারীরবিদেরা বলছেন, রক্তে প্লেটলেট কমে নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্লেটলেট কমতে দেখা যায়। শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, লোহার পরিমাণ কমে গেলে, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলে প্লেটলেট কমে। এ ছাড়া, অস্থিমজ্জার কোনও অস্বাভাবিকতা, সিরোসিস অব লিভার, লিউকোমিয়া, প্লিহা বেড়ে গেলেও প্লেটলেট কমে যেতে পারে। তা ছাড়া এইআইভি, ডেঙ্গি, চিকেন পক্সের মতো কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণেও অনেক ক্ষেত্রে কমে যায় প্লেটলেট। টেকনোক্র্যাট ভদ্রলোক বা সল্টলেকের মহিলার ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছিল।

প্লেটলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে অতিরিক্ত সময় নেয়। শরীরের ভিতরে বা বাইরে কোনও কারণে রক্তপাত শুরু হলে তা বন্ধ হতেই চায় না। ধীরে ধীরে শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকে। শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা, রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতা কমতে থাকে।

পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শরীরে সংক্রমণ হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য রক্তে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকার পাশাপাশি প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার সংখ্যা দেখে নেওয়াই দস্তুর। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বিভিন্ন রক্ত কোষের সংখ্যা বাড়ায়-কমায়। ডেঙ্গির মতো আরও কিছু ভাইরাসও প্লেটলেটের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। দেখা যাচ্ছে, পরজীবী প্রাণী প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স (ম্যালেরিয়ার) জীবাণু রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা ডেঙ্গি ভাইরাসের থেকেও দ্রুত হারে কমিয়ে দিচ্ছে। তাই কেন প্লেটলেটের সংখ্যা কমছে, তা রক্তে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতির পরীক্ষা ছাড়া বোঝা যাবে না।

পশ্চিমবঙ্গে এখন যে অপরিচিত ভাইরাস/ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে ভাইরাল ফিভার ছড়াচ্ছে, সেগুলি রক্তে গিয়ে কোন রক্ত কোষের সংখ্যার হেরফের ঘটাবে তা পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলতে পারছেন না। তাদের কোনওটার প্রকোপেই রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন পরজীবী গবেষকেরা। তাঁদের এক জনের মন্তব্য, ভুল ওষুধ প্রয়োগ করা না হলে নতুন নতুন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াগুলি অবশ্য তেমন কোনও ক্ষতি করছে না মানুষের শরীরের। শুধু বেশ দুর্বল করে দিচ্ছে।

এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমা মানেই যে ডেঙ্গি হয়েছে, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। সাধারণ সর্দি-কাশিতেও অনেক সময় প্লেটলেট কমে যায়। তাই এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কয়েক দিন বাড়িতে থেকে বিশ্রাম নিলেই কমে যাচ্ছে শরীরে জীবাণুর প্রতিক্রিয়া। যেমন হয়েছে টেকনোক্র্যাট ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে।

ভ্রম সংশোধন

১৮।০৯।২০১৫ বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকার চারের পাতায় ‘ডেঙ্গির চেনা লক্ষণ’ শীর্ষক গ্রাফিক্সে জ্বর-১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট-এর বদলে সেলসিয়াস লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।

abpnewsletters debdut ghosh thakur platelet count lab report confusion anxiety dengue symptoms dengue dengue blood test blood test report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy