পাকস্থলীর ক্যানসার বা গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারকে অনেকেই নিরীহ বদহজমের সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করে ফেলেন। ফলে সিংহভাগ সময়েই দেরিতে ধরা পড়ে এই ক্যানসার। পাকস্থলীর সঙ্গে যেহেতু খাবার এবং হজমের কার্যকলাপ জড়িত, তাই খাদ্যাভ্যাসই এই রোগের জন্য দায়ী। এমনই জানালেন ক্যানসার চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়। চিকিৎসকের থেকেই জেনে নেওয়া যাক পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণ এবং উপসর্গ।
কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করলেন ক্যানসার চিকিৎসক—
১. এই মারণরোগের ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে খাদ্যাভ্যাসেই। প্রথমত, যাঁরা অতিরিক্ত কবাব বা এমন ধরনের পোড়া খাবার খান, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি। এ ধরনের খাবার নাইট্রোসামাইন যৌগ থাকে, যা কার্সিনোজেনিক। তা ছাড়া অতিরিক্ত নুন যে ধরনের খাবারে থাকে, সেগুলিও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকারক। যেমন, আচারের মতো খাবারদাবার।
২. যাঁরা বহু দিন ধরে গ্যাস্টিকের সমস্যায় ভুগেও সারানোর চেষ্টা করছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাসিডের উৎপাদন বেশি হয়। আর বেশি অ্যাসিডে পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেখান থেকেও ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
৩. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ় নিরাময় না করলে দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাসিড তৈরি হতে হতে এক সময়ে পাকস্থলীতে প্রভাব ফেলতে পারে। সেখান থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ক্যানসারের সংযোগ। ছবি: সংগৃহীত।
৪. ধূমপান এবং মদ্যপান যে কোনও ক্যানসারের সঙ্গেই জড়িত। এ ক্ষেত্রেও এই দু’টি অভ্যাস পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
৫. স্থূলত্বে ভোগা ব্যক্তির রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা থাকে। সেখান থেকেও এই ক্যানসার হতে পারে।
৬. পাকস্থলীর ক্যানসারের ১ শতাংশ সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে জিনগত বা বংশগত কারণেও।
কিন্তু মূলত খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড থেকে এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।
পেটের ক্যানসারের উপসর্গ কী কী?
১. সামান্য খেয়েই পেট ভরে যাওয়া- অল্প খাবার খেলেই যদি মনে হয় আর কিছু খাওয়া যাবে না, বা খুব ভারী লাগছে, তা হলে সেটি হজমের সমস্যা নয়, বরং পেটের ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।
২. পেটে অস্বাভাবিক ফোলাভাব- হালকা খাবারের পরেও পেটে গ্যাস জমে রয়েছে, কোনও ভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন না, পেটে টনটনে ব্যথা হচ্ছে— এমন ক্ষেত্রে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
পাকস্থলীর ক্যানসারের ৫টি উপসর্গ। ছবি: সংগৃহীত।
৩. মলের রং বা গঠন বদলে যাওয়া- যদি দেখেন, মলের রং ধীরে ধীরে গাঢ় হতে শুরু করেছে বা তাতে রক্তের উপস্থিতি দেখা দিয়েছে, তা হলে উপেক্ষা করবেন না। তা শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণের লক্ষণ হতে পারে।
৪. খিদে কমে যাওয়া ও ওজন হ্রাস- খাবারের প্রতি আগ্রহ না থাকা, বিশেষ করে সকালের জলখাবারের প্রতি অনীহা দেখা দিলে এবং হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে সতর্ক হোন। দু’টি ঘটনা একসঙ্গে ঘটলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৫. বমিভাব বা বমি হওয়া- কোনও ভারী খাবার না খেলেও যদি ঘন ঘন গা গুলোতে থাকে, বা বমি হয়, তবে সেটিও একটি সঙ্কেত হতে পারে।
এই লক্ষণগুলির অনেক সময় সাধারণ গ্যাস বা হজমের সমস্যার মতো মনে হতে পারে। কিন্তু যদি বার বার এমন হয় বা তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।