১৪ বছর পর কলকাতায় পা রেখেছেন ফুটবলের রাজপুত্র। ডিসেম্বরের শহরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন ঘুরে দেখলেন লিয়োনেল মেসি। আর শীতের রোদে উজ্জ্বল হয়ে রইল তাঁর শরীরের প্রায় ১৮টি উল্কির নকশা। ফুটবলের পাশাপাশি মেসির অস্তিত্ব জুড়ে রয়েছে ট্যাটুর কালি। নিজের গোটা জীবনকে শরীরে ধরে রেখেছেন তিনি। বিশ্বাস, পরিবার, প্রেম, পেশা, নেশা— সবই চিত্রিত রয়েছে মেসির হাতে, পায়ে, পিঠে, পেটে।
পৃথিবী জোড়া একাধিক ফুটবলারের মতো মেসিরও ট্যাটুপ্রীতি রয়েছে। তবে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাত-পা উল্কিতে ভর্তি করেননি তিনি। প্রত্যেকটি আঁকায় রয়েছে বিশেষ অর্থ। তাঁর ফ্যাশন চেতনার অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে ট্যাটুর শৈলী।
মায়ের ছবি পিঠের উল্কিতে। ছবি: সংগৃহীত।
মেসি তাঁর প্রথম ট্যাটুটি করেন পিঠের বাঁ দিকে। যেখানে তিনি তাঁর মা সেলিয়া মারিয়া কুচিত্তিনির প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। ছেলের ফুটবলপ্রেমের শিরদাঁড়া হয়ে ছিলেন তিনি। আজও লিয়ো মেসি ফাউন্ডেশন চালিয়ে বঞ্চিত শিশুদের সাহায্য করেন।
বাঁ পায়ের ছোঁয়ায় তিনি মাতিয়ে রেখেছেন সারা বিশ্বকে। সেই বাঁ পাকে তিনি যত্নে সাজিয়েছেন। কালো রঙে ভরে ফেলেছেন পায়ের নীচের অংশ। কিন্তু বাঁ পায়ের নকশায় বড়সড় বদল এনেছেন মেসি। আগে পায়ের নীচের অংশ পুরো কালো রঙে ভরা ছিল না। সেখানে আগে জার্সির সংখ্যা ১০, পরির ডানা, গোলাপফুল, প্রথম সন্তান থিয়াগোর হাতের ছাপ ছিল। সেখান থেকে রয়ে গিয়েছে কেবল সন্তানের হাতের ছাপ এবং ১০ নং সংখ্যাটি।
আগে যা ছিল মেসির বাঁ পায়ে। ছবি: সংগৃহীত।
ডান পায়ের পাতার উপরে তিন সন্তানের নাম এবং জন্মতারিখ খোদাই করিয়েছেন মেসি। থিয়াগোর পর মাতেয়ো এবং চিরোকেও নিজের শরীরে জায়গা দিয়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা।
এখন যা রয়েছে মেসির বাঁ পায়ে। ছবি: সংগৃহীত।
মা, ফুটবল এবং সন্তানদের পাশাপাশি স্ত্রী আন্তোনেলা রোক্কুজ়্জ়োকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন উল্কির নকশায়। তাঁর জন্য মোট তিনটি ট্যাটু করিয়েছেন মেসি। ডান হাতের বাইসেপের ভিতরের অংশে তাঁর চোখের মণি, আন্তোনেলার মস্ত চোখ আঁকা। তলপেটের নীচে স্ত্রীকে চুম্বনের উল্কি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তিন নম্বর ট্যাটুটি স্ত্রীর গায়ে আঁকা ট্যাটুর সম্পূরক। আন্তোনেলার শরীরে আঁকা রয়েছে রানির মুকুট, মেসির শরীরে রাজার মুকুট। দু'জনে মিলেই এই উল্কিগুলি করিয়েছিলেন তাঁরা। আন্তো-মেসির প্রেমের গল্পই তৈরি হয়েছে এই দুই উল্কিতে।
মেসির পরিবার। ছবি: সংগৃহীত।
ডান হাতে স্ত্রীর চোখের নকশার পাশে যিশু খ্রিস্টের ছবিও আঁকিয়েছেন মেসি। কাঁটার মুকুটে যিশুর ছবি তাঁকে তাঁর ধর্ম ও বিশ্বাস সম্পর্কে মনে করায় বার বার। সেই হাতেরই নীচের দিকে নামতে থাকলে দেখা যাবে, তাতে নানা রঙের, নানা আকারের ফুলছাপ। সম্ভবত বার্সেলোনার সান্তা মারিয়া দেল পাই গির্জার গোলাপবাগানের ছবি আঁকা। আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যকে হাতের মধ্যে ধরার চেষ্টা করেছেন আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার। তাঁর ডান হাতের কনুইয়ে রয়েছে একটি বড় ঘড়ির যন্ত্রাংশের ট্যাটু।
কলকাতায় মেসি। নিজস্ব চিত্র।
মেসির ট্যাটু নিছক ‘সজ্জা’ নয়, তাঁর অস্তিত্বের প্রতিটি টুকরোকে গোটা দেহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন তিনি। নানা আবেগ, ব্যক্তিগত ঘটনাকে প্রতিটি মুহূর্তে আলিঙ্গন করতে চেয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।