নিউ ইয়র্ক সিটিতে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই সেজেগুজে লাল গালিচায় নেমে পড়বেন দেশ-বিদেশের তারকারা। হলিউড, বলিউড তো বটেই, অন্যান্য দেশের রুপোলি জগতের বাছাই করা অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং ফ্যাশন বিগ্রহেরাও দুনিয়ার নজর কাড়বেন। তারকাদের ‘অন্য রকম’ সাজ দেখতে আগ্রহীরা ডিজিটাল মাধ্যমের পর্দায় চোখ রাখবেন। দেখবেন, হলিউডের তারকাদের পাশাপাশি বলিউডের শাহরুখ খান, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, কিয়ারা আডবাণী, দিলজিৎ দোসাঞ্জেরা ছবিশিকারিদের সামনে দিয়ে ঢুকছেন নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটান মিউজ়িয়াম অফ আর্টে। কিন্তু তার পরে? মিউজ়িয়ামের দরজার ও পারে এই সেজেগুজে আসা আমন্ত্রিতেরা কী করবেন? সে প্রশ্নের উত্তর বাইরের দর্শকদের জানা বারণ। জানতে দেন না আন্তর্জাতিক তারকাদের ওই ফ্যাশন প্রদর্শনী ‘মেট গালা’র আয়োজকেরাই। বরং অনুষ্ঠানটি সুচারু এবং নিখুঁত করার জন্য আন্তর্জাতিক তারকাদেরও মেনে চলতে হয় বেশ কিছু নিয়ম, যা বেঁধে দেন মেট গালা কর্তৃপক্ষই।
কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয় মেট গালায়?
শাহরুখ খান।
ফোন নয়, নিজস্বীও নয়
মেট গালা ফ্যাশন প্রদর্শনীর পরে মিউজ়িয়ামের ভিতরে আমন্ত্রিত তারকাদের জন্য থাকে প্রাইভেট ডিনারের বন্দোবস্ত। তার আগে মিউজ়িয়ামের বিশেষ প্রদর্শনী সফর, আমন্ত্রিতদের মনোরঞ্জনের জন্য অনুষ্ঠানও। কিন্তু এর কোনওটিরই ছবি বা ভিডিয়ো শেয়ার করতে পারেন না তারকারা। কারণ, মেট গালার অনুষ্ঠানস্থলের ভিতরে ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ। এমনকি, তারকারা নিজস্বীও তুলতে পারেন না।
পেঁয়াজ-রসুন-পার্সলে বাদ
আমন্ত্রিতদের দাঁতের ফাঁকে আটকে যেতে পারে খাবারের টুকরো। অথবা খাবারের জন্য মুখে অস্বস্তিকর গন্ধও তৈরি হতে পারে। মেট গালার আয়োজকেরা এই সব বিষয় খেয়াল রাখেন। তাই মেনুতে আমন্ত্রিতেরা পেঁয়াজ-রসুন পাবেন না। কারণ তা থেকে শ্বাসের দুর্গন্ধ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাবেন না পার্সলে বা ধনেপাতা জাতীয় পাতাও, যা অলক্ষ্যে দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকতে পারে। থাকে না চলকে পড়তে পারে বা সস ছিটকে লাগতে পারে, এমন খাবারও। আমন্ত্রিতদের পোশাক নষ্ট হলে, আর সেই ভাবে তাঁদের ছবি উঠলে মেট গালার নিখুঁত ভাবমূর্তিতেও দাগ লাগবে, যা আয়োজকদের কাম্য নয়।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।
ধূমপানে কড়াকড়ি
মিউজ়িয়ামের ভিতরে ধূমপান নিষিদ্ধ। আমন্ত্রিতদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়। দুর্ঘটনাবশত আগুনের ফুলকি ছিটকে এলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে মিউজ়িয়ামের বহু প্রাচীন ফ্যাশন সংগ্রহ। সে ব্যাপারে কোনও ঝুঁকি নিতে চান না মেট গালা কর্তৃপক্ষ।
বিনামূল্যে প্রবেশ নিষেধ
আমন্ত্রিতেরাই একমাত্র ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পান। তবে তাঁরাও বিনামূল্যে ভিতরে ঢুকতে পারেন না। মেট গালার জন্য টিকিট কাটতে হয় তারকাদেরও। একটি সাধারণ আসনের দাম গত বছর ছিল ৭৫ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৩ লক্ষ টাকা)। আর টেবিলের আসন সাড়ে তিন লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা)। তবে সাধারণত তারকারা ওই খরচ করেন না। ওই অর্থ তাঁদের জন্য ব্যয় করে ফ্যাশন হাউসগুলি। অর্থাৎ, যাঁদের পোশাক পরে তারকারা হাজির হবেন মেট গালায়।
কিয়ারা আডবাণী।
পোশাকের অনুমোদন জরুরি
আমন্ত্রিতেরা কী পরে আসবেন, তা মেট গালার আয়োজক সংস্থাকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে তবেই ফ্যাশন সংস্থাগুলি তারকাদের ওই পোশাক পরাতে পারেন।
আসন বদলানো চলে না
তারকারা আসন কিনলেও আসন বাছতে পারেন না। কে, কোথায় বসবেন, তা ঠিক করে দেন মেট গালা কর্তৃপক্ষই। আমন্ত্রিতদের সামাজিক যোগাযোগের কথা মাথায় রেখে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আসন নির্ধারণ পর্ব চলে। দম্পতিরাও মেট গালায় একসঙ্গে বসতে পারেন না। কারণ, কর্তৃপক্ষ মনে করেন সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য দম্পতিদের আলাদা বসাই ভাল।
দিলজিৎ দোসাঞ্জ।
একটি কার্ডে এক জনই
মেট গালার নিয়ম নিয়ে বলতে শোনা গিয়েছে নিউ ইয়র্কে পৌঁছনো গায়ক এবং অভিনেতা দিলজিৎকে। একটি ভিডিয়োয় তিনি বলেছেন, ‘‘একটি কার্ডে এক জনই যেতে পারবেন! আরে এ তো আমাদের বিয়েবাড়ির মতো পার হেড পার প্লেটের হিসেব দেখছি!’’