Advertisement
E-Paper

উপাদান পৃথক করা হয় না, সঙ্কট রক্তে

ব্লাড ব্যাঙ্কের সংগৃহীত রক্তের অন্তত ৮০ শতাংশের উপাদান পৃথকীকরণের নির্দেশ রয়েছে জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা নাকোর। অথচ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো জরুরি জায়গার ব্লাড ব্যাঙ্কেই সেই পরিমাণ মাত্র ১৮ শতাংশ। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, উপযুক্ত প্রচার এবং চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীদের একাংশের সচেতনতার অভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০১:০৩

ব্লাড ব্যাঙ্কের সংগৃহীত রক্তের অন্তত ৮০ শতাংশের উপাদান পৃথকীকরণের নির্দেশ রয়েছে জাতীয় এড্‌স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা নাকোর। অথচ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো জরুরি জায়গার ব্লাড ব্যাঙ্কেই সেই পরিমাণ মাত্র ১৮ শতাংশ। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, উপযুক্ত প্রচার এবং চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীদের একাংশের সচেতনতার অভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের এই মূমুর্ষু দশা মিটিয়ে তা অন্তত ৪০ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে বলেও তাঁদের দাবি।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, বছর তিনেক আগে এই ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ গোটা রাজ্যে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের জন্য নাকো ১১টি ইউনিট খোলার অনুমোদন দেয়। তাদের দাবি ছিল, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রক্তের উপাদান আলাদা করা গেলে একটি মানুষের শরীর থেকে নেওয়া এক ইউনিট রক্তে অন্তত তিন জনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। ফলে প্রতি মূহুর্তে রক্তের হাহাকারও তৈরি হবে না।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও মানুষের শরীর থেকে নেওয়া এক ইউনিট রক্তে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি), শ্বেত রক্তকণিকা (ডব্লুবিসি), রক্তরস (প্লাজামা) এবং অনুচক্রিকার ( প্লেটলেট) মতো অনেক উপাদান পাওয়া যায়। বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় লাগে। যেমন, থ্যালাসেমিয়া, রক্তাল্পতা বা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় লোহিত কণিকা দরকার। আবার রক্ত জমাট বাধে না এমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আগুনে পোড়া, লিভারের রোগ, সর্পদষ্ট রোগী বা কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে রক্তরস বা প্লাজমা দেওয়া হয়। আবার ডেঙ্গি, থাম্বোসাইটোপিমা, কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপির জন্য অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, দুর্ঘটনা-সহ কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া একজন রোগীর কখনই পুরো রক্তের প্রয়োজন হয় না। রোগীকে পুরো রক্ত দেওয়ার অর্থ, রক্তের অপচয়। তার চেয়েও বড় কথা, পুরো রক্ত দিলে অনেক সময় রোগীদের নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলেও তাঁদের মত।

নাকোর নির্দেশিকা অনুযায়ী, একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক কেন্দ্রে যত ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হবে, তার অন্তত ৮০ শতাংশ উপাদান আলাদা করতে হবে। সেখানে বর্ধমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্রে পৃথকীকরণের হার মাত্র ১৮ শতাংশ। ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের শেষ তিন মাসরে হিসেব বলে, মার্চে সংগৃহীত রক্তের পরিমান ২১১০ ইউনিট, সেখানে রক্তের পৃথকীকরণ হয়েছে ৩৫২ ইউনিট (১৬.৬৮%), এপ্রিল মাসে সংগৃহীত রক্তের পরিমান ২২১৬ ইউনিট, সেখানে রক্তের পৃথকীকরণ হয়েছে ৬৫৯ ইউনিট (২৯.৭৪%) এবং মে মাসে সংগৃহীত রক্তের পরিমান ১৯৪৯ ইউনিট, সেখানে রক্তের পৃথকীকরণ হয়েছে ৪৪৫ ইউনিট (২২.৮৩%)। ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ ধীবরের দাবি, ‘‘রক্তের পৃথকীকরণের হার বাড়িয়ে দেখা গিয়েছে রক্ত পড়ে থাকছে। সে জন্য আমরা রক্তের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া বাড়াতে পারছি না।”

কিন্তু এ রকম পরিস্থিতির কারণ কী?

ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তাদের দাবি, এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অগুন্তি রোগী-সহ আশপাশের অন্তত ১৬৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম নির্ভরশীল। প্রতিদিন গড়ে ৮৫ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গরম পড়া মাত্রই শিবির কমে গিয়েছে, কিংবা শিবির হলেও রক্তদাতা মিলছে ২০ থেকে ২৫জন। ফলে রক্তের ভাঁড়ারে টান পড়ছে। এ অবস্থায় রক্তের উপাদানগুলিকে কাজে লাগালে রক্তের টানে অনেকটাই লাগাম টানা যেত বলে ওই কতার্দের দাবি। তাঁরা আরও জানান, হাসপাতালের রোগীদের ক্ষেত্রে তবুও রক্তের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রক্তের দাবিতে যে নথি আসছে, তাতে উপাদানের কথা লেখা থাকছে না। বাধ্য হয়ে পুরো রক্তটাই দিতে হচ্ছে।

দিন দুয়েক আগে এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্যোগে বিভিন্ন চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সচেতন করার জন্য একটি সভা করা হয়। সভায় আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধিকর্তা বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “রক্তের পৃথকীকরণ উপাদানের চাহিদা বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে চিকিৎসক সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।” সভায় ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব থেকে মাঝে মধ্যে রক্তের ব্যাগ সহ নানা সমস্যার কথা উঠে আসে। প্রশ্ন ওঠে, ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত রক্তের ৪০ শতাংশ রক্তের উপাদান আলাদা করার যে উদ্যোগ করা হচ্ছে, তাতে সমস্যা দেখা দেবে না তো? সুদীপবাবু বলেন, “আমাদের যা পরিকাঠামো রয়েছে তার মধ্যেই আমাদের এই উদ্যোগকে সফল করতেই হবে।”

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাকোর নির্দেশ অমান্য করলে ব্লাড ব্যাঙ্ক পুনর্নবীকরণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে।

bardhaman medical college blood bank burdwan medical college blood bank blood components nacco soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy