Advertisement
E-Paper

স্বাধীনতা দিবসে মোদীর পাগড়িতে গুজরাতি কন্যাদের বিয়ের ঐতিহ্য! কী কাহিনি ওই গেরুয়া কাপড়ের

কখনও তিনি সোনার সুতোয় নিজের নামের মনোগ্রাম করা মহার্ঘ স্যুট পরেন, তো কখনও গেরুয়া বস্ত্র মুড়ে ধ্যানে বসেন কেদারনাথ কিংবা কন্যাকুমারীতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাজ তাই আলোচ্য।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৩৫
মোদীর পাগড়ির কাপড়ের নেপথ্যে কোন কাহিনি?

মোদীর পাগড়ির কাপড়ের নেপথ্যে কোন কাহিনি? ছবি : পিটিআই।

স্বাধীনতা দিবসে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী বললেন, সে দিকে যেমন নজর থাকে, তেমনই সজাগ দৃষ্টি থাকে তিনি কেমন সাজলেন, সে দিকেও। কারণ, মোদী হলেন সেই প্রধানমন্ত্রী, যিনি সাজকে বরাবর তাঁর নিজস্ব ‘রাজনৈতিক সত্তা’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করে এসেছেন।

কখনও তিনি সোনার সুতোয় নিজের নামে মনোগ্রাম করা মহার্ঘ স্যুট পরেন, তো কখনও গেরুয়া বস্ত্র মুড়ে ধ্যানে বসেন কেদারনাথ কিংবা কন্যাকুমারীতে। কখনও আবার মাথায় ফেল্ট হ্যাট আর গায়ে জংলা ছাপের টি-শার্ট আর কার্গো প্যান্টে জঙ্গলসাফারিতে গিয়ে ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফার’। এ ছাড়া প্রতি স্বাধীনতা দিবসে এবং সাধারণতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় তাঁর নিত্যনতুন শিরসজ্জা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বার বার। কারণ সেখানেও তিনি বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। যা আবার অনেক সময়ে বিরোধী মহলে সমালোচিত হয়েছে 'ভোটের আগের রণকৌশল' বলেও। তবে শুক্রবার ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য মোদী বেছে নিয়েছিলেন তাঁর নিজের রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ঘরচোলা কাপড়ের পাগড়ি। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গুজরাতের মেয়েদের বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রাচীন রেওয়াজ।

৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য মোদী বেছে নিয়েছিলেন তাঁর নিজের রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ঘরচোলা কাপড়ের পাগড়ি।

৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য মোদী বেছে নিয়েছিলেন তাঁর নিজের রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ঘরচোলা কাপড়ের পাগড়ি। ছবি: পিটিআই।

বাঙালি বিয়েতে যেমন সাদা লাল অথবা হলুদ শাড়ি পরার চল, গুজরাতেও তেমনই বিয়ে মানেই বাড়ির মেয়ে-বউরা ঘরচোলা শাড়ি পরবেনই। গুজরাতিরা মনে করেন, এই শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মেয়েদের বিয়ের পরে এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়িতে যাওয়ার রীতি। রয়েছে মেয়েকে দেওয়া গুরুজনের আশীর্বাদও। সেই রীতিকে মাথায় রেখেই শাড়ির নামকরণও। যা আদতে দু’টি গুজরাটি শব্দের মিলমিশ— ‘ঘর’ আর ‘চোলা’।

‘ঘর’ শব্দটি হিন্দি এবং গুজরাতি ভাষায় বাড়ি অর্থেই ব্যবহার করা হয়। ‘চোলা’ শব্দটির অর্থ হল পরিধান। বাড়ি বদলালে মেয়েদের পোশাকেও পরিবর্তন আনতে হয়। আপনজনের কাছে যা নিয়ে মাথাব্যথা থাকে না, তা নিয়ে বাড়তি সচেতন থাকতে হয় সদ্যপরিচিত এবং স্বল্পপরিচিতদের সামনে। সে কথাই মনে করিয়ে দেয় ঘরচোলা।

এ শাড়ির বৈশিষ্ট্য হল শাড়ি জুড়ে থাকে জরির চৌখুপী নকশা। রঙিন শাড়ির উপর কখনও সেই জড়ির চৌকো খোপের ভিতরে থাকে মন্দির, পশু-পাখি বা আল্পনার মোটিফ। কখনও আবার থাকেও না। গুজরাতিরা মনে করেন, ওই প্রতিটি চৌকো ঘর মেয়ের জন্য আশীর্বাদের প্রতীক। আর প্রতিটি ঘরের মধ্যে থাকা মোটিফ শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং স্বামীর ভালবাসার আশীর্বাদের ইঙ্গিত বহন করে।

এ কাপড়ের বৈশিষ্ট্য হল শাড়ি জুড়ে থাকে জরির চৌখুপী নকশা।

এ কাপড়ের বৈশিষ্ট্য হল শাড়ি জুড়ে থাকে জরির চৌখুপী নকশা। ছবি: পিটিআই।

এ শাড়ি মূলত বোনা হয় গুজরাতের জামনগর এবং রাজকোটে। সেখানেই রয়েছেন এই বিশেষ ধরনের শাড়ি তৈরির দক্ষ তাঁতীরা। যাঁরা সিল্ক, সুতি, এমনকি, কোটা শাড়িতেও সোনা এবং রূপোর সুতোয় চৌখুপি ঘর বোনেন। তার পরে সেই শাড়ি রং করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কখনও বাঁধনি, কখনও লেহেরিয়া, আবার কখনও টাই অ্যান্ড ডাই শিল্পীদের কাছে। উজ্জ্বল রঙে জরির কাজের ওই নকশা তোলা ঘরচোলা শাড়ি খাঁটি জরির হলে তার দাম শুরু হয় ১০ হাজার টাকা থেকে।

৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে সেই ঘরচোলারই পাগড়ি পরেছিলেন মোদী। তাঁর পাগড়ির কাপড়ে ঘরচোলার জরির চৌখুপী নকশা ছিল গেরুয়া রঙের কোটা কাপড়ের উপর। এ বছর লালকেল্লায় মোদীর পোশাকে গেরুয়ার আধিক্যই ছিল বেশি। সাদা কুর্তা আর চোস্ত পাজামার সঙ্গে গেরুয়া রঙের নেহেরু জ্যাকেট আর গলায় জাতীয় পতাকার তিন রঙের উড়নি নিয়েছিলেন মোদী। মাথায় বেঁধেছিলেন ওই ঘরচোলা গেরুয়া উড়নি।

নেপথ্যে কোনও স্পষ্ট ভাবনা না-ও থাকতে পারে। আবার এ-ও ঠিক, এ বছর দেশের নারীশক্তির কথা নানা ভাবে প্রদর্শন করছে কেন্দ্র।

নেপথ্যে কোনও স্পষ্ট ভাবনা না-ও থাকতে পারে। আবার এ-ও ঠিক, এ বছর দেশের নারীশক্তির কথা নানা ভাবে প্রদর্শন করছে কেন্দ্র। ছবি: পিটিআই।

হঠাৎ গুজরাতি বিয়েতে কন্যাকে দেওয়ার আশীর্বাদক কাপড় মোদী মাথায় কেন? তার নেপথ্যে কোনও স্পষ্ট ভাবনা না-ও থাকতে পারে। আবার এ-ও ঠিক, এ বছর দেশের নারীশক্তির কথা নানা ভাবে প্রদর্শন করছে কেন্দ্র। অপরেশন সিঁদুরের সময়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, উইং কম্যান্ডার ভমিকা সিংহের সাংবাদিক বৈঠক থেকে শুরু করে মোদীর বাসভবনে সিঁদুর বৃক্ষ রোপণ, মাস কয়েক আগে ভোপালে নারী ক্ষমতায়নের মেগা কনফারেন্সে সিঁদুররঙা শাড়িতে হাজারো মহিলার মোদীকে অভ্যর্থনা— সবেতেই লুকিয়ে আছে দেশের মহিলাদের কথা। স্বাধীনতা দিবসের পাগড়িতেও যদি তা থাকে, তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

Independence Day 2025 PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy