শাড়ির কুঁচি-আচল হোক বা অবাধ্য অন্তর্বাস— সেফটিপিন নিরাপদে সামলে দিতে পারে। আবার তেমন তেমন পরিস্থিতিতে বিপদে পড়লেও উদ্ধারকর্তা হয়ে হাজির হতে পারে সেফটিপিন। জুতোর ছিঁড়ে যাওয়া স্ট্র্যাপ থেকে ছিঁড়ে যাওয়া জামা, সবই কাজ চালানোর মতো জোড়া লাগিয়ে দিতে ওস্তাদ! সেই হিসাবে সেফটিপিন সত্যিই অমূল্য! কিন্তু ইটালির ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাডা সেই অমূল্য সেফটিপিনকে মহার্ঘ বানাল! ফলে সেফটিপিনও ‘জাতে উঠে’ পরিণত হল বিলাসদ্রব্যে।
একটা সেফটিপিনের দাম কত হতে পারে? সাধারণ ইস্পাতের তৈরি সেফটিপিন দোকানে কিনতে গেলে ১০ টাকায় দু’টি পাতা, অর্থাৎ ২০টি পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে এক একটি সেফটিপিনের দাম পড়ছে আট আনা করে। পেতলের মাঝারি মাপের সেফটিপিনের দাম তার চেয়ে সামান্য বেশি। ৫০টির প্যাকেট পাওয়া যায় ১০০ টাকায়। অর্থাৎ, প্রতিটির দাম ২ টাকা করে। কিন্তু এ সব হল গিয়ে অতি সাধারণ মানের এবং দামের সেফটিপিন। এর থেকে দামি সেফটিপিনও পাওয়া যায়! দেখতে বাহারি। কোনওটিতে মুক্তো পুঁতি গাঁথা, কোনওটিতে আটকানো থাকে নানা রকমের পাথর। কাগজ, সুতো, ধাতুর নকশাও থাকে কোনও কোনওটিতে। সেই সব সেফটিপিনের জন্য ৫০০-৬০০, এমনকি ১০০০ টাকাও ব্যয় করেন ফ্যাশন সচেতনেরা। তবে প্রাডা বাজারে যে সেফটিপিন আনল, তার দাম ৭৭৫ ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় কিনতে দাম পড়বে প্রায় ৬৯,০০০ টাকা!
৭৭৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে ক্রোচেট সেফটিপিন ব্রোচ। ছবি: সংগৃহীত।
এই প্রাডাই মহারাষ্ট্রের কোলাপুরি চপ্পলের নকশা বেমালুম নকল করে চটি বানিয়ে তার দাম ধার্য করেছিল দেড় লক্ষ টাকা। যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। এ বার তারা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল সেফটিপিনকে বিলাস দ্রব্যে পরিণত করে।
কী এমন আছে প্রাডার ৬৯ হাজারি সেফটিপিনে?
প্রাডা যে সেফটিপিনটি বাজারে এনেছে সেটি আসলে একটি সেফটিপিন ব্রোচ। দৈর্ঘ্যে ৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ, তিন ইঞ্চির সামান্য বেশি। তৈরি হয়েছে ভাল মানের পিতল দিয়ে। সেই সেফটিপিনের এক দিকে দু’রঙের উল সোজা-উল্টো করে এক কাঁটা বোনা। খুব কঠিন কোনও নকশা নয়। চার ঘর খয়েরি হলে চার ঘর আকাশি কিংবা মিষ্টি গোলাপির সঙ্গে পেস্তা সবুজের রং মিলন্তি। অথবা কমলার সঙ্গে বাদামি উলের মিলিজুলি। নকশা বলতে ওটুকুই। এর সঙ্গে প্রাডার লোগো দেওয়া তিনকোনা পিতলের টুকরো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সেফটিপিনের এক পাশে। এই পিনেরই দাম হয়েছে ৬৯,০০০ টাকা! যা দেখে আলোচনা শুরু করেছে গোটা দুনিয়া।
দু’রঙের উল সোজা-উল্টো করে এক কাঁটা বোনা। সঙ্গে প্রাডার লোগো দেওয়া তিনকোনা পিতলের টুকরো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
কে কী বলছেন?
৬৯ হাজারি সেফটিপিন শুনে যে প্রতিক্রিয়া আসা সবচেয়ে বেশি স্বাভাবিক, তার সংখ্যাই বেশি। তবে সকলে ওই ভাবনার সমালোচনা করেননি। তাঁরা বলছেন, প্রাডার প্রতিষ্ঠাতা মারিও প্রাডার দৌহিত্রী তথা প্রাডার প্রধান নকশাকার মিউচা বিয়ানসি প্রাডা বরাবরই সাধারণ এবং অতি পরিচিত জিনিসকে শিল্পের সাহায্যে বিলাসদ্রব্যের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। যদিও এই প্রশংসকদের সংখ্যা সীমিত। সমাজমাধ্যমে হইহই করে নিন্দা করছেন বহু সমালোচক। কেউ লিখছেন, ‘‘এর থেকে ভাল নকশা আমার দিদা করতেন।’’ আবার কেউ বলছেন, ‘‘এটা দেখে আমার ক্লাস ফোরের উল বোনা শেখার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।’’ এক সমাজমাধ্যম প্রভাবী আবার এ নিয়ে একটি রিল বানিয়ে বলেছেন, ‘‘তোমার পয়সা আছে অথচ খরচ করতে পারছ না, কী ভাবে ওড়াবে? প্রাডার এই সেফটিপিনের একটা সংগ্রহ বানিয়ে নিতে পারো!’’