সানস্ক্রিন কেনার সময়ে কী কী মাথায় রাখতে হবে? ছবি: সংগৃহীত।
গরমে যেন প্রাণ যায়-যায় অবস্থা। দারুণ অগ্নিবাণের মধ্যে বাইরে বেরোতে ইচ্ছে না করলেও উপায় নেই! কাজে তো বেরোতেই হবে। এই সময়ে শরীর চাঙ্গা রাখতে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ব্যাগে জলের বোতল, ছাতা, রুমাল, সানগ্লাসটি রাখতেই হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ শুনে সে নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালনও করছেন কেউ কেউ। কিন্তু শরীরের পাশাপাশি ত্বকের খেয়ালও তো রাখতে হবে। ব্যাগে সানস্ক্রিন রাখতে ভুলবেন না যেন!
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে মেকআপ করুন আর না-ই করুন, সানস্ক্রিন মাখতে হবে। চিকিৎসক শুভম সাহা বলেন, ‘‘সানস্ক্রিন ব্যবহার নিয়ে অনেকের মধ্যেই অবহেলা চোখে পড়ে, অথচ ত্বক ভাল রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভীষণ জরুরি। কেবল মেয়েরাই নয়, ছেলেদেরও মেনে চলতে হবে এই নিয়ম। সানস্ক্রিন কেবল ট্যান পড়ার হাত থেকে রেহাই দেয় এমনটা নয়, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি ইউভিএ এবং ইউভিবি-র ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করাই কিন্তু সানস্ক্রিনের মূল কাজ। সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে, এ ছাড়া ত্বকে অকালে বয়সের ছাপও পড়ে না।’’
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ মনে করেন, কেবল গরমকালে রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন মাখলেই হবে। কারও আবার মত, সারা দিনে এক বার এই প্রসাধনীটি ব্যবহার করলেই কাজ দেবে। নিয়মিত সানস্ক্রিন মাখার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন, পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক অভীক শীল।
১) অনেকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন কেবল গরমে রোদে বেরোনোর আগে। সানস্ক্রিন কেবল গরমের প্রসাধনী নয়। বাইরে তাই রোদ থাকুক কিংবা বৃষ্টি, অথবা কনকনে ঠান্ডা— সানস্ক্রিন সব সময়েই মাখতে হবে।
২) কেবল মুখে সানস্ক্রিন লাগালে চলবে না। গলা, কান, হাত ও পা, অর্থাৎ, শরীরের খোলা অংশে কিন্তু সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। তাই এই সব জায়গায় সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। রান্না করার সময়ে আগুনের তাপেও ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বক ভাল রাখতে বাড়িতেও সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন।
৩) কেবল বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিলেই চলবে না! রোদে বেরোলেই ঘামের জন্য সানস্ক্রিন কিছু ক্ষণের মধ্যেই উঠে যায়। সারা দিনে দু’ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বেরোলেই ব্যাগে সানস্ক্রিন রাখুন। এক বার সানস্ক্রিন লাগিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনোর দু’ঘণ্টা পর ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিয়ে আবার সানস্ক্রিন মাখতে হবে।
৪) সানস্ক্রিন মাখার সময়ে একটু বেশি পরিমাণেই ব্যবহার করুন। হাতে একটু সময় রেখে পুরোটা ত্বকের সঙ্গে মিশে যেতে দিন। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরোনোর আধ ঘণ্টা আগেই সানস্ক্রিন মেখে নিন। তা হলে তা ত্বকে ভাল ভাবে মিশে যাবে।
সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে এসপিএফের গুরুত্ব কী?
সানস্ক্রিনের বাক্সের গায়ে লেখা থাকে এসপিএফ শব্দটি। কোনও বাক্সের গায়ে লেখা থাকে এসপিএফ ৩০, তো কোনও বাক্সের গায়ে এসপিএফ ৫০। এই এসপিএফ-এর অর্থ কী? এসপিএফ মানে ‘সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর’। নির্দিষ্ট সানস্ক্রিনটি কত ক্ষণ আপনার ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করবে, তা-ই বোঝানো হয় এসপিএফ-এর মাধ্যমে। চর্মরোগের চিকিৎসক অভীক শীল বলেন, ‘‘এসপিএফ ৩০ ব্যবহার করবেন না কি ৫০, তা নিয়ে খুব বেশি ভাবার কারণ নেই। এসপিএফ ৫০ সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে ৯৪.৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়, অন্য দিকে এসপিএফ ৩০ সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে ৯২ শতাংশ সুরক্ষা দেয়। তাই দুটির মধ্যে খুব বেশি ফারাক নেই।আমাদের দেশের যা আবহাওয়া, তাতে এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকে কোনও রকম সমস্যা না থাকলে জেল বেস্ড সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভাল। তবে ত্বকে কোনও রকম সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।’’
বাজারে নানা ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। এক একটির কার্যকারিতা এক এক রকম। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিনের প্রকারভেদও অনেক। কেউ ক্রিম বেস্ড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, কারও আবার জেল বেস্ড সানস্ক্রিন ভাল লাগে। হাতিবাগানের এক প্রসাধন সামগ্রীর দোকানদার সুভাষ আইচ বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে সানস্ক্রিনের বিক্রি ভালই বেড়েছে। আগে কেবল তরুণীরা সানস্ক্রিন চাইতেন, এখন মাঝবয়সি মহিলা থেকে পুরুষ সকলেই সানস্ক্রিনের খোঁজ করেন। অনলাইনে অনেক সংস্থার সানস্ক্রিন পাওয়া যায়, আমাদের কাছে এসে অনেকেই সেই সব সংস্থার নাম করেন। অনেক নাম আমরা শুনিইনি। আমাদের দোকানে লোটাস, ল্যাকমে, সুগারের সানস্ক্রিনের বিক্রি বেশি।’’
কেবল দামি সানস্ক্রিন কিনলেই হল না, কেনার আগে কোন বিষয়ে নজর দিতেই হবে?
১) এসপিএফ-এর মাত্রা যেন ৩০ অথবা তার থেকে বেশি থাকে।
২) ফুল কভারেজ দেবে, ঘাম প্রতিরোধ করবে আর ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্ট হবে, এমন সানস্ক্রিন বাছাই করুন।
৩) অতিবেগনি রশ্মি মূলত তিন ধরনের হয় ইউভিএ, ইউভিবি ও ইউভিসি। আপনি যে সানস্ক্রিনটি কিনছেন, সেটি ইউভিএ আর ইউভিবি-এই দু’টির বিরুদ্ধেই সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, তা যাচাই করে কিনুন। সানস্ক্রিনের বাক্সের গায়ে ইউভিএ আর ইউভিবি-এর উল্লেখ আছে কিনা তা দেখে নিতে ভুলবেন না।
৪) সানস্ক্রিনের অতিবেগনি রশ্মির বিরুদ্ধে প্রোটেকশন গ্রেড অর্থাৎ, পিএ লেভেলের দিকে নজর দিতে হবে। পিএ লেভেলের মাধ্যমে সানস্ক্রিনটি ইউভিএ-র বিরুদ্ধে কত খানি সুরক্ষা দিতে পারবে, তা নির্ধারণ করা হয়। পিএ লেভেল ৩ হলে সেই সানস্ক্রিনটি বেশ ভাল।
সানস্ক্রিনের ক্ষেত্রে কোন কোন সংস্থার উপর ভরসা রাখতে পারেন?
নিউট্রোজেনা আল্ট্রা শির এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন (৮৮ এমএল-এর দাম ৭৮০ টাকা, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল)
সেটাফিল এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন (৫০ এমএল-এর দাম ১০৮০ টাকা, সব ধরনের ত্বকের জন্য ভাল)
বায়োডার্মা ফোটোডার্ম এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন (৪০ এমএল-এর দাম ৯৯৯ টাকা, সাধারণ ত্বক ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ভাল)
লোটাস হার্বাল ম্যাট জেল এসপিএফ ৫০ সান সানস্ক্রিন (৫০ গ্রামের দাম ১৯৯ টাকা, সব ধরনের ত্বকের জন্য ভাল)
ডট অ্যান্ড কি ভিটামিন সি প্লাস ই সুপার ব্রাইট এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন (১০০ গ্রামের দাম ৭৯২ টাকা, সব ধরনের ত্বকের জন্য ভাল)
সুগার কসমেটিক্স সাইট্রাস গট রিয়াল এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রনিন (৩০ গ্রামের দাম ৩৯৯ টাকা, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল)
ডক্টর শেঠ’স সেনটেল্লা নিয়াসিনামাইড এসপিএফ ৫০ সানস্ক্রিন (৫০ গ্রামের দাম ৬৯৯ টাকা, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল)
তবে কেবল সানস্ক্রিন মাখলেই হবে না, গরমে ত্বক রক্ষা করতে ছাতা, টুপি, স্কার্ফ, রোদচশমারও প্রয়োজন আছে। ব্যাগে সানস্ক্রিনের সঙ্গে সেইগুলিও রাখতে ভুলবেন না যেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy