E-Paper

মুখ বদল

গাল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মুখের রূপ বদল করে সুন্দর হওয়া সম্ভব। জেনে নিন বিশদে

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০৮:৩৬


কথায় বলে, পহেলে দর্শনধারী, ফির গুণবিচারী। মুখের গড়ন ব্যক্তির সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে অনেকটাই। জন্ম থেকেই অনেকের গালের গড়ন ফ্ল্যাট। কারও আবার ফোলা ফোলা গাল হয়। বয়স বাড়লে গালের চামড়া ঝুলে যায়। কসমেটিক সার্জন মনোজ খন্না বলছেন, “এই চেহারাগত অসম্পূর্ণতার কারণে অনেকেই হীনম্মন্যতায় ভোগেন। মিডিয়া বা বিনোদন দুনিয়ায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। মুখের সেই কাঙ্ক্ষিত ভারসাম্য ও শৈল্পিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারে গাল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বা চিক ইমপ্লান্ট।”

চিক ইমপ্লান্ট কী?

এক ধরনের কসমেটিক বা প্লাস্টিক সার্জারি, যার মাধ্যমে গালের হাড়ের উপরে কৃত্রিম প্রতিস্থাপক বসানো হয়। এতে গাল উঁচু দেখায়, হাড়ের গঠন স্পষ্ট হয়। মুখে একটা স্কাল্পটেড লুক বা ভি-শেপ আসে, যা অনেকেরই পছন্দের। চিক ইমপ্লান্টেও মুখকে তেমনই একটা গড়ন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কসমেটিক সার্জন ডা. রঞ্জন টন্ডন বলছেন, “দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণেও অনেকের মুখ বিকৃত হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রেও এই চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে লাগে।”

ব্যাখ্যা

এ ক্ষেত্রে গালের ভিতরে হাড়ের উপরে সিলিকন বা মেডপোর ইমপ্লান্ট করা হয়। মুখের ভিতরের দিকে সাধারণত উপরের চোয়াল বা চোখের নীচে একটু কেটে বা ইনসিশন করে সেখানে কৃত্রিম প্রতিস্থাপনটি বসানো হয়। এতে গাল উঁচু, প্রাণবন্ত ও আকর্ষক দেখায়। ডা.টন্ডন বলছেন, “গালের কাঠামো বদলের পাশাপাশি তা সম্পূর্ণ মুখের ভারসাম্য ঠিক করে।” আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারিতে এই পদ্ধতি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই প্রতিস্থাপন দু’ধরনের হয়—

  • মালার ইমপ্লান্ট: গালের হাড় উঁচু করতে করা হয়
  • সাবমালার ইমপ্লান্ট: গালের নীচের অংশ ভরাট করে

দুই ধরনের প্রতিস্থাপনও একসঙ্গে করা যায়। মালার ইমপ্লান্টের সঙ্গে অনেক সময়ে ফ্যাট ট্রান্সফার বা ফ্যাট রিমুভালেরও পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সবটাই ব্যক্তির মুখের গড়ন, তাঁর চাহিদার উপরে নির্ভর করে ঠিক করা হয়।

সমস্যা

এই সার্জারি তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তবে কিছু সাধারণ ঝুঁকি রয়েছে—

  • সার্জারির পরে সতর্ক না হলে বা নিয়ম মেনে না চললে, অনেক সময়েই সংক্রমণের ভয় থেকে যায়।
  • ইমপ্লান্ট নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যাওয়ার ভয়ও থাকে।
  • দক্ষ চিকিৎসকের কাছ থেকে না করালে অনেক সময়েই দু’দিকের গালে অসামঞ্জস্য দেখা যায়।

এ ধরনের সমস্যা হলে ফের সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপ

বয়সজনিত কারণে হওয়া গালের নীচের ফাঁপা অংশ ভরাট করতে কিংবা সেখানে নরম, স্বাভাবিক ভলিউম আনতে বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপও করাতে পারেন। রিকনস্ট্রাকটিভ এই সার্জারিতে প্রাকৃতিক চর্বিযুক্ত বুকাল ফ্যাট টিসুকে মুখের ভিতরের অন্য কোনও ক্ষতস্থান বা ফাঁকা অংশ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। বুকাল ফ্যাট প্যাড হল মুখের ভিতরে, গালের গভীরে অবস্থিত এক ধরনের নরম চর্বিযুক্ত টিসু, যা গালকে পূর্ণতা দেয়। বয়স যত কম থাকে, তত এই বুকাল ফ্যাট মানুষের মুখে বেশি থাকে। এই ফ্যাট প্যাডের কারণেই অল্প বয়সে বাচ্চাদের গাল ফোলা হয়। গালের ফাঁপা অংশ ভরাট করা ছাড়াও ওরাল ক্যাভিটি বা দাঁত তোলার পরে ম্যাক্সিলারি সাইনাসে ক্ষত তৈরি হলে, তা নিরাময়েও কাজে লাগে বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপ। এ ছাড়াও, দুর্ঘটনায় চোয়ালে কোনও রকম আঘাত পেলে, গালের ভিতরে কোনও ভাবে ছিদ্র তৈরি হলে বা মুখের ভিতরের টিউমার অপসারণের পর টিসু ঢাকতে এই সার্জারি করা হয়ে থাকে। এতে মুখের ভিতরের ক্ষত মেরামত হয়, তবে বাহ্যিক রূপে তা নজরে আসে না।

  • পদ্ধতি: এ ক্ষেত্রে গালের ভিতরের অংশে ইনসিশন করে প্রয়োজন মতো পরিমাণে বুকাল ফ্যাট প্যাড বার করে নেওয়া হয়।
  • সুবিধে: এতে ব্যক্তির নিজের শরীরের ফ্যাটই ব্যবহার করা হয়। ফলে, তার সঙ্গে শরীরের আলাদা করে মানিয়ে নেওয়ার দরকার পড়ে না। তা ছাড়া, এই ফ্ল্যাপ রক্তচলাচল সম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।

অনেকেই মুখের ওজন কমাতে চান বা চান মুখকে যেন খানিক রোগা দেখায়। বুকাল ফ্যাট প্যাড অপসারণ তাঁদের জন্য ভাল। অল্প পরিমাণে বুকাল ফ্যাট প্যাড বার করে নিলেই কিন্তু মুখ অনেকটা মেদহীন দেখায়। বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপ স্থায়ী প্রক্রিয়া। একবার সফল ভাবে করা হলে আর তা করার প্রয়োজন হয় না। বুকাল ফ্যাট একবার অপসারণ করা হলে, তা আর তৈরিও হয় না। তবে অল্প বয়সে এই ফ্যাট অপসারণ করালে সময়ের সঙ্গে মুখের চামড়া ঝুলে পড়তে পারে। অতিরিক্ত ফ্যাট অপসারণ করে ফেললে গালে গর্ত তৈরি হতে পারে। বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপ বা রিমুভালের পরে গাল প্রতিস্থাপন করানোর পরিকল্পনা থাকলে কয়েক মাস অপেক্ষা করা জরুরি।

খুঁটিনাটি

আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা মতো সময় লাগে এই অপারেশনে। রোগীকে অজ্ঞান করা বা ভর্তি করার দরকার পড়ে না। লোক্যাল অ্যানাস্থেশিয়াতেই কাজ হয়। সার্জারির পরে সাময়িক ব্যথা বা অসাড় ভাব থাকতে পারে। তবে তা কেটে যায় কয়েক ঘণ্টাতেই। প্রথম কয়েকটা দিন সাধারণত নরম বা তরল ডায়েটে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এই অস্ত্রোপচারের পরে ওরাল হাইজিনের দিকে নজর দেওয়া জরুরি, নয়তো সংক্রমণ হওয়ার ভয় থেকে যায়। তিন-চার সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান রোগী। ফলাফলও দৃশ্যমান হয়।

তুলনায় বিকল্প পদ্ধতি

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক খন্না জানালেন, অনেকেই মুখের রূপ বদলে আজকাল ডার্মাল ফিলার বা ফ্যাট গ্রাফ্টিং করান। এতে তুলনায় খরচ কম হয় অনেকটাই। তবে এ দুইয়ের তফাত বোঝা জরুরি। ডার্মাল ফিলারে মুখের নির্দিষ্ট যে অংশ ভরাট করতে চাইছেন বা ভলিউম বাড়াতে চাইছেন, সেখানে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা স্কাল্পট্রা ইত্যাদি ফিলার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তাতে সাময়িক ভাবে মুখের ভলিউম বাড়ে, মুখ ভরাট দেখায়। তবে এই বদল ছ’-আঠেরো মাস অবধি টেকে। ফ্যাট গ্রাফ্টিংয়ে ব্যক্তির শরীরের অন্য অংশ থেকে চর্বি নিয়ে গাল ভরাট করা হয়। এই পদ্ধতিও স্থায়ী নয়, বছর পাঁচেক টিকতে পারে। তবে ব্যক্তির নিজের শরীরের চর্বি ব্যবহার করায় এতে সংক্রমণ বা অন্য ভয় থাকে না। তুলনায় চিক ট্রান্সপ্লান্ট ও বুকাল ফ্যাট প্যাড ফ্ল্যাপ কিন্তু স্থায়ী প্রক্রিয়া।

শুধু বিনোদন দুনিয়ার মানুষজন নয়, গাল প্রতিস্থাপন চিকিৎসা করাচ্ছেন সাধারণ মানুষও। তবে অপারেশন করানোর আগে ভাল করে দেখে বুঝে নেওয়া জরুরি। এখন থ্রিডি অ্যাপের মাধ্যমে সার্জারির পরে মুখ কেমন দেখাবে, তা আগেভাগে জেনে নেওয়া সম্ভব। তাই সার্জারি করানোর আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জনের পরামর্শ নিন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Beauty

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy