গাড়ি এসে থামল ভিড়ের মাঝে। দরজা খুলে লাল গালিচায় কেবল দু’টি পা আগে বাইরে পড়ল। তার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে এল বাকি শরীর। পরনে জমকালো, চোখ ধাঁধানো পোশাক। গয়নাগাটির বহর গোটা শরীরে। সকলের চোখ বিশেষ করে পোশাকের দিকে। কখনও গুঞ্জনে, কখনও বা উচ্চস্বরে উঠে এল পোশাকের নেপথ্য কারিগরের নাম। অর্থাৎ পোশাকশিল্পী। তার পর একে একে সাজের অন্যান্য ধাপে গেল চোখ। হার, কানের দুল, নাকছাবি, ব্রেসলেট অথবা জুতো। এ বারে প্রশ্ন উঠল, এই গোটা সাজ কার মস্তিষ্কপ্রসূত? নিজের সাজ আবার অন্য কারও কেন হবে?
বিশেষ অনুষ্ঠানে বিশেষ সাজের জন্য পেশাদার ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। তখন সাজ সম্পর্কে নিজের ভাবনা খুব বেশি জায়গা পায় না। তা সে ঐশ্বর্যা রাই-ই হোন বা আলিয়া ভট্ট, হৃতিক রোশনই হোন বা শাহরুখ খান। সেই পেশাদার ব্যক্তিই সজ্জাশিল্পী। তাঁদের পারিশ্রমিকও তেমনই আকাশছোঁয়া। কিন্তু কাউকে সাজানোর জন্য এত টাকা কেন নেন? সম্প্রতি ফ্যাশন জগতের খুঁটিনাটি সম্পর্কে খুলে বললেন বলিউড অভিনেত্রী রকুল প্রীত সিংহ।
চকচকে লাল গালিচায় বা কোনও প্রচ্ছদে যে নিখুঁত সাজগোজ দেখা যায়, তার নেপথ্যে থাকে বিশাল খরচ ও পরিকল্পনা। অভিনেত্রী রকুল জানিয়েছেন, তারকাদের স্টাইলিং আদপেই সস্তা নয়। একটি মাত্র সাজের জন্য খরচ শুরু হয় ২০ হাজার টাকা থেকে। আর বিশেষ অনুষ্ঠানে তা এক লাফে এক লক্ষ টাকারও বেশি ছুঁয়ে যায়।
অনেকের ধারণা, সজ্জাশিল্পীর কাজ কেবল পোশাক বাছাই করা। কিন্তু আসলে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা একটি দল। সজ্জাশিল্পী নিজে, তাঁর সহকারী, চিত্রগ্রাহক, কেশসজ্জাশিল্পী এবং রূপটানশিল্পী। রকুল তাঁর কেশসজ্জাশিল্পী এবং রূপটানশিল্পীর সঙ্গে বহু বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁরা রকুলের পরিবারেরই অংশ এখন। তাই অনেক সময় তাঁরা পারিশ্রমিকও নেন না।
লাল গালিচায় বা কোনও বড় অনুষ্ঠানে যখন তারকারা কোনও পোশাকশিল্পীর বানানো পোশাক পরে আসেন, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, এ পোশাক কি বিনামূল্যে পাওয়া যায়, না কি ভাড়া করতে হয়? না কি একেবারে কিনেই নিতে হয় সে পোশাক? অনেক সময়ে তারকাদেরই মস্করা করতে শোনা গিয়েছে, ভাড়ার পোশাক, ফেরত দিতে হবে। তা ছাড়া মানুষের ধারণা, যে পোশাকশিল্পীর বানানো পোশাক পরেছেন তারকা, পুরো জগতের সামনে তাঁর শিল্পের প্রদর্শনী হয়ে যাচ্ছে। তাই নিশ্চয়ই বিনামূল্যেই পোশাক দেওয়া হয় তারকাদের।
রকুলের দাবি, এটি আদপে ভুল ধারণা। তারকারা নাকি সব সময় ডিজ়াইনার পোশাক বিনামূল্যে পান। রকুলের ভাষায় বললে, ‘‘সজ্জাশিল্পী নিজে পুরো আয়োজন সামলান। পোশাক আনা-নেওয়া, কুরিয়ারের খরচ, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হলে সেই পোশাকের শুল্ক ও পরিবহণ খরচ, সব কিছুর দায় তাঁরই। অনেক সজ্জাশিল্পী জনপ্রিয় তারকাদের সাজাতে আগ্রহী হন, কারণ তাতে তাঁদের ব্র্যান্ড লাইমলাইটে আসে।’’ কিন্তু তা বলে সব সময় বিনামূল্যে পোশাক নেওয়া রকুলের পছন্দ নয়। তাই মাঝে মাঝেই তিনি নিজের পছন্দের পোশাক কিনে নেন সজ্জাশিল্পী বা পোশাকশিল্পীর থেকে। নয়তো নৈতিকতায় আটকায় অভিনেত্রীর।