Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের মুখে হচ্ছে না শিবির, রক্তসঙ্কট রায়গঞ্জে

হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের ভাঁড়ার শূন্য। তাই সঙ্কটাপন্ন রোগীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে তাঁদের আত্মীয় পরিজনরা। তাঁদের অভিযোগ, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রক্তের কারবারি একটি দালাল চক্র। তাই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৮
Share: Save:

হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের ভাঁড়ার শূন্য। তাই সঙ্কটাপন্ন রোগীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে তাঁদের আত্মীয় পরিজনরা। তাঁদের অভিযোগ, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রক্তের কারবারি একটি দালাল চক্র। তাই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।

নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত দু’ সপ্তাহ ধরে কোনও রাজনৈতিক দল রায়গঞ্জ মহকুমায় কোনও রক্তদান শিবির করেনি। এরই জেরে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, গত ৩১ মার্চ থেকে ব্লাডব্যাঙ্কে কোনও গ্রুপেরই রক্ত মজুত নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের রক্তের প্রয়োজন হলে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে রক্তদাতা জোগাড় করে আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্তদাতা জোগাড় করতে না পেরে চরম সমস্যায় পড়ছেন।

মঙ্গলবার হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে বি পজিটিভ রক্তের খোঁজে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী আবুল আলি শেখ। তিনি বলেন,‘‘ গত তিনদিন ধরে আমার স্ত্রী হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি। স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য এক ইউনিট ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দরকার। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না মেলায় দুশ্চিন্তায় আছি।’’ ইটাহারের মারনাই এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী গোকুল সরকার জানান, তাঁর স্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করার পর এক ইউনিট ‘ও’ পজিটিভ রক্ত দেওয়ার কথা জন্য বলেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক। গোকুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘এদিন দুপুরে ব্লাডব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত পাইনি। সেইসময় এক যুবক আমাকে হাসপাতালের বাইরে ডেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এক ইউনিট রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমার সামর্থ্য না থাকায় তাঁর কাছ থেকে রক্ত নিতে পারিনি।’’

ব্লাডব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা মেডিক্যাল অফিসার প্রদীপ মন্ডল বলেন, ‘‘নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কার গত দু’সপ্তাহ ধরে কোনও রাজনৈতিক দল রক্তদান শিবিরের আয়োজন না করায় ব্লাডব্যাঙ্কে ৩১ মার্চ থেকে এক ইউনিট রক্তও মজুত নেই। ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন যে সমস্ত রোগীর রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে, তাঁদের পরিবারের লোকজনকে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্তদাতা জোগাড় করে আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা রক্তদাতা আনছেন, একমাত্র তাঁরাই রক্ত পাচ্ছেন। ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে রক্তদাতাদের রক্ত সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট রোগীর পরিবারের লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সুপার অনুপ হাজরা বলেন, ‘‘ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কটকে কেন্দ্র করে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

ব্লাডব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, রক্তের জোগান স্বাভাবিক থাকাকালীন এ, বি, ও এবং এবি পজিটিভ ও নেগেটিভ গ্রুপ মিলিয়ে প্রতিদিন ব্লাডব্যাঙ্কে ৫০ ইউনিট রক্ত মজুত থাকে। প্রতিদিন ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গড়ে ৩৫ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে রায়গঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় যেখানে গড়ে ৫টি করে রক্তদান শিবির হয়, সেখানে গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনও রক্তদান শিবির হয়নি।

বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কায় আমরা আপাতত রক্তদান শিবির বন্ধ রেখেছি। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, ‘‘দলের তরফে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে খুব শীঘ্রই দলের তরফে কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর বাদে অন্য জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল জানান, জেলায় নির্বাচন আচরণবিধি লাগু থাকায় গত প্রায় একমাস ধরে দলের তরফে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘দলের তরফে খুব শীঘ্রই জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে রক্তদান শিবির করার অনুমতি চাওয়া হবে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মত্স্য বিষয়ক পরিষদীয় সচিব অমল আচার্যের দাবি, কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর বাদে জেলার অন্যত্র কোনও রাজনৈতিক দল রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হওয়ার কথা নয়। দলের তরফে কেনও গত দু’ সপ্তাহ রক্তদান শিবির হয়নি, তা খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

আগামী ২৫ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভার নির্বাচন। নির্বাচনের মুখে কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর বাদে কোনও এলাকায় কোনও রাজনৈতিক দল রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হবে কি না, সেই বিষয়ে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক রণধীর কুমার স্পষ্ট করে কিছু জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর বাদে জেলার কোনও এলাকায় কোনও রাজনৈতিক দল আমার কাছে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠালে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ তিনি জানান, ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট মেটাতে আজ, বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে রক্তদান শিবির আয়োজন করার অনুরোধ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE