বয়সের চাকা থামিয়ে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কে না চান! বয়স বাড়লে গাল-গলার ভাঁজে স্পষ্ট হয় বলিরেখা। টানটান ত্বক দীপ্তি হারাতে থাকে। এই পরিবর্তনের গতিকেই শ্লথ করে দেওয়ার জন্য কত না প্রচেষ্টা চলছে। ‘অ্যান্টি-এজিং থেরাপি’ নিয়ে বিশ্ব জুড়েই গবেষণা হচ্ছে। কী ভাবে ত্বককে যৌবনোজ্জ্বল করা যায়, সে নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। বেশ কিছু থেরাপিও রয়েছে যেগুলিতে ছুরি-কাঁচি চালানোর প্রয়োজন পড়ে না। বার্ধক্যের ছাপ মুছতে অনেক তারকাও এমন থেরাপি করান।
বোটক্স
অভিনয়, মডেলিংয়ের দুনিয়ায় টানটান তরুণ ত্বক ধরে রাখতে বোটক্সের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। এখন তারকাদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষও করাচ্ছেন। পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণের জন্য বলিরেখা পড়ে। বয়স যত বাড়ে মেলানিন রঞ্জকেও তারতম্য আসে। ত্বকের রং ফ্যাকাশে হতে থাকে, চামড়া কুঁচকে যেতে থাকে। এই বদলকে থামিয়ে দিতেই বোটক্স ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। চোখের কোণের ভাঁজে, গালের বলিরেখার অংশে এই ইঞ্জেকশন দিলে আর ভাঁজ পড়ে না। ত্বক টানটান, তরুণ লাগে। দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে প্রায় যন্ত্রণাহীন ভাবেই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। মুখের উপরের দিকে এক বার বোটক্স করতে খরচ মোটামুটি কুড়ি হাজারের মধ্যে।
প্লেটলেট-রিচ প্লাজ়মা থেরাপি
ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামত করতে প্লেটলেট-রিচ প্লাজ়মা থেরাপি (পিআরপি)-র প্রয়োগ করেন চর্মরোগ চিকিৎসকেরা। এতে রক্ত নিয়ে তা থেকে রক্তকোষ ও রক্তরস (প্লাজ়মা) আলাদা করা হয়। প্লাজ়মার মধ্যে যে পরতটা উপরে থাকে, তাতে অনেক রকম গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে। এই অংশটা অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটে পরিপূর্ণ। এই গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলিই ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। ত্বকে পিআরপি ইঞ্জেকশন দিলে ত্বক পুনর্জীবিত হয়, নতুন করে কোলাজেন তৈরি হয়। ত্বক টানটান হয় ও ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। মেচেতা থাকলে তা-ও কমে যায়। পিআরপি-র মাধ্যমে ত্বকের তারুণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন:
হাই-ইনটেনসিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড
ত্বকে প্রচুর বলিরেখা থাকলে বা মুখে ও গলার কাছে চামড়া কুঁচকে গেলে এই থেরাপি করা হয়। এতে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে তরঙ্গ পাঠিয়ে কুঞ্চিত ত্বককে টানটান করা হয়। এই থেরাপিতে ত্বকে নতুন করে কোলাজেন কোষ তৈরি হয়। ভাল ফল পেতে ২-৩ মাস অন্তর এই থেরাপি করাতে হয়। এক বার থেরাপির পরে ত্বকে যৌবনের দীপ্তি থাকে প্রায় এক বছরের মতো।
সিও২ লেজ়ার
লেজ়ার দিয়ে ত্বককে উন্নত, টানটান, পরিষ্কার করে বলিরেখা কমানো যায়। ব্রণ-ফুস্কুড়ি, মুখে দাগছোপ, ক্ষতের দাগ থেকে জন্মদাগ— যে কোনও জটিল থেকে জটিলতর সমস্যার সমাধান করতে পারে লেজ়ার। লেজ়ার দিয়ে মূলত ত্বকে সরাসরি তাপ দেওয়া হয়। লেজ়ারের রশ্মি ত্বকের উপরের স্তর ধ্বংস করে ফেলে। একই সঙ্গে এটি ত্বকের ভিতরের স্তরটিকে উত্তপ্ত করে তোলে। রোম তোলা ছাড়াও ত্বকের ক্ষত মেরামত করা, কোলাজেন তৈরির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করার কাজও করে লেজ়ার।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। ত্বকের ধরন বুঝে থেরাপি করা হয়। সকলের জন্য তা উপযোগী না-ও হতে পারে। ত্বক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম থেরাপিই করানো ঠিক হবে না।