মুখের আকারের মতোই একটা পাতলা-নরম কাপড়ের মতো জিনিস, যা ত্বকের উপযোগী বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর সিরামে ভেজানো অবস্থায় পাওয়া যায়। দেখতে ফেশিয়াল মাস্কের মতোই। প্যাকেটবন্দি অবস্থায় থাকে। ব্যবহারে ঝক্কি নেই। শুধু মুখ পরিষ্কার করে শিটটি চোখ, নাক, ঠোঁটের জায়গা বুঝে খাপের মতো বসিয়ে দিলেই হল। কোনও ঝঞ্ঝাট নেই। মিনিট ১৫ বিশ্রাম নিন, গান শুনুন কিংবা ঘুমিয়েও পড়তে পারেন।
রূপচর্চার জগতে এই জিনিসই পরিচিত ‘শিট মাস্ক’ নামে। এক সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যচর্চায় পরিচিত শিট মাস্কের এখন রমরমা দেশ-বিদেশের প্রসাধনী জগতে। তার কারণও আছে। ঘড়ি ধরে মালিশের দরকার হয় না। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও ব্যবহার সহজ। তা ছাড়া, ছোট্ট প্যাকেটটি ব্যাগে বা পার্সে ভরেও নিয়ে যাওয়া চলে। তা ছাড়া দামেও সাধ্যের মধ্যেই।
রোদের তাপে মুখ কালো হয়ে গিয়েছে, কিংবা আর্দ্রতার অভাবে শুষ্ক হয়ে গিয়েছে ত্বক, বলিরেখা হোক বা ব্রণ, সমস্যা ভেদে রয়েছে রকমারি শিট মাস্ক। দিন যত যাচ্ছে, ততই প্রয়োজন অনুযায়ী শিটের ধরনে এবং মাস্কের তরলেও নতুন উপাদান যোগ হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কত রকমের শিট মাস্ক পাওয়া যায়?
মাইক্রোফাইবার শিট মাস্ক: সচরাচর যে শিট মাস্ক বাজারে মেলে, সেটি সাদা রঙের মাইক্রোফাইবারের। তার মধ্যেই চোখ, মুখ, ঠোঁটের অংশটি কাটা থাকে, যাতে এই অংশগুলি বাদ দিয়ে মুখে সেটি বসিয়ে দেওয়া যায়। সিরাম বা ত্বকের জন্য ভাল, এমন অ্যাসিড, এসেনশিয়াল অয়েলে ভেজানো থাকে মাস্কটি। এটি তুলনামূলক ভাবে সস্তা।
হাইড্রোজ়েল মাস্ক: মাইক্রোফাইবার শিট মাস্কের তুলনায় বেশি পাতলা মাস্কটি। তবে মুখের উপর বসানোর পর এটি অনেক বেশি স্বচ্ছ দেখায়। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এটি বিশেষ ভাবে সহায়ক এবং একই সঙ্গে আরামদায়ক।
বায়ুসেলুলোজ: ত্বকের পক্ষে ভাল এমন ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা তৈরি হয় বায়ুসেলুলোজ শিট মাস্ক। এটি পরিবেশবান্ধব পলিমার দিয়ে তৈরি। ত্বকের পক্ষে উপকারী, এটি মাইক্রোফাইবার শিট মাস্কের চেয়ে গুণমানে বেশি ভাল। এই শিট মাস্কের তরল মুখ থেকে দ্রুত উবে যায় না।
ফয়েল শিট মাস্ক: এতে থাকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল। যেটি শিট মাস্কের উপরে বসিয়ে দেওয়া হয়। শিট মাস্কে ব্যবহৃত তরল যাতে মুখ থেকে দ্রুত উবে না যায়, তরলের গুণাগুণ মুখ যথাযথ পায়, সে জন্য এটির ব্যবহার। রুক্ষ ত্বকের জন্য এ ধরনের মাস্ক বিশেষ উপযোগী।
নিট মাস্ক: হাতে বোনা ১০০ শতাংশ সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি হয় মাস্কটি। মাইক্রোফাইবার মাস্কের চেয়ে এর দামও অনেক বেশি। ত্বককে দ্রুত আর্দ্র করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
অ্যাম্পুল শিট মাস্ক: এতে শিট ছাড়াও থাকে অ্যাম্পুল। যার মধ্যে থাকে সিরাম। প্রথমে সেটি মুখে লাগিয়ে হালকা মালিশ করতে হয়। তার পর ব্যবহার করতে হয় শিটটি। এতে ত্বকের গভীরে যায় সিরাম। দ্রুত মুখের জেল্লা ফেরাতে এটি কাজ করে। তা ছাড়া এটি দাগছোপ ও বলিরেখা দূর করে।
ক্লে-চারকোল শিট মাস্ক: অন্য শিট মাস্ক সাদা হলেও, এটি হয় কালো রঙের। ক্লে অথবা চারকোলে সমৃদ্ধ শিট মাস্ক ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল, দূষিত পদার্থ শোষণ করতে সাহায্য করে। মৃত কোষও দূর করতে সাহায্য করে এটি।

বাবলিং শিট মাস্ক। ছবি:ফ্রিপিক।
বাবলিং শিট মাস্ক: এটিরও রং হয় কালচে। ত্বক থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে মাস্কটি। চারকোল দিয়েই তা তৈরি হয়। এর মজা হল, মিনিট ১৫ মুখে রাখার পর সাবানের মতো ফেনা হয় যায়। ত্বক গভীর ভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এটি। এই ফেনা ভাল করে মুখে মাসাজ করে মুখ ধুয়ে নিলে নিমেষে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
তবে এর বাইরেও নানা ধরনের শিট মাস্ক রয়েছে।
কী কী উপাদান থাকে এতে?
শিট মাস্কে ত্বকের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড, সিরাম ব্যবহার হয়। সেই তালিকায় থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সুইট আমন্ড অয়েল এবং রাইস ওয়াটার, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিসিলিক অ্যাসিড কিংবা ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড-যুক্ত উপাদান।
ব্যবহারবিধি:
শিট মাস্ক সব সময় পরিষ্কার মুখে ব্যবহার করা দরকার। নির্দিষ্ট শিট মাস্ক ছাড়া, এটি ব্যবহারের পর মুখ ধোয়ার প্রয়োজন হয় না। বরং শিট মাস্কে থাকা তরল হালকা হাতে মালিশ করে ত্বকে মিশিয়ে দিতে হয়।